প্রতীকী ছবি।
‘‘ভয় নেই...!’’
চৈত্র সেলের শহরে ভিড় দেখে আতঙ্কিত আক্ষেপ এক চিকিৎসকের। বললেন, ‘‘করোনা নিয়ে মানুষের ভয় সত্যিই কি কেটে গিয়েছে? কেউ তো বলেননি, করোনা নিশ্চিহ্ন হয়েছে! তা হলে এই বেপরোয়া মনোভাব কেন?’’
রাজ্য জুড়ে এক শ্রেণির মানুষের ঢিলেঢালা মনোভাব কতটা বিপদ ডেকে আনতে পারে, রোজ তার প্রমাণ মিললেও কেন তাঁরা সচেতন হচ্ছেন না, সেটাই ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের। তাঁদের বক্তব্য, কোন দিকে যাচ্ছে পরিস্থিতি, রাজ্যের কয়েকটি জেলায় ১ থেকে ৪ এপ্রিলের করোনা-রেখাচিত্রের ওঠানামা দেখলেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘দৈনিক আক্রান্ত একটু কম দেখলেই মানুষের আনন্দের সীমা থাকে না। কিন্তু তাঁরা বোঝেন না, এমন ভাবে ওঠানামা করতে করতেই আক্রান্তের সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়। সংক্রমণ জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ১ এপ্রিল রাজ্যে আক্রান্ত হন ১২৭৪ জন। পরের দিন সংখ্যাটা ১৭৩৩ হয়ে যায়। ৩ এপ্রিল ১৭৩৬ জন, ৪ এপ্রিল ১৯৫৭ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
‘‘টেস্টিং, ট্র্যাকিং ও ট্রিটমেন্ট। প্রথম বারের মতো এই তিন ‘টি’-র উপরেই ফের বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। কারও মধ্যে ন্যূনতম কোনও উপসর্গ দেখা গেলেই তাঁর করোনা পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে,’’ বলেন স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক। শুধু র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা নয়, আরটিপিসিআর পরীক্ষার উপরে জোর দিতে বলা হয়েছে সব জেলা প্রশাসনকেই। আশাকর্মী ও পুর স্বাস্থ্যকর্মীদের আবার বাড়ি-বাড়ি ঘুরে সমীক্ষা চালাতে বলা হয়েছে। যাতে কারও উপসর্গ দেখা গেলেই তা ব্লক বা পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নজরে আনতে পারেন ওই কর্মীরা। মাইকে করোনা-সচেতনতার প্রচারও শুরু করেছে বিভিন্ন পুরসভা। প্রতিটি জেলা প্রশাসনের সঙ্গেই কয়েক দিন অন্তর ভিডিয়ো-বৈঠকও করছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।
স্বাস্থ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, করোনা রোগীর শয্যা পেতে যাতে সমস্যা না-হয়, সেই জন্য সব জেলার সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো তৈরি রাখতে বলা হয়েছে। এ বার একটি বা দু’টি মেডিক্যাল কলেজকে শুধু কোভিড চিকিৎসার জন্য না-রেখে সব সরকারি হাসপাতালেই নির্দিষ্ট কোভিড ওয়ার্ড গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য প্রশাসন। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নতুন করে কোভিড গাইডলাইন বা নির্দেশিকা প্রকাশ করা হতে পারে। নতুন যে-স্ট্রেন আসছে, তাতে উপসর্গের কী পরিবর্তন হচ্ছে, নতুন কোন ওষুধ প্রয়োগ করা যায়— সবই থাকবে সেই নির্দেশিকায়।’’
স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে জেলায়। রামপুরহাট ও বীরভূম স্বাস্থ্য-জেলায় করোনা সন্দেহে পরীক্ষা বাড়ানো হচ্ছে। রামপুরহাট স্বাস্থ্য-জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, ‘‘জেলাশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী জনসমাগম বেশি হয়, এমন এলাকায় পরীক্ষা বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে। নলহাটি, মুরারই-সহ আটটি ব্লকে দৈনন্দিন পরীক্ষা বাড়াতে আরও বেশি কর্মী দরকার।’’ মাসখানেক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দৈনিক করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা দশের নীচে নেমে গিয়েছিল। এক মাসেই সেই স্বস্তি উধাও। ওই জেলায় মোট অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার কোভিড ম্যানেজমেন্ট কমিটির কো-অর্ডিনেটর সমরেন্দ্রকুমার বসু বলেন, ‘‘যে-সব জায়গায় জনসভা ও মিছিল হচ্ছে, সেখানে র্যাপিড টেস্ট প্রয়োজন। যদিও তা কঠিন। যাঁরা মিছিল বা জনসভায় যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে কারও যদি শরীর খারাপ হয়, তা হলে করোনা পরীক্ষা করানো উচিত।’’
প্রতিদিন করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও জমায়েতের উপরে কড়া নিয়ন্ত্রণ আনা হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, বিয়েবাড়ি, ভোট প্রচার— সবেতেই ভিড় উপচে পড়ছে। কোথাও কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও রাজ্যের তরফে আগে নির্দেশিকা জারি করা হত। এখন তা-ও হচ্ছে না। প্রথম পর্বে অতিমারি আইন অনুযায়ী মাস্ক না-পরলে, বিধি ভাঙলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হত। কিন্তু এখন সে-সবেরও বালাই নেই। যা দেখে শুনে বাসিন্দাদের মন্তব্য, ‘‘যেখানে প্রশাসনই কড়া নয়, সেখানে মানুষ ভয় পাবে কেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy