খাঁ খাঁ: হনুমান গঢ়ী মন্দিরের কাছেই একটি বাজার। বৃহস্পতিবার অযোধ্যায়। পিটিআই
যেন বিসর্জনের পরের খাঁ খাঁ দুর্গামণ্ডপ। প্রধানমন্ত্রী-সহ ভিভিআইপিরা অযোধ্যা ছাড়ার পরেই আলগা হয়েছে নিরাপত্তার কড়াকড়ি। কিন্তু গত এক সপ্তাহের প্রস্তুতি আর অনুষ্ঠানের জগঝম্পে করোনা সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়বে কি না, দানা বাঁধছে সেই আশঙ্কাও।
এলাকার এক বাসিন্দা বলছিলেন, “ভিড় যাতে বেশি না-হয়, সেই চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি সরকার। কিন্তু প্রস্তুতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে, অতিথিদের নিরাপত্তায়, আরও বিভিন্ন কাজে লোক তো কম আসেননি। কী হবে কে জানে?” অনেকেরই বক্তব্য, অনুষ্ঠানস্থলে দূরত্ব-বিধির যে কড়াকড়ি ছিল, তা সারা জেলায় ছিল না। তার খেসারত দিতে না-হলেই ভাল। নাগাড়ে ডিউটি শেষে বাড়িমুখো এক পুলিশের বক্তব্য, রাস্তায় দাঁড়ানোর সময়ে দূরত্ব-বিধি মানা হয়েছে। কিন্তু এতটুকু জায়গায় এই কয়েক দিন নিরাপত্তার জন্য যত পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন ছিলেন, তাতে তাঁদের থাকা-খাওয়ার সময়ে নিয়ম-কানুন মানা কঠিন ছিল। উত্তরপ্রদেশ সরকারের দাবি, পুরো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে করোনা রুখতে জারি করা যাবতীয় নিয়ম মেনে। কিন্তু ভূমিপুজোর আগেই যে-হেতু সংক্রমণ বাড়ছিল, তাই পিছু ছাড়ছে না দুশ্চিন্তা।
তবে অনুষ্ঠান ঘিরে কোনও ঝুটঝামেলা না-হওয়ায় স্বস্তির শ্বাস মুসলিম মহল্লায়। তাঁদের অনেকেরই মতে, অতীতে এ শহরে যাবতীয় গোষ্ঠী সংঘর্ষের মূলে বহিরাগতেরা। তাই এখনও ধর্মীয় কারণে অযোধ্যায় ভিড় হলে, কিছুটা গুটিয়ে থাকেন মুসলিমদের অনেকে। সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার দিনে যেমন অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠেছিলেন। নিদেন পক্ষে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন পরিবারের মহিলাদের।
আরও পড়ুন: মসজিদের শিলান্যাসে যাবেন না আদিত্যনাথ
এ বার ভিড় তেমন হয়নি। ভূমিপুজোয় গিয়েছিলেন বাবরি মসজিদের পক্ষে আদালতে লড়াই করা ইকবাল আনসারি। তার উপরে অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেও সবাইকে নিয়ে চলার কথা বলেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবু না-আঁচিয়ে বিশ্বাস করতে রাজি নন এলাকার মুসলিমরা। বিশেষত যেখানে কিছুটা বেসুরো গেয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। জানিয়েছেন, অযোধ্যায় মসজিদ নির্মাণ শুরুর সময়ে উপস্থিত থাকবেন না তিনি।
রামমন্দির তৈরির পরে নতুন রেলস্টেশন, বিমানবন্দর, হোটেল, পর্যটকের ঢলের দৌলতে অযোধ্যার অর্থনীতি আমূল বদলে যাবে বলে স্বপ্ন ফেরি করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই আশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রীরও। এতে আশায় বুক বাঁধছে স্থানীয় হোটেল শিল্প। খদ্দেরের আশায় চোখ চকচকে মন্দির ঘিরে ব্যবসা করা ছোট দোকানিদেরও। এঁদের কেউ পাথরের মূর্তি বিক্রি করেন, কারও পসরা পুজোসামগ্রী। কেউ ছোট খেলনার দোকান চালাচ্ছেন, তো কারও পুরি-সব্জির দোকান বহু পুরনো। পর্যটক বাড়লে, তাঁদের লক্ষ্মীলাভের আশা। কিন্তু একই সঙ্গে আশঙ্কা, নতুন ঝাঁ-চকচকে অযোধ্যায় তাঁদের জায়গা একই রকম থাকবে তো? নাকি তাঁদের প্রান্তিক করে দিয়ে জাঁকিয়ে বসবে পেল্লাই সব নতুন দোকান? পুরনো হোটেলও কি প্রতিযোগিতায় পেরে উঠবে নতুনের সঙ্গে? চর্চা সর্বত্র।
আরও পড়ুন: রামমন্দির তৈরি করতে গিয়ে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন কি স্বয়ং রামচন্দ্র?
শিলান্যাসে কোনও দলিত ধর্মগুরুকে না-ডাকায় ক্ষোভ জানিয়েছিলেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। আয়োজকদের দাবি ছিল, বাদ দেওয়া হয়নি সমাজের কোনও অংশকেই। এখন শোনা যাচ্ছে, ভূমিপুজোর পরে প্রসাদের প্রথম প্যাকেট নাকি পাঠানো হয়েছে এক দলিতের বাড়িতেই। কিন্তু এ দিনই আবার জাতপাতের কারণে উনিশ বছরের এক তরুণী ও তার প্রেমিককে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে উত্তরপ্রদেশের বান্দায়।
সব মিলিয়ে, হপ্তাখানেকের মায়াজাল কাটিয়ে অযোধ্যার বাস্তবে ফেরার পালা। মন্দির-দীপোৎসব-ভিভিআইপি ‘ভুলে’ অযোধ্যার সামনে এখন করোনা সামলে কাজে ফেরার চ্যালেঞ্জ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy