Advertisement
E-Paper

জ্বলছে সারি সারি লাশ, গ্যাস দুর্ঘটনার স্মৃতি ফিরছে ভোপালে, উঠছে তথ্য লুকনোর অভিযোগও

শ্মশানে দাহ হওয়া দেহের সঙ্গে মিলছে না সরকারি পরিসংখ্যান। তাতেই অভিযোগে বিদ্ধ শিবরাজ সিংহ চৌহান সরকার।

কোভিড বিধি মেনে দেহ সৎকার চলছে।

কোভিড বিধি মেনে দেহ সৎকার চলছে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২১ ১৩:২৭
Share
Save

দেহ হাতে পেতে কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি। তার পর শ্মশানেও লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় চার ঘণ্টা। একটানা ধকলে এমনিতেই শরীর দিচ্ছে না। তার উপর পিঠোপিঠি ভাইয়ের দেহ নিয়েই ঘন্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা। চোখের জল বাঁধ মানছে না। ঢোক গিলে জানালেন, তখন নবম শ্রেণিতে ছিলেন। সেই প্রথম সারি সারি মৃতদেহ দেখা। কোভিডে মৃত ভাইয়ের দেহ নিয়ে শ্মশানে এসে গ্যাস দুর্ঘটনার পরবর্তী সেই দৃশ্যই মনে পড়ে যাচ্ছে ৫৪ বছরের বিএন পান্ডের। মঙ্গলবার ভদভদা শ্মশানের বাইরে তখন থিকথিকে ভিড়। তিনি বলে উঠলেন, ‘‘চার ঘণ্টা হল এসেছি। তার মধ্যেই ৩০-৪০টা দেহ যেতে দেখলাম।’’

গত বছর এই সময় পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না। কিন্তু নোভেল করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তেই লাশের স্তূপ জমা হচ্ছে ভোপাল-সহ মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায়। অথচ রাজ্য সরকারের পরিসংখ্যান দেখে তা বোঝার উপায় নেই। সরকারি পরিসংখ্যানের সঙ্গে কোভিড বিধিনিষেধ মেনে শ্মশানে দাহ হওয়া দেহের সংখ্যায় তফাতও প্রায় আকাশ পাতাল। তাতেই অভিযোগ উঠছে শিবরাজ সিংহ চৌহানের সরকার মৃতের সংখ্যা গোপন করছে। ১৯৮৪ সালে ঘটে যাওয়া গ্যাস দুর্ঘটনার সঙ্গে আজকের পরিস্থিতির ভয়ঙ্কর মিল রয়েছে বলে দাবি করছেন তাঁরা।

মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা যখন ভদভদা শ্মশানের বাইরে পৌঁছয়, তখন মৃতদেহ নিয়ে বহু অ্যাম্বুল্যান্স সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে সেখানে। মুখে শোকের ছায়া নিয়েই রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মৃতদের আত্মীয়-স্বজনরা। একটার আগুন নিভলে কী ভাবে তাড়াতাড়ি চিতা সাজিয়ে নেওয়া যায়, নিচু স্বরে আলোচনা চলছে। তাঁদের মধ্যে থেকেই বেরিয়ে এলেন সন্তোষ রঘুবংশী। জামাইবাবুর দেহ সৎকার করতে ৩-৪ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলেন সন্তোষ। তিনি বলেন, ‘‘জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি। সৎকার করতে পারছি না।’’

কিন্তু ভদভদা শ্মশানের এই দৃশ্যের সঙ্গে সরকারি পরিসংখ্যানের কোনও মিল নেই। মঙ্গলবার রাতে রাজ্য সরকার যে কোভিড পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তাতে ২৪ ঘণ্টায় গোটা রাজ্যে ৪০ জনের মৃত্যু দেখানো হয়েছে। সোমবারও ঠিক একই অসামঞ্জস্য ধরা পড়ে। শুধুমাত্র ভদভদা শ্মশানের রেকর্ড অনুযায়ী, ওই দিন কোভিড বিধি মেনে সবমিলিয়ে ৩৭টি দেহ দাহ করা হয়েছিল সেখানে। কিন্তু দিনের শেষে সরকারি পরিসংখ্যান সামনে এলে দেখা যায়, রাজ্যের সর্বত্র মিলিয়ে ৩৭ জন মারা গিয়েছে।

গত ৫ দিনের হিসেবেও বড় রকমের গরমিল দেখা গিয়েছে। ৮ এপ্রিল শুধুমাত্র ভোপালেই কোভিড বিধি মেনে ৪১টি দেহের সৎকার হয়। কিন্তু ওই দিন ২৪ ঘণ্টার সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হয়, গোটা রাজ্যে ২৭ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ৯ এপ্রিল ৩৫টি দেহের সৎকার হয় ভোপালে। সরকারি পরিসংখ্যানে ওই দিন রাজ্যে ২৩ জন কোভিড রোগীর মৃত্যুর কথা জানানো হয়। ১০ এপ্রিল ভোপালে কোভিড বিধি মেনে ৫৬টি দেহ দাহ করা হয়। সে দিন রাজ্যে কোভিডে প্রাণহানির হিসেব দিতে গিয়ে রাজ্য সরকার ২৪ জন কোভিডে মৃতের কথা উল্লেখ করে।

১১ এপ্রিল যেখানে ভোপালে ৬৮টি দেহ দাহ করা হয়, সরকার গোটা রাজ্যের হিসেব দিতে গিয়ে দেখায়, সব মিলিয়ে ওই দিন ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১২ এপ্রিল ভোপালে ৫৯টি দেহ কোভিড বিধি মেনে দাহ করা হলেও, রাজ্যের হিসেবে সবমিলিয়ে ৩৭ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে দেখানো হয়। সেই নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়লেও, সরকার তথ্য গোপনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। যদিও শ্মশানের কর্মীদের দাবি, সারি সারি দেহ সৎকার করতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে তাঁদের।

রইস খান নামের ভোপালের ভদভদা শ্মশানের এক কর্মী জানান, প্রত্যেক দিন ১০০-১৫০ কুইন্টাল কাঠ কেটেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না তাঁরা। প্রতি দিন কমপক্ষে ৪০-৪৫টি দেহ আসায় গত সপ্তাহে কাঠেই ঘাটতি দেখা দেয়। কাঠ কেটে হাতে ফোস্কা পড়ে গিয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রদীপ কানোজিয়া নামের আর এক শ্মশানকর্মী বলেন, ‘‘শারীরিক এবং মানসিক ভাবে দুর্বল বোধ করছি। ক্লান্তি আসছে। এত দেহ আসছে যে ভিড় জমে যাচ্ছে। খাওয়ার সময় পর্যন্ত পাচ্ছি না।’’

মধ্যপ্রদেশ সরকার অভিযোগ অস্বীকার করলেও, মঙ্গলবার ফের সংক্রমণ রেকর্ড গড়েছে সেখানে। নতুন করে ৮ হাজার ৯৯৮ জন সংক্রমিত হয়েছেন। সরকারি হিসেব অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ৪ হাজার ২৬১ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে রাজ্যে।

Madhya Pradesh Bhopal Shivraj Singh Chouhan COVID-19 Coronavirus in India Pandemic COVID Deaths

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।