হাসপাতাল চত্বরে মৃতদের শোকার্ত পরিবার। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
ভোপালের শাহডোলের মে়ডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক সঙ্গে কমপক্ষে ১০ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের জোগান না থাকাতেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মৃতদের পরিবারের লোকজন। তবে মৃতের সংখ্যা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতর। ১০ জন নয়, মোট ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করছেন স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখাচ্ছেন। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। অক্সিজেনের জোগানে কোনও ঘাটতি নেই বলে পাল্টা দাবি করেছেন তাঁরা। জেলা প্রশাসনও তাঁদেরই সমর্থন জানিয়েছে। অন্য দিকে, পরিবারের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে বিরোধী দল।
সমস্যা মৃতের সংখ্যা নিয়েও। ১০ বা ১২ নয়, রবিবার রাত থেকে ৬ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডিন মিলিন্দ শিরালকর। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘গতকাল রাতে আইসিইউ-তে ভর্তি ৬ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে অক্সিজেনের অভাব মৃত্যুর কারণ নয়। আইসিইউ-তে ৬২ জন সঙ্কটজনক রোগী রয়েছেন। সব মিলিয়ে সেখানে রোগীর সংখ্যা ২৫৫। তার মধ্যে ১৫৫ জনকেই অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল।’’
জেলাশাসক সত্যেন্দ্র সিংহের গলাতেও একই সুর। তিনি বলেন, ‘‘অক্সিজেনের অভাবে কারও মৃত্যু হয়নি। জরুরি পরিস্থিতির জন্য আগে থেকেই একটি জাম্বো সিলিন্ডার রাখা আছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তাছাড়া অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।’’
যদিও তাঁদের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন মৃতদের পরিবারের লোকজন। রবিবার রাতে মৃত্যু হওয়া এক রোগীর পরিবারের আত্মীয় বলেন, ‘‘শুরুতে ৯১ শতাংশ অক্সিজেন ছিল। কিন্তু সকালে হাসপাতালের কর্মারীই জানান যে, অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছে। আমাদের ধারেকাছেও যেতে দিচ্ছিলেন না ওঁরা। কোনও রকমে ভিতরে ঢুকে দেখি ঠান্ডা মৃতদেহগুলি পড়ে রয়েছে। একটা নয়, অনেক দেহ পড়ে ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই এমনটা ঘটেছে।’’
অন্য এক রোগীর পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘‘খাবার দিয়ে রাত ১২টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে বেরোই। সকাল ৬টায় ফোন পেলাম মারা গিয়েছে। নিরাপত্তারক্ষী বললেন, অক্সিজেনের অভাবে মারা গিয়েছেন।’’
গোটা ঘটনায় শিবরাজ সিংহ চৌহান সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা বিবেক তনখা। শুধু তাই নয়, মৃতের সংখ্যা নিয়েও লুকোচুরি চলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। নেটমাধ্যমে বিবেক লেখেন, ‘সংবাদমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অক্সিজেনের অভাবেই শাহডোলে ১৬ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এবং হৃদয়বিদারক ঘটনা। কেউ বলছেন ৬ জন মারা গিয়েছেন, কেউ বলছেন ১৬ জন। সংখ্যায় কিছু যায় আসে না। কিন্তু প্রত্যেকের জীবনের মূল্য আছে। শাহডোলে মস্ত ব্যবসা রিলায়্যান্সের। কেন তাদের সাহায্য নেওয়া হল না? এ ভাবে মানুষকে মরতে দেওয়া যায় না’।
দৈনিক মৃত্যুসংখ্যা কমিয়ে দেখানো হচ্ছে বলে এর আগে অভিযোগ উঠেছিল শিবরাজ সরকারের বিরুদ্ধে। রবিবার তিনি জানান, ৩৫০ মেট্রিক টন অক্সিজেন রয়েছে তাঁদের হাতে। এর মধ্যে ৩৩৫ মেট্রিক টন ব্যবহার হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় ভাবেও ব্যবস্থা করছেন তাঁরা। সব জেলায় ১ হাজার ২৯৩টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর বলানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ২০ এপ্রিলের মধ্যে আরও ৪৪৫ মেট্রিক টন, ২৫ এপ্রিলের মধ্যে ৫৬৫ মেট্রিক টন এবং ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ৭০০ মেট্রিক টন অক্সিজেন পাঠাবে বলেও জানান শিবরাজ।
শিবরাজের এই দাবির পর রাত থেকেই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একে একে মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশে এখনও পর্যন্ত ৪ লক্ষ ৮ হাজার ৮০ জন নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৫৫৭ জনের। গত ২৪ ঘণ্টাতেই সেখানে ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও রাজ্যের বিভিন্ন শ্মশানে প্রতিদিন কোভিড বিধি মেনে দাহ করা দেহের সংখ্যার সঙ্গে সরকারি পরিসংখ্যানের মিল নেই বলেও অভিযোগ করেছে বিরোধী দল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy