Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in India

‘অক্ষরে অক্ষরে কোভিড বিধি মানতেই হবে’

নোবেলজয়ী জার্মান বিজ্ঞানী হারাল্ডৎসুর হাউজ়েন-এর সঙ্গে বর্তমান করোনাভাইরাস সংক্রমণ, প্রতিষেধক-সহ একাধিক বিষয়ে কথা বললেন দেবাশিস ঘড়াই। 

হারাল্ডৎসুর হাউজ়েন

হারাল্ডৎসুর হাউজ়েন

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৩১
Share: Save:

২০০৮ সালে ফিজ়িয়োলজি বা মেডিসিনে পুরস্কৃত করার সময়ে নোবেল কমিটির তরফে বলা হয়েছিল, ‘তিনি প্যাপিলোমা ভাইরাস সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার উল্টো দিকে গিয়ে গবেষণা করেছেন। এবং তিনিই জানিয়েছেন, প্যাপিলোমা ভাইরাসের জন্যই জরায়ুমুখ ক্যানসার (সার্ভাইকাল ক্যানসার) হয়।’ সেই নোবেলজয়ী জার্মান বিজ্ঞানী হারাল্ডৎসুর হাউজ়েন-এর সঙ্গে বর্তমান করোনাভাইরাস সংক্রমণ, প্রতিষেধক-সহ একাধিক বিষয়ে কথা বললেন দেবাশিস ঘড়াই।

প্রশ্ন: এত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনি অনুমতি দিলে আমি এই সাক্ষাৎকারের শুরুতে আপনারই অন্য একটি সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ একটু উল্লেখ করতে চাই।

হারাল্ডৎসুর হাউজ়েন: বলুন।

প্রশ্ন: আপনি ওই সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি আমার সামগ্রিক বিজ্ঞান সাধনা মূলত একটি প্রশ্ন ও তার উত্তরের অন্বেষণে উৎসর্গ করেছি। তা হল, মানবশরীরে ক্যানসারের ক্ষেত্রে কোনও সংক্রামক এজেন্টের (ইনফেকশাস এজেন্টস) ভূমিকা কতটা।’

উত্তর: হ্যাঁ, ঠিকই। ২০০৮ সালের নোবেলপ্রাপ্তির ভাষণে আমি ১৯৯৫-২০০৮ সাল পর্যন্ত যতগুলো নভেল ভাইরাস চিহ্নিত করা গিয়েছিল, তার একটি তালিকার উল্লেখ করেছিলাম। সেই তালিকায় যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা এইচ৫এন১, নিপা ভাইরাস ছিল, তেমনই ছিল সার্স, নতুন করোনাভাইরাসও। তবে সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, ওই একই সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ৩০টি প্রজাতির নভেল হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছিল। সংক্রামক এজেন্ট যেমন ক্যানসারের জন্য দায়ী, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির নেপথ্যেও তেমন এজেন্টেরই হাত রয়েছে।

প্রশ্ন: ঠিকই। কারণ এইচপিভি-র কারণেই যে জরায়ুমুখ ক্যানসার হয়, আপনিই তা নিশ্চিত করে বলেছিলেন।

উত্তর: আসলে বিশ্বব্যাপী ক্যানসারের ২০ শতাংশেরও বেশি ক্যানসার কোনও না কোনও সংক্রামক এজেন্ট— ভাইরাস, ব্যাক্টিরিয়া বা প্যারাসাইটের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আমার গবেষণা ছিল মূলত এইচপিভি নিয়ে। আমার প্রাথমিক হাইপোথিসিস ছিল, এইচপিভি-র কারণেই সার্ভাইকাল ক্যানসার হয়। শেষ পর্যন্ত সেই হাইপোথিসিস যে ঠিক, তা প্রমাণ করি। গবেষণার মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যানসারের জন্য দায়ী প্রধানত দু’রকমের এইচপিভি-র ‘আইসোলেশন’ এবং ‘ক্যারেক্টারাইজ়েশন’ করতে সফল হই। যা ‘এইচপিভি-মেডিয়েটেড’ কার্সিনোজেনেসিসের মেকানিজ়ম বুঝতে সাহায্য করেছিল।

প্রশ্ন: আপনার আগের কথার সূত্র ধরে বলি, আপনি ১৯৯৫-২০০৮ সাল পর্যন্ত যে নভেল বা নতুন ভাইরাসের তালিকা করেছিলেন, তার মধ্যে সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (সার্স) ও নিউ করোনাভাইরাস, দু’বার করোনাভাইরাসের উল্লেখ ছিল। সেই করোনাভাইরাসেরই অন্য এক প্রজাতির দাপট চলছে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে।

উত্তর: হ্যাঁ। এখনও বর্তমান সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

প্রশ্ন: কিন্তু একাধিক প্রতিষেধক তো বাজারে এসে গিয়েছে।

উত্তর: শুধু প্রতিষেধক বাজারে এলেই হবে না। আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, যার উপরে জোর দিতে হবে।

প্রশ্ন: যেমন?

উত্তর: দেখুন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রকৃত চরিত্র কী, সেই সম্পর্কে এখনও আমরা পুরোপুরি জেনে উঠতে পারিনি। এটা একটা দিক। যত ক্ষণ না প্রকৃত চরিত্র, তার সংক্রমণের গতিপথ ঠিক মতো বোঝা যাবে, তত ক্ষণ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তা ছাড়া প্রতিষেধক বাজারে এলেও সে সংক্রান্ত তথ্য এখনও পর্যাপ্ত নয়।

প্রশ্ন: আর একটু সহজ ভাবে বলবেন প্লিজ।

উত্তর: যেমন, বিভিন্ন ধরনের যে সব প্রতিষেধক বাজারে এসেছে, সেগুলি শরীরে কী ধরনের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলছে, সে সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ, এই ‘ইমিউনাইজেশন রেজাল্ট’-এর মাধ্যমেই কোন প্রতিষেধকের কার্যকারিতা কতটা, তা বোঝা সম্ভব। ফলে সেই সংক্রান্ত তথ্য একত্রিত করতে হবে।

প্রশ্ন: সে কারণেই কি প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হলেও সংক্রমণ থামছে না?

উত্তর: ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। আসলে প্রতিষেধক দেওয়া হলেও পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বে এখনও অল্প সংখ্যক মানুষই প্রতিষেধক পেয়েছেন। প্রতিষেধকের আওতায় এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীকেই আনা যায়নি।

প্রশ্ন: তা হলে এ ক্ষেত্রে কী করণীয়?

উত্তর: মাস্ক পরুন। মাস্ক পরুন। মাস্ক পরুন। আক্রান্তের কাছাকাছি এলে তাঁর মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। দূরত্ব-বিধি মানার পাশাপাশি অল্প সময় অন্তর হাত পরিষ্কার করুন। অক্ষরে অক্ষরে কোভিড বিধি মেনে চলতেই হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy