ছুড়ে ফেলা হচ্ছে মৃতদেহ। ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের কী ভাবে দাহ করা হবে, তার নির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র। কিন্তু তার পরেও সে সব কতটা মানা হচ্ছে? জানার উপায় খুব কম। কারণ, শব দাহ করার সময় পরিবারের লোকজন থাকেন না। কিন্তু সম্প্রতি পুদুচেরিতে এমন এক ছবি ধরা পড়েছে, যা দেখে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। ওই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, একটি মৃতদেহকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে গর্তে। এক জন মৃতের প্রতি এমন অসম্মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরগরম এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। পরিস্থিতি এতটাই সরগরম যে, ওই কর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছেন জেলাশাসক। পুদুচেরির লেফটেন্যান্ট গভর্নর কিরণ বেদী জানিয়েছেন, ওই কর্মীদের শো-কজ নোটিস ধরানো হয়েছে।
প্রায় সাত মিনিটের একটি ভিডিয়ো। তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি অ্যাম্বুল্যান্স এসে দাঁড়াল একটি মাঠের ধারে। ওই অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামলেন চার জন। তাঁদের সবাই পিপিই পরে রয়েছেন। তার পর পিছনের দরজা খুলে আগাগোড়া পলিথিনে মোড়া স্ট্রেচারের উপরে রাখা একটি মৃতদেহ নিয়ে আসছেন। আগে থেকেই একটি গর্ত খোঁড়া ছিল। ওই চার জন গর্তের পাশে দাঁড়িয়ে মৃতদেহটি ছুড়ে দিলেন গর্তের ভিতরে। ফিরে যাওয়ার সময় এক জনকে বলতে শোনা যায়, ‘বডি ফেলে দেওয়া হয়েছে’। যে সরকারি আধিকারিককে বিষয়টি জানান, তিনিও সম্মতিসূচক ইঙ্গিত করেন।
এই ঘটনার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরেই নানা মহল থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। ওই কর্মীদের শাস্তির দাবি ওঠে। এক জন মৃত মানুষের প্রতি এমন আচরণ ‘মানহানি’ বলে সরব হয় বিভিন্ন সংগঠনও। মানবাধিকার সংগঠন ‘ইন্ডিয়া এগেনস্ট করাপশন’ বিবৃতি দিয়ে বলেছে, মৃতদেহের সম্মানজনক সৎকার তাঁর অধিকার। এই ধরনের অপমান ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০০ নম্বর ধারা অনুযায়ী অপরাধ। মৃত ব্যক্তির মানহানির দায়ে ওই স্বাস্থ্যকর্মী ও দাহকর্মী এবং তাঁদের সুপারভাইজারদের জরিমানা এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।’’ সংগঠনের সভাপতি এস আনন্দ কুমার এই ঘটনাকে ‘পুদুচেরির অপেশাদার বিপর্যয় মোকাবিলা’ বলে মন্তব্য করেছেন।
দেখুন ভিডিয়ো:
আরও পড়ুন: ভারতে করোনা সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছবে আগামী ২-৩ মাসে, হুঁশিয়ারি এমস-এর অধিকর্তার
শুধু অসম্মানই নয়, অভিযোগ উঠেছে গাইডলাইন মেনে দাহ করা হয়েছে কি না, তা নিয়েও। করোনায় মৃতদেহ দাহ নিয়ে হু-এর অনেক গাইডলাইনের মধ্যে অন্যতম হল, মৃতদেহ একটি প্লাস্টিকের প্যাকেটের মধ্যে রেখে তার মুখ ভাল করে বন্ধ করতে হবে। কিন্তু ওই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, মৃতদেহটি একটি সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। ছুড়ে দিতেই সেটা খুলে যেতেও দেখা গিয়েছে ওই ভিডিয়োয়। আবার মৃতদেহটি পিছনের দিকে যে দু’জন ধরেছিলেন, তাঁদের পায়ের জুতো নিয়েও সংশয় রয়েছে। কেননা, হু-এর গাইডলাইন অনুযায়ী দাহ করতে যাওয়া কর্মীদের পায়ে গাম্বুট অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু এই দু’জনের জুতো দেখে গাম্বুট কখনওই মনে হয়নি। এতে ওই কর্মীদের সংক্রমিত হয়ে পড়ার আশঙ্কাও করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: ফেরাল আট হাসপাতাল, বিনা চিকিৎসায় অ্যাম্বুল্যান্সেই মৃত্যু অন্তঃসত্ত্বার
সব মিলিয়ে বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে। তার জেরে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন পুদুচেরির জেলাশাসক অরুণ। তিনি বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট বিভাগকে একটি মেমো পাঠিয়েছি। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমি বিষয়টির তদন্ত করছি।’’ স্থানীয় সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তি চেন্নাইয়ের বাসিন্দা। পুদুচেরিতে গিয়ে তিনি কোভিডে আক্রান্ত হন এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy