সতর্ক: জনতা-কার্ফুর দিনে সুনসান রাজপথ। ছবি: প্রেম সিংহ
রাস্তাঘাট ফাঁকা। বন্ধ দোকানপাট। চলেনি ট্রেন, বাস, মেট্রো এমনকি উড়ানও। তালাবন্ধ অফিস-কাছারি, স্কুল-কলেজ।
কোনও রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনের ডাকা ধর্মঘটের সময়ে তো নয়ই, এতটা সুনসান ভারতের ছবি শেষ কবে দেখা গিয়েছে কিংবা আদৌ দেখা গিয়েছে কি না, তা মনে করতে পারছেন না কেউ। করোনা সতর্কতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা ‘জনতা কার্ফু’তে আজ এ ভাবেই সাড়া দিয়েছে দেশের মানুষ। উত্তরের লাদাখ থেকে দক্ষিণের তামিলনাডু, কেরল কিংবা পশ্চিমের গুজরাত, মহারাষ্ট্র থেকে পুবের বাংলা কিংবা ওড়িশা— দেশের সর্বত্রই করোনা ত্রাসে ঘরবন্দি থেকেছেন মানুষ। শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত যাঁরা, তাঁরাই বেরিয়েছেন পথে। বিকেল পাঁচটায় হাততালি আর কাঁসরঘণ্টা বাজিয়ে তাঁদের অভিনন্দনও জানিয়েছেন ঘরবন্দি মানুষ। উৎসাহ দেখিয়ে বাইরেও বেরিয়ে এসেছিলেন অনেকে। যা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের।
আর এই পর্ব শেষ হওয়ার আগেই সামনে এসেছে নতুন সরকারি নির্দেশ। আজ রাত ১২টা থেকেই বন্ধ হয়েছে রেলের সব ধরনের যাত্রী পরিষেবা। মালগাড়িগুলিকে অবশ্য এর বাইরে রাখা হয়েছে। রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, দূরপাল্লার যে ট্রেনগুলি আজ রাত ১২টার আগে ছাড়বে, সেগুলি গন্তব্যে পৌঁছবে। তবে দূরপাল্লা, শহরতলি কিংবা মেট্রো রেলের পরিষেবা বন্ধ থাকবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। বন্ধ থাকবে আন্তঃ রাজ্য বাস পরিষেবাও।
আরও পড়ুন: আজ থেকেই কি মুলতুবি সংসদ?
সংক্রমণ আটকাতে দেশের ২২টি রাজ্যের ৭৫টি জেলায় ৩১ মার্চ পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ক্যাবিনেট সেক্রেটারি, স্বাস্থ্যসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারির সঙ্গে রাজ্যগুলির মুখ্যসচিবদের বৈঠকে আজ এই সিদ্ধান্ত হয়। রাজ্যগুলিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তারা চাইলে যে কোনও জেলায় লকডাউন ঘোষণা করতে পারবে।
নরেন্দ্র মোদীর আহ্বানে গোটা দেশে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের অভিবাদন জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মীরা। তবে সংস্পর্শ এড়ানোর বিধি শিকেয় তুলে এত লোক জড়ো হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ছবি: প্রেম সিংহ
লকডাউনের জন্য কী ভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে জেলাগুলিকে? কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, যে জেলাগুলিতে করোনা সংক্রমিত রোগীর মৃত্যু হয়েছে কিংবা রোগী পাওয়া গিয়েছে, আর যে জেলাগুলিতে অধিক সংখ্যায় রোগী নজরদারিতে রয়েছেন— সেই নিরিখেই জেলাগুলি চিহ্নিত হয়েছে। মহারাষ্ট্র, কেরল, দিল্লি, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশেই এমন জেলার সংখ্যা বেশি। তালিকায় রয়েছে অরুণাচলপ্রদেশও। মুম্বই, আমদাবাদ, গুরুগ্রাম, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদ ও কলকাতার মতো শহরগুলিকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল জানিয়েছেন, আগামিকাল সকাল ৬টা থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত গোটা দিল্লি লকডাউন হবে। বাস, ট্যাক্সি, অটো চলবে না। শুধু সরকারি বাস পরিষেবা চলবে চার ভাগের এক ভাগ। দোকানবাজার, কারখানা, অফিস বন্ধ। শুধুমাত্র নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মিলবে, ব্যবস্থা থাকবে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার। অর্থাৎ, এক নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে দেখা যাবে রাজধানী দিল্লিকে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কাল থেকে দিল্লিতে কোনও বিমানও নামবে না। তবে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, বিমান পরিবহণ মন্ত্রক জানিয়েছে, দিল্লির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান পরিষেবা বন্ধ হচ্ছে না। আজ রাত থেকেই দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। সভা-সমাবেশ, মিছিল, সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব আজ জানিয়েছেন, শুধুমাত্র অত্যাবশ্যক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরাই অফিসে আসবেন। বাকিরা বাড়ি থেকেই কাজ করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy