কোভিড কেড়েছে পরিজনকে। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আত্মীয়েরা। শুক্রবার পটনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। পিটিআই
কোভিডে স্বজন হারানো এবং অতিমারি-আতঙ্কে বিপর্যস্ত দেশবাসীর তিনি ‘সমব্যথী’। দেশবাসীর প্রধান সেবকও। কিন্তু জোরালো গলায় এই জোড়া দাবি করেও আমজনতার ব্যথা উপশমের উপায় বললেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বরং করোনা-সঙ্কটমুক্তির দায় কার্যত চাপিয়ে দিলেন সমস্ত রাজ্য সরকার, গ্রাম পঞ্চায়েত এমনকি দেশের সাধারণ মানুষের উপরে!
দেশের নানা প্রান্তে জ্বলছে অনির্বাণ চিতা। কবরে নতুন দেহ সমাহিত করার জায়গা বাড়ন্ত। জ্বালানির অভাবেই হোক বা মৃতের সংখ্যা কম দেখানোর জন্য— নদীতে ভেসে যাচ্ছে লাশের সারি। সারা দেশে এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে আকাল ওষুধ-অক্সিজেন, এমনকি দেশে তৈরি টিকারও। যা নিয়ে বিদেশের সংবাদমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার ধাক্কায় গুঁড়িয়ে গিয়েছে সযত্নলালিত ‘প্রধান সেবক’ ভাবমূর্তি। তার পরেও পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফল বেরনো ইস্তক মোদী এত দিন কার্যত অন্তরালেই ছিলেন। শুক্রবার কিসান-নিধির ভিডিয়ো-অনুষ্ঠানে জানালেন, দেশবাসীর স্বজন হারানোর দুঃখে তিনি ‘সমব্যথী’। বললেন, ‘‘দেশবাসী যতটা কষ্ট সহ্য করছেন এবং সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, আমিও ততটাই অনুভব করছি।... দেশের প্রধান সেবক হিসেবে আমি আপনাদের অনুভূতির সহমর্মী।’’ কিন্তু এই দুঃখমোচনের ভার কার্যত চাপিয়ে দিলেন দেশবাসীর ঘাড়ে।
কখনও ওষুধের কালোবাজারি রুখতে রাজ্যকে কড়া পদক্ষেপ করতে বললেন, কখনও আবার গ্রামে সংক্রমণে রাশ টানতে সক্রিয় হতে বললেন পঞ্চায়েতগুলিকে। সাধারণ মানুষের উদ্দেশে আহ্বান জানালেন হতাশ না-হওয়ার জন্য। কিন্তু শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনার পরে ক্ষুব্ধ বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, তা হলে প্রধানমন্ত্রী পদে মোদী আছেন কী জন্য? করদাতাদের ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে তৈরি সেন্ট্রাল ভিস্টা তৈরি আর বিলাসবহুল মোদী মহলের উদ্বোধনই কি তাঁর একমাত্র কাজ?
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যখন দিল্লি-সহ উত্তর ভারতে সবে আছড়ে পড়ছে, জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় মোদী বলেছিলেন, ‘সবাই সচেতন হলে লকডাউনের প্রয়োজন হবে না।’ করোনা রুখতে ‘ছোটদেরও একজোট হয়ে সবাইকে বোঝাতে হবে’ — এমন ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন তিনি৷ বিরোধীদের অভিযোগ, এ দিনও কোভিড মোকাবিলার যাবতীয় দায় চাপালেন দেশবাসীর ঘাড়ে! অনেকের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী যে প্রথম সুযোগেই টিকা নেওয়ার কথা এ দিন বললেন, তা সাধারণ মানুষ পাবেন কোথায়? সারা দেশেই তো টিকার দেখা নেই।
এ দিন মোদীর বক্তৃতার পরে কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ, ওযুধ, অক্সিজেন, হাসপাতালে শয্যার অভাবে খাস রাজধানী দিল্লি কার্যত শ্মশানে পরিণত হয়ে গেল। এত দিন কোথায় ছিলেন মোদী এবং তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ? কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা আজ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “খোদ রাজধানীর পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে। মোদী সাত বছর ধরে দিল্লি থেকে দেশ শাসন করছেন। অরবিন্দ কেজরীবালও দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লিতে যখন দাহকার্যের জন্য শ্মশান পাওয়া যাচ্ছিল না, প্রকাশ্য দিবালোকে ওষুধ এবং অক্সিজেনের কালোবাজারি চলছিল বা এখনও চলছে, তখন তো এঁদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!”
আজ প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় কোভিডকে ‘অদৃশ্য শক্তি’ এবং ‘বহুরূপী’ বলে উল্লেখ করেছেন৷ তারই সূত্র ধরে কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা জয়রাম রমেশ আজ টুইট করে বলেছেন, “শত্রু হয়তো অদৃশ্য৷ কিন্তু প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার প্রশাসনের ব্যর্থতা দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট।”
আজ প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একশো বছর পরে আবার এই ভয়ানক অতিমারি পৃথিবীর প্রতি পদে পরীক্ষা নিচ্ছে। শত্রু অদৃশ্য এবং বহুরূপীও। এই শত্রুর কারণে আমরা অনেক নিকটজনকে হারিয়েছি। নিজেকে দেশের প্রধান সেবক হিসেবে তুলে ধরে বলেছেন, ‘‘আমি আপনাদের সমস্ত অনুভূতির সহমর্মী।” কিন্তু একে ভাবমূর্তি মেরামতের মরিয়া চেষ্টা হিসেবে দেখছে বিরোধী শিবির।
অনেকের মতে, মৃত্যুর নিরবচ্ছিন্ন মিছিলের এই সময়েও এ দিন মোদী তাঁর চেনা ভঙ্গিতে ‘ভোকাল টনিক’ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, “ভারত হিম্মৎ হারানোর দেশ নয়। আমরা হারবো না। আমরা লড়ব এবং জিতব।” যদিও তা কী ভাবে, তার পথ দেখাতে পারেননি। উল্টে গ্রামের কৃষক এবং অন্যান্য মানুষদের ঘাড়ে সংক্রমণ ঠেকানোর দায় চাপিয়ে বলেছেন, ‘‘অত্যন্ত দ্রুত গ্রামে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। গ্রামে যে চালু পঞ্চায়েত ব্যবস্থা রয়েছে, তার শরণাপন্ন হতে হবে।’’ তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রত্যেক গ্রামবাসী নিজে ব্যক্তিগত ভাবে এবং পরিবারগত ও সামাজিক ভাবে করোনা ঠেকাতে যা যা করার, তা অবশ্যই পালন করুক।’ বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের মতে, দ্বিতীয় ঢেউয়ের এই মারাত্মক প্রভাবে প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং তাঁর সরকার কী করছে, তার কোনও খতিয়ান যেমন তিনি গত মাসের বক্তৃতায় দেননি, তেমনই আজকেও দিলেন না। বরং এড়িয়ে গেলেন। এবং এতেই স্পষ্ট হল তাঁর সরকারের সামগ্রিক ব্যর্থতা। প্রশ্ন, উঠেছে, ‘দো গজ কি দুরি’ এবং নাক মুখ ঠিক মতো ঢেকে মাস্ক পরার পরামর্শ ছাড়া আর কোনও বার্তা এ দিন মোদীর কথায় কই? প্রতিষেধকই বাঁচার পথ এ কথা মুখে বললেও সেই প্রতিষেধকের জোগান কী ভাবে নিশ্চিত হবে, তা নিয়ে উচ্চবাচ্যও করেননি মোদী। বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘‘সরকার হাত গুটিয়েছে। এ বার আত্মনির্ভর হয়েই সকলকে করোনা যুঝে সকলকে বাঁচতে বলছেন মোদী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy