নিজামউদ্দিনের সেই জমায়েত। ছবি: পিটিআই
গত ২২ মার্চ রবিবার দেশ জুড়ে ‘জনতা কার্ফু’ পালন হয়েছে। ২৪ তারিখ দেশ জুড়ে ঘোষণা হয়েছে লকডাউন। কিন্তু তার পরেও দিল্লির মারকাজ নিজামউদ্দিন মসজিদে ছিলেন শয়ে শয়ে দেশ-বিদেশি মানুষ। একটি ধর্মীয় জমায়েত উপলক্ষে জড়ো হওয়া মানুষজনের মধ্যে অন্তত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আক্রান্ত ছিলেন অন্তত ২০০ জন। মঙ্গলবার দিল্লি ও অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আরও ৩৫ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এই সম্মেলনের জেরেই দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
এর মধ্যেই সোমবার দিল্লির লোকনায়ক হাসপাতালে ভর্তি ১০২ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। মঙ্গলবার তাঁদের মধ্যে ২৪ জনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। নিজামউদ্দিন মসজিদ থেকে এনে রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালেও অনেককে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁদের রিপোর্ট এখনও আসেনি। সেই রিপোর্ট এলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারেই মনে করছে রাজ্য প্রশাসন। অন্য দিকে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকেও ১১ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বলে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর মিলেছে।
জানা গিয়েছে, ওই জমায়েত থেকে তেলঙ্গানায় ফেরা ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে মৃত্যু হয়েছে আরও এক জনের। আন্দামান নিকোবরে ফিরে যাওয়া ১০ জনের করোনা সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে। এ ছাড়া দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি দেশ-বিদেশের কয়েকশো মানুষ। গতকাল সোমবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল ওই মসজিদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও মসজিদ কর্তৃপক্ষের দাবি, আগে দিল্লিতে এবং পরে গোটা দেশে লকডাউনের জেরে ওই অনুষ্ঠানের পরে গন্তব্যে ফিরতে পারেননি অতিথিরা। তার জন্যেই মসজিদে ছিলেন।
মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে দিল্লির নিজামউদ্দিন মসজিদে জমায়েতের ডাক দিয়েছিল তবলিঘি জামাত। তাতে দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার মানুষ ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, তাইল্যান্ড, নেপাল, মায়ানমার, বাংলাদেশ, কিরঘিজস্তান, আফগানিস্তান, আলজিরিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, কুয়েত থেকে প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। ওই অনুষ্ঠান শেষে তাঁরা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গিয়েছিলেন। যেমন ইন্দোনেশিয়ার প্রতিনিধিরা গিয়েছিলেন তেলঙ্গানায়। এখন এই বিপুল সংখ্যক মানুষ কোথায় কোথায় গিয়েছেন, কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের খুঁজে বের করাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্র তথা রাজ্য সরকারগুলির কাছে।
আরও পড়ুন: বাড়িতে কোয়রান্টিনে থাকলে প্রতি ঘণ্টায় সেলফি পাঠান সরকারকে, নির্দেশ কর্নাটকের
এই ঘটনা সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসে দিল্লি সরকার ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। ওই অনুষ্ঠানে অন্তত ১২০০ মানুষ ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফিরে গেলেও ছ’তলা ওই মসজিদে থেকে গিয়েছিলেন দেশ-বিদেশের অন্তত সাড়ে আটশো প্রতিনিধি। ডরমিটরিতে থাকছিলেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই ওই মসজিদ সিল করে দিয়েছে প্রশাসন। সবাইকেই হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই বহু মানুষ দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে খবর, গত কাল সোমবার তাঁদের প্রায় ৩০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে অনেকের রিপোর্ট পজিটিভ।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বিষয়টি নিয়ে তদারকি করা মন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই জমায়েতে যোগ দেওয়া লোকজনের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তবে সেটা বিরাট কঠিন কাজ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে প্রতিদিন বিষয়টির নির্যাস জানানো হচ্ছে। তিনিও নজর রাখছেন। শ্রীনগর ও হায়দরাবাদ মিলিয়ে এই জমায়েতে যোগ দেওয়া কয়েক জনের মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে জরুরি সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: মহিলা-সহ মৃত ৩, রাজ্যে করোনা-আক্রান্ত ২৫
জানা গিয়েছে, ওই অনুষ্ঠানের শেষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্দেশে ২৫টিরও বেশি বাস ছেড়েছিল। সেই বাসে কারা ছিলেন, তাঁদের গন্তব্য কোথায়, তাঁরা কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, সেই খোঁজও শুরু হয়েছে কাল থেকে। নিজামুদ্দিন এলাকা জুড়ে চলছে ড্রোন নজরদারিও।
অন্য দিকে নিজামউদ্দিন কর্তৃপক্ষের তরফে একটি বিবৃতিতে সাফাই দেওয়া হয়েছে, ‘‘সারা দেশে লকডাউন ঘোষণার অনেক আগেই দিল্লিতে লকডাউন জারি হয়েছে। তাই ওই প্রতিনিধিরা আটকে পড়েছিলেন। ট্রেন ও বিমান পরিষেবা আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা ফিরতে পারেননি। সেই কারণেই ওই মসজিদেই থাকছিলেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy