গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
দিন দুই ধরেই জ্বরে ভুগছে দশ বছরের ছেলেটি। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের অন্য উপসর্গও দেখা দিয়েছে। তাই হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন বাবা। তবে টানা দু’দিন ধরে নানা হাসপাতালের দোরে দোরে ঘুরেও কোথাও জায়গা হয়নি ছেলের। উল্টে হাসপাতাল থেকে শুনতে হয়েছে, “বাড়িতে থাকুন। আর বার বার হাত পরিষ্কার করুন।” শেষমেশ মঙ্গলবার পুলিশের সাহায্যে হাসপাতালে জায়গা পেয়েছে শ্রীনগরের ইদগাহের বাসিন্দা জামাল (নাম পরিবর্তিত)। আপাতত শের-ই-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এসকেআইএমএস)-এচিকিৎসা শুরু হয়েছে তার। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত জামালের পরিবারের সকলেই ওই হাসপাতালে কোয়রান্টিনে রয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমের কাছে জামালের বাবার দাবি, গত মাসে ১৮ মার্চ থেকে ২২ পর্যন্ত শ্রীনগরের এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়েছিল তাঁর ছেলে। সেখানে এক ধর্মগুরুর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল জামাল। বাড়ি ফিরে জ্বর আসে তার। দেখা দেয় করোনাভাইরাসের অন্যান্য উপসর্গও। দিন কয়েক পরে জানা যায়, ওই ধর্মগুরু করোনায় সংক্রমিত।
এর পর গত শনিবার ছেলেকে নিয়ে এসএমএইচএস হাসপাতালে নিয়ে যান ওই ব্যক্তি। তাঁর দাবি, হাসপাতাল থেকে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই জামালকে রেফার করা হয় সিডি হাসপাতালে। তবে তার আগে এসএমএইচএস হাসপাতাল জানিয়ে দেয়, কোভিড-১৯ পজিটিভের সংস্পর্শে এসেছিল জামাল। তবে সিডি হাসপাতালের মতো সরকারি হাসপাতালে গিয়েও একই অভিজ্ঞতা হয় তাঁদের। তাকে রেফার করা হয় রায়নাওয়ারিতে জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল (জেএলএনএম) হাসপাতালে। ফেরানোর আগে সিডি হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, করোনা-সংক্রমণের সব উপসর্গই রয়েছে জামালের। হাসপাতাল থেকে বলা হয়, “এখানে বেড নেই। বাড়িতে থাকুন। আর বার বার হাত পরিষ্কার করুন।”
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে আসরে ডোভাল, পুলিশ-গোয়েন্দা যৌথ অভিযানে খালি করা হল নিজামউদ্দিন
জামালের বাবার দাবি, সিডি হাসপাতাল থেকে একটা অ্যাম্বুল্যান্সও দেয়নি। তিনি বলেন, “কোনও রকমে একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে জেএলএনএম হাসপাতালে নিয়ে যাই ছেলেকে। সেখানেও যেন ভ্রুক্ষেপই নেই কারও।” তাঁর দাবি, হাসপাতালের কর্মীরা জানান, একমাত্র পুলিশ যাঁদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসবে, তাঁদেরই ভর্তি করানো হবে।
এর পর ছেলের জন্য ফের হাসপাতালের খোঁজ শুরু। তবে লকডাউনের জন্য রাস্তায় গাড়ি নেই। ফলে জামালকে কোলে করেই ফের নিয়ে যান এসএমএইচএস হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে কান্নাকাটি করলেও ভর্তি করানো যায়নি ছেলেকে। রেফার করা হয় এসকেআইএমএস-এ। সঙ্গে এটাও জানা হয়, করোনায় সংক্রমিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে জামালের। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ এসকেআইএমএস-এ গিয়েও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। সেই সঙ্গে ওই হাসপাতালের পরামর্শ, “বাড়িতে কোয়রান্টিনে থাকুন এবং হাত পরিষ্কার করুন।” জামালের বাবার আর্তি সত্ত্বেও তাকে ভর্তি করতে চায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, “হাতজোড় করে ওঁদের (হাসপাতাল কর্মী) কাছে অনুরোধ করেছি, কিন্তু কেউ আমার কথা শোনেননি।”
আরও পড়ুন: এক রাতে আক্রান্ত বাড়ল ২৪০, দেশে আক্রান্ত ১৬৩৭, মৃত ৩৮
দিন দুই এ ভাবেই এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে বেড়িয়েছেন জামালের বাবা। সোশ্যাল মিডিয়ায় সে খবর ছড়িয়ে পড়তেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাই পুলিশের সাহায্যে জামালকে এসকেআইএমএস-এ নিয়ে যান। মঙ্গলবার ওই নাবালকের কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার রিপোর্ট এসেছে তার। পাশাপাশি, জামালের পরিবারের সকলকেই কোয়রান্টিনে রাখা হয়েছে। তাঁদের রিপোর্ট এখনও আসেনি।
গোটা ঘটনায় গাফিলতির কথা অস্বীকার করেছেন এসকেআইএমএস-এর মেডিক্যাল সুপার ফারুখ এ জান। উল্টে তিনি বলেন, “আমাদের চিকিৎসকেরা কোনও গাফিলতি দেখাননি।রোগীর দেহে করোনার তেমন কোনও উপসর্গ ছিল না। কোভিড-১৯ পজিটিভের সংস্পর্শে সে এসেছিল। তাই তাকে বাড়িতে কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন আমাদের চিকিৎসকেরা।”
জামালের করোনা সংক্রমণের কথা শুনে বিধ্বস্ত তার বাবা। তিনি বলেন, “ছেলে কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ায় একেবারে ভেঙে পড়েছিলাম। তবে জামাল এসে বলল, বাবা, ভেঙে পড়ো না। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। ছেলেটাই আমাকে সাহস জোগাচ্ছে!”
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy