Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in India

সময়ে অক্সিজেন বাড়িয়ে ঢেউ সামলাচ্ছে কেরল

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় দেশ জুড়ে হাহাকারের মধ্যেও কী ভাবে একটু হলেও ব্যতিক্রমের ছবি দেখাতে পারছে কেরল?

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২১ ০৫:৪৪
Share: Save:

বাংলার মতো আট দফায় লম্বা ভোট-পর্ব সেখানে ছিল না। ভোট মিটে গিয়েছে এক দফাতেই। তার পরেও করোনার সংক্রমণ বেড়েছে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে গোটা রাজ্য আপাতত লকডাউনে। কিন্তু প্রায় গোটা দেশ যখন অক্সিজেনের অভাবে খাবি খাচ্ছে, দক্ষিণের কেরল ধরে রাখতে পারছে স্ব্স্তির শ্বাসটুকু!

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় দেশ জুড়ে হাহাকারের মধ্যেও কী ভাবে একটু হলেও ব্যতিক্রমের ছবি দেখাতে পারছে কেরল? এক কথায় তার উত্তর হল— প্রথম ঢেউয়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মাঝের সময়ে সে রাজ্যের সরকার এমন কিছু পরিকাঠামোগত ব্যবস্থা নিয়েছে, স্বল্প হলেও তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায়। যার মধ্যে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য হল, এক বছরের মধ্যে রাজ্যে তরল অক্সিজেনের উৎপাদন বাড়িয়ে নেওয়া। নিজের রাজ্যে অক্সিজেনের চাহিদা সামাল দিয়ে তামিলনাড়ু, কর্নাটককে অক্সিজেন দিতে পারছে পিনারাই বিজয়নের রাজ্য।

কেরলের সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি দু’রকম পরিকল্পনা প্রয়োগ করে কোভিড মোকাবিলায় এগিয়েছে রাজ্য। এখন যেমন সর্বশেষ রূপরেখা অনুযায়ী, সব সরকারি হাসপাতালে কোভিড ক্লিনিক রাখা হয়েছে, খোলা হয়েছে কোভিড ওপিডি। পরীক্ষা, প্রাথমিক ওষুধ সব সেখান থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। কেরলে ২০১৮ সালে নিপা ভাইরাস হানা দেওয়ার পরে ফিভার ক্লিনিক চালু হয়েছিল, সেগুলোই মূলত বদলে নেওয়া হয়েছে কোভিড ক্লিনিকে। জেলায় জেলায় তালুক (ব্লক) হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেনের সুবিধা-সহ বেড রাখতে বলা হয়েছে, তার মধ্যে অন্তত পাঁচটি বেড থাকবে বাইপ্যাপ ভেন্টিলেশন-সহ। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকছে কোভিড চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় স্টেরয়েড ও অন্যান্য ওষুধের ব্যবস্থা। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজার বক্তব্য, ‘‘সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আপাতত জোর দেওয়া হচ্ছে কোভিড নিয়ন্ত্রণের দিকেই। বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে আমাদের অনুরোধ, তারা যেন ৫০% পরিকাঠামো কোভিডের জন্য ছেড়ে রাখে।’’

এই আপৎকালীন পদক্ষেপের আগে আছে আরও কিছু পরিকল্পনা। তার মধ্যেই প্রধান হল অক্সিজেন উৎপাদন। গত বছর লকডাউনের সময়ে পেট্রলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ সেফটি অরগানাইজ়়েশন (পেসো)-র তরফে বৈঠক ডেকে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে দৈনিক অক্সিজেন উৎপাদনের হিসেব চাওয়া হয়। সব হাসপাতালকে বলা হয়, অক্সিজেনে ‘লিকেজ’-এর দিকে নজর রাখতে। বেসরকারি উৎপাদকদের বলা হয়, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের পাশাপাশি অন্তত ১০& মেডিক্যাল অক্সিজেন তৈরি করতে হবে। সেই অনুযায়ীই, কেরালা মিনারেলস অ্যান্ড মেটাল্‌স লিমিটেড (কেএমএমএল) গত অক্টোবর থেকে নতুন প্ল্যান্ট চালু করে দৈনিক ৭ টন করে তরল অক্সিজেন দিচ্ছে। অন্য সব সরকারি ও বেসরকারি উৎপাদক ধরে কেরলে রোজ এখন তৈরি হচ্ছে গড়ে ২০৪ টন অক্সিজেন। আর রাজ্যে চাহিদা গড়ে মোটামুটি ৭৯ টন অক্সিজেনের।

কেরলের ভারপ্রাপ্ত পেসো-র আধিকারিক আর বেণুগোপাল জানাচ্ছেন, করোনার সংক্রমণ আরও বাড়লে অক্সিজেনের চাহিদাও বাড়বে বলে তাঁরা ধরে রেখেছেন। নতুন প্ল্যান্টগুলি পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন এখনও শুরু করেনি, সে ক্ষেত্রে তাদের গতি বাড়াতে বলা হচ্ছে। আবার কোট্টায়ম, ত্রিশূর ও এর্নাকুলাম মেডিক্যাল কলেজে যে নতুন ‘প্রেসার স্যুইং অ্যাবসর্বশন সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে, তার দৌলতেও পরিস্থিতি সামাল দিতে সুবিধা হবে বলে তাঁরা আশাবাদী।

কেরলের বাড়তি সুবিধা, সচেতনতা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার এমনিই তারা এগিয়ে। তারই সুবাদে কেরল যত করোনা টিকার ডোজ় পাচ্ছে, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা ভায়াল থেকে সামান্য ফোঁটাও শুষে নিয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষকে ইনজেকশন দিচ্ছেন। অতিমারির আতঙ্ক মোকাবিলায় শুরু হয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াও। তেল দেওয়া যন্ত্রের মতো চলছে গোটা ‘সিস্টেম’!

কাকতালীয় নয় যে, সাড়ে চার দশকের রেওয়াজ ভেঙে বাম সরকার পরপর দু’বার ক্ষমতায় ফিরেছে!

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in India COVID 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy