ছবি: পিটিআই।
করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে দেশ জুড়ে ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক প্রতিষ্ঠানে, জন-জমায়েতের জায়গায়। শুনশান হয়ে যাচ্ছে জনজীবন। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী তখন তাঁর রাজ্যের মানুষের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন, সামাজিক জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে মানসিক চাপে ভুগবেন না। সতর্ক থাকুন কিন্তু স্বাভাবিক থাকুন! রাজ্য জুড়ে বার, রেস্তোরাঁ বন্ধের আর্জিও খারিজ করে দিয়েছে কেরলের সরকার।
গত দেড় মাসের লড়াই থেকেই এই বিপরীত সিদ্ধান্তে যাওয়ার ভরসা অর্জন করেছে মালাবার উপকূলের ছোট্ট রাজ্য। সেই লড়াইয়ের অস্ত্রের দুই ফলা— সচেতনতা এবং নজরদারি। তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেরলে করোনার ‘রিপোর্টেড কেস’ ২৪। রাজ্য জুড়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল ১৮ হাজার ১১ জনকে। আইসোলেশন-এ ৫৩৭২ জন। তার মধ্যে হাসপাতালে মাত্র ২৬৮ জন। বাকিদের জন্য বাড়িতেই কোয়রান্টিন। পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকা অধিকাংশই ধীরে ধীরে মুক্ত হতে শুরু করেছেন। রাজ্যবাসীর সচেতনতা এবং সেই সঙ্গে সরকারি স্তরে টানা নজরদারি এই রোগ-যুদ্ধ মোকাবিলায় সহায়ক হচ্ছে, এমনই অভিমত সরকারি সূত্রের।
রোগ ঠেকানোর লড়াইকে আরও তীব্র মাত্রায় তুলে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই কেরল সরকারের এখনকার মন্ত্র ‘ব্রেক দ্য চেন’। মালয়ালম শিক্ষা, সংস্কৃতি, অভিনয়ন জগতের নানা ব্যক্তিত্ব এই প্রচার-কর্মসূচিতে সরকারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে শৈলজা টিচারের কথায়, ‘‘এক জন ব্যক্তির থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয় কোভিড-১৯। আমাদের লড়াই ভাইরাসের এই চেনটা কেটে দেওয়ার। তার জন্য সাধারণ মানুষের ন্যূনতম কিন্তু জরুরি কর্তব্য হাত পরিষ্কার রাখা। কর্মস্থলে ঢোকা বা বাসে-ট্রেনে ওঠা-নামার পরে ভাল করে হাত ধুয়ে নেওয়ার আবেদন করছি সকলকে।’’
আরও পড়ুন: করোনায় নতুন করে সংক্রমিত ৫০ জন, দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ
কিন্তু এ তো গেল সচেতনতার কথা। ভাইরাসের উপসর্গ কেউ গোপন করলে কী ভাবে তার মোকাবিলা হচ্ছে? স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতে, পরপর দু’বছর ‘নিপা’ (এনআইভি) ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই সরকারের কাছে যেমন কাজের অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছে, তেমনই মানুষকেও সচেতন করেছে। এমনিতেই স্বাস্থ্য পরিষেবায় উন্নত রাজ্য কেরলে মানুষের সাধারণ সচেতনতা অনেক জায়গার চেয়ে ভাল। তারই মধ্যে ২০১৮ সালে ‘নিপা’য় আক্রান্ত ১৯ জনের ১৮ জনই মারা গিয়েছিলেন। আতঙ্ক ছড়ালেও মোকাবিলার পথ বার করেছে কেরল। গত বছর ফের এনআইভি ভাইরাস হানা দিলেও মৃত্যু ঠেকাতে পেরেছিল তারা। সেই অভিজ্ঞতাই এখন করোনা-যুদ্ধে কাজে আসছে।
‘নিপা’র উৎস ছিল মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর। করোনার আমদানিও বিদেশ থেকে। ঝুঁকি না নিয়ে রাজ্যের সব বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অন্তর্দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক যাবতীয় উড়ানের যাত্রী-তথ্য চেয়ে নিয়েছে কেরল প্রশাসন। বিমানবন্দরে প্রাথমিক স্ক্রিনিং-এর পরে কেউ পরামর্শ না মেনে বেরিয়ে গেলে তাঁর নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে, আবার ঠিকানা ধরে পৌঁছে গিয়েছে মেডিক্যাল টিমও। বিমানবন্দর থেকে উধাও হওয়া দু’জনকে এই ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’ করেই ধরে ফেলেছে রাজ্য প্রশাসন। ট্রেনের ক্ষেত্রে তিন জনের এক একটি টিম জংশন এবং রাজ্যে প্রবেশের স্টেশনে দু’টি করে কামরা ধরে ধরে যাত্রীদের পরীক্ষা করছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘উড়ানের যাত্রী তালিকা সরকারের হাতে থাকছে। ট্রেনে উঠে পরীক্ষা হচ্ছে। সরকারি পরিবহণে কেএসআরটিসি-র বাস জীবাণুমক্ত করা হচ্ছে। কেরলের সঙ্গে অন্য দেশ এবং অন্যান্য রাজ্যের যোগাযোগ পয়েন্ট একটু বেশি বলে কাজটা কঠিন। তবু চ্যালেঞ্জ নিয়েছি।’’
তবে হাসপাতাল থেকে উপসর্গ বা রোগ লুকিয়ে পালিয়ে যাওয়ার রিপোর্ট কেরলে নেই। রাজ্যের নাগরিকদের ভরসা দিতেই ২০ হাজার কোটি টাকার ‘রিভাইভ্যাল প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তার মধ্যে অটো বা বাস-চালক থেকে শুরু করে অসংগঠিত সব ধরনের শ্রমিকের জন্য সহায়তা আছে, এপিএল-বিপিএল নির্বিশেষে সকলের জন্য বিনামূল্যে এক মাসের খাদ্যশস্যের বন্দোবস্ত আছে। বিজয়ন বলছেন, ‘‘সতর্কতায় কোনও ঢিলেমি আমরা দেখাতে পারি না, অসহায় গরিব মানুষের দায়িত্বও এড়িয়ে যেতে পারি না। মানুষকে বলছি, সতর্ক থাকুন। কিন্তু বাইরের লোক দেখলেই সতর্কতার নামে তাঁদের অসম্মান বা হয়রান করবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy