প্রতীকী ছবি।
প্রযুক্তিগত সমস্যায় ধাক্কা খেয়েছে স্পুটনিক ভি প্রতিষেধকের উৎপাদন। তার ফলে অগস্ট মাসে সারা দেশে প্রতিষেধক উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া মুশকিল হবে বলেই মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। এই বিপত্তির প্রভাব পড়তে চলেছে সার্বিক টিকাকরণ অভিযানেই। ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সব প্রাপ্তবয়স্কের টিকাকরণের যে লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্র নিয়েছিল, স্পুটনিকের অভাবে তা-ও পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। যদিও আজ কেন্দ্র দাবি করেছে, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত যে পরিমাণ টিকা রাজ্যগুলিকে পাঠানোর কথা ছিল, সেই সংখ্যা প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে তারা।
ডিসেম্বরের মধ্যে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ককে করোনার টিকা দিতে হলে রাজ্যগুলির জন্য নিরবচ্ছিন্ন ভাবে প্রতিষেধক জোগাতে হবে কেন্দ্রকে। গোড়া থেকেই কম টিকা দেওয়ার অভিযোগে সরব পশ্চিমবঙ্গ-সহ বহু রাজ্য। তারই মধ্যে চিন্তা বাড়িয়েছে স্পুটনিক-বিভ্রাট। এই মুহূর্তে কেন্দ্রের হাতে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন ছাড়া একমাত্র প্রতিষেধক বলতে রয়েছে রাশিয়ান স্পুটনিক ভি। কিন্তু মাসখানেক ধরে স্পুটনিকের উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত সংখ্যায় হচ্ছে না বলে জেনেছে কেন্দ্র। অন্যান্য প্রতিষেধকে সাধারণত দুটি ডোজ়ে একই উপাদান থাকে। সেখানে স্পুটনিকের দু’টি ডোজ়ে দু’ধরনের অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টর ব্যবহার হয়। প্রথম ডোজ়টি (আরএডি২৬ ভেক্টর) মূল প্রতিষেধক। দ্বিতীয় ডোজ় (আরএডি৫ ভেক্টর) প্রথমটির বুস্টার ডোজ় হিসেবে কাজ করে, যা প্রথম ডোজ়ের ২১ দিনের মাথায় দেওয়া হয়ে থাকে। সূত্রের বক্তব্য, দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য প্রয়োজনীয় আরএডি৫ কৃত্রিম ভাবে গবেষণাগারে তৈরি করা হয়। তার পদ্ধতিটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ।
আরএডি৫ উৎপাদন মসৃণ করতে প্রায় এক মাস ধরে রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা ভারতে রয়েছেন। কিন্তু বিশেষ সফল হননি। আরএডি৫-এর কম উৎপাদন সার্বিক ভাবে স্পুটনিক উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
রাশিয়ায় স্পুটনিক ভি প্রতিষেধকের গবেষণায় মূল বিনিয়োগকারী সংস্থা হল রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (আরডিআইএফ)। তারা অবশ্য সরাসরি ওই দেরির কথা স্বীকার করতে চায়নি। সংস্থার পক্ষে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতে তাদের একাধিক সহযোগী সংস্থা ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে পেরেছে। তার কার্যকারিতা বর্তমানে খতিয়ে দেখছে রাশিয়ার গামালিয়া ইনস্টিটিউট। ভারতের সংস্থাগুলিকে প্রযুক্তি হস্তান্তরের কাজও সমান তালে জারি রয়েছে। ভারতে উৎপাদনের পাশাপাশি বিদেশের অন্যান্য গবেষণাগারে তৈরি হওয়া স্পুটনিক ভি এবং স্পুটনিক লাইট প্রতিষেধক অগস্টে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ভারতে পুরোদমে স্পুটনিক উৎপাদনের কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে আরডিআইএফ।
রাশিয়ান ওই সংস্থা দাবি করলেও, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্র জানিয়েছে, অগস্ট-ডিসেম্বরের মধ্যে স্পুটনিকের প্রায় ১৫.৬ কোটি ডোজ় পাওয়া যাবে ধরা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই লক্ষ্যমাত্রা ১০ কোটি ডোজ়ে নামিয়ে আনা হয়েছে। পাঁচ কোটি ডোজ় কম উৎপাদন হওয়ার প্রভাব রাজ্যগুলিকে টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রেও পড়বে বলে ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করে নিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। এই ঘাটতির ফলে এ বছরের মধ্যে দেশের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কের টিকাকরণ আদৌ করা যাবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকেও।
ডিসেম্বরের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও আজ কেন্দ্র দাবি করেছে, প্রথম সাত মাসে রাজ্যগুলিকে টিকা পাঠানোর যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল, তা অনেকাংশেই ছোঁয়া সম্ভব হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়া হিসেবে সরকার জুলাই মাসের মধ্যে রাজ্যগুলিকে ৫১.৬ কোটি ডোজ় প্রতিষেধক দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল। আজ জুলাই মাসের শেষ দিন পর্যন্ত রাজ্যগুলিকে ৪৮.৭৮ কোটি টিকা পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া। এ ছাড়া অতিরিক্ত আরও ৬৮.৫৭ লক্ষ টিকা রাজ্যগুলিকে বণ্টনের সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। ওই টিকা রাজ্যগুলিতে পাঠানোর প্রক্রিয়া জারি রয়েছে। আজ পর্যন্ত সারা দেশে মোট প্রায় ৪৬ কোটি টিকা দেওয়া হয়েছে। রাজ্যগুলি টিকার অভাব নিয়ে সরব হলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দাবি, এই মুহূর্তে প্রায় ৩.১৪ কোটি টিকা রাজ্য সরকার ও বেসরকারি হাসপাতালগুলির হাতে রয়েছে। মাণ্ডবিয়ার কথায়, রাজ্যগুলি টিকার অভাবের যে দাবি তুলেছে, সেটি যে ঠিক নয় তা ওই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy