ছবি এএফপি।
পজ়িটিভ রোগীর যে সংখ্যা প্রতিদিন উঠে আসছে পরিসংখ্যানে, প্রকৃত রোগীর সংখ্যা আসলে তার চেয়ে অনেক বেশি, সে কথা আগেই বলেছিলেন বিজ্ঞানী-গবেষকেরা। তাঁদের অনুমান ছিল, প্রকৃত রোগীর সংখ্যা অন্তত ১০ গুণ বেশি। এ বার কার্যত সেই অনুমানেই সিলমোহর দিল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর একটি সমীক্ষা। সম্প্রতি প্রকাশিত ওই সমীক্ষা বলছে, প্রতিটি ‘কনফার্মড’ কেসের পাশাপাশি ৮০-১৩০টি কেস হিসেবের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে গবেষকেরা জানাচ্ছেন, মূলত তাঁদেরই পরীক্ষা করা হচ্ছে যাঁদের উপসর্গ ‘সিভিয়র’। উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গের রোগী যাঁরা, তাঁরা পরীক্ষার বৃত্তের বাইরে থাকছেন। এর ফলে জনসংখ্যার একটা বড় অংশই পরীক্ষার আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে। যার জন্য বর্তমানে পজ়িটিভ কেসের যে সংখ্যা ধরা হচ্ছে, সেটি বাস্তব চিত্রের ঠিক প্রতিফলন নয় বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা।
আইসিএমআর-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় এ বিষয়ে জানান, এই মুহূর্তে সংক্রমণ গ্রামে ও ছোট শহরে ছড়িয়ে গিয়েছে, যেখানে পরীক্ষার পরিকাঠামো তত উন্নত নয়। ফলে সকলের পরীক্ষাও ঠিক মতো করা যাচ্ছে না। প্রকৃত সংখ্যা পাওয়ার ক্ষেত্রে সেটিও অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। তাঁর কথায়, ‘‘জনসংখ্যার বিচারে দৈনিক পরীক্ষাও কম হচ্ছে। তার ফলেও ঠিক কত জন করোনা পজ়িটিভ, সেটা বলা যাচ্ছে না।’’ মে-জুন মাসে করা ওই ‘সেরো-প্রিভ্যালেন্স সার্ভে’ আরও জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে দেশের ৪০ শতাংশ জনসংখ্যাই সার্স-কোভ-২-এ ‘এক্সপোজ়ড’। এই সমীক্ষা ব্যাখ্যা করে মাইক্রোবায়োলজিস্ট সুখেন্দু মণ্ডল বলছেন, ‘‘কোনও প্যাথোজেন শরীরে প্রবেশের পরে তার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। রোগ বিশেষে প্রতিটি অ্যান্টিবডির চরিত্র আলাদা। সেরোলজিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে সংশ্লিষ্ট অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেলে বোঝা যাবে, উপসর্গ না-থাকলেও সেই ব্যক্তি সংক্রমিত হয়েছেন।’’
কোভিড পজ়িটিভের প্রকৃত সংখ্যা না-পাওয়ার কারণ হিসেবে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করছেন চিকিৎসকেরা। তা হল, কারও হয়তো হাল্কা ঠান্ডা লেগেছে বা জ্বর হয়েছে। বাড়িতে থাকাকালীন নিজের থেকেই তা সেরে গেল। অথচ পরীক্ষা করলে হয়তো দেখা যেত, ওই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার এ বিষয়ে বলেন, ‘‘করোনা নিয়ে একটা সামাজিক ভীতিও রয়েছে। তাই পরীক্ষায় করোনা পজ়িটিভ এলে কী হবে, এই ভয়েও অনেকে পরীক্ষা করাচ্ছেন না। ফলে সেগুলিও হিসেবে আসছে না।’’
আরও পড়ুন: ৫০ লক্ষে ভারত, তবু লকডাউনের গুণগান
এমনিতে শুরু থেকেই উপসর্গহীন ও মৃদু উপসর্গ ছিল এই সংক্রমণের অন্যতম চরিত্র। ফলে তা নিয়ে সংখ্যা-বিভ্রান্তি বরাবরই ছিল। সংক্রমণের দিন যত এগিয়েছে, ততই সেই বিভ্রান্তি বেড়েছে। ঘটনাচক্রে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকায় প্রতিটি ‘কনফার্মড’ কেসের পাশাপাশি মাত্র ১০টি কেস হিসেবের বাইরে থাকছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে এক ভাইরোলজিস্টের বক্তব্য, ‘‘আমেরিকায় রোগীর সংখ্যা প্রথম থেকেই বেশি। কারণ সেখানে বেশি পরীক্ষা হচ্ছে। ফলে কে আক্রান্ত আর কে নন, সেটা জানা যাচ্ছে।’’ দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান এল এম শ্রীবাস্তব অবশ্য জানাচ্ছেন, হিসেবের বাইরে থাকলেও আক্রান্তের সংখ্যা দেখে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, প্রতিদিন মৃত্যুহার কমছে। বর্তমানে সেই হার ১.৬৪ শতাংশ। সেখানে সুস্থতার হার ৭৮.২৮ শতাংশ। তাঁর কথায়, ‘‘হিসেবের বাইরে কতগুলি কেস থাকছে, তার পাশাপাশি এই বিষয়গুলির উপরেও নজর দিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy