ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
কোনও রকম রাখঢাকের মধ্যে গেলেন না। বিচারপতির সাংবিধানিক দায়িত্বও কোনও বাধা হল না। তিনি, বিচারপতি শেখর কুমার যাদব বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অনুষ্ঠানে গিয়ে খোলাখুলি বলে এলেন, ‘‘এ দেশটা হিন্দুস্থান। সংখ্যাগরিষ্ঠদের ইচ্ছা অনুযায়ীই দেশটা চলবে। কাঠমোল্লাদের থেকে সাবধান থাকুন!’’ বিচারপতির কথার প্রতিবাদ জানিয়ে মুখ খুলেছেন বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেই। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তাঁরা।
রবিবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আইনি সেল প্রয়াগরাজে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানেই বক্তা হিসেবে যান ইলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি শেখর কুমার যাদব। বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘‘এ দেশটা হিন্দুস্থান। সংখ্যাগরিষ্ঠদের ইচ্ছা অনুযায়ীই দেশটা চলবে। এটাই আইন। এটা হাই কোর্টের বিচারপতি হিসেবে বলছি কি না, সেটা বিষয় নয়। ‘বহুসংখ্যকের’ মত অনুযায়ীই আইন কাজ করে। পরিবার বা সমাজের দিকে তাকালেই সেটা বোঝা যাবে।’’ তার পরেই তিনি ইসলামি মৌলবাদের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করতে গিয়ে ‘কাঠমোল্লাদের’ থেকে দূরে থাকার, সাবধান থাকার পরামর্শ দেন। নিজেই বলেন, ‘‘এটা ঠিক শব্দ নয়। তবু বলছি, কারণ এরা দেশের জন্য ক্ষতিকর।’’
দেশ বলতে তিনি কী বোঝেন, সেটাও ব্যাখ্যা করেছেন বিচারপতি। বলেছেন, ‘‘আমার দেশ এমন যেখানে গরু, গীতা আর গঙ্গার পুজো হয়, যেখানে প্রতিটি গৃহে হরবলা দেবীর বিগ্রহ থাকে, যেখানে প্রতিটি শিশুই রাম।’’ বিচারপতির কথায়, তার মানে সবাইকে গঙ্গাচান করে কপালে চন্দন লেপতে হবে, এমন নয়। যারা এ দেশকে নিজের দেশ মনে করে এবং দেশের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত, তারা যে ধর্মেরই হোক না কেন, তারা সবাই-ই হিন্দু। যিনি যে পেশাতেই থাকুন, সবার আগে তাঁর পরিচয় তিনি হিন্দু। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে বিচারপতি শুধুমাত্র মুসলিমদের ধর্মীয় আইনের কথাই তোলেন। তিন তালাক, বহুবিবাহ, হালালা ইত্যাদির প্রসঙ্গ তুলে দাবি করেন, হিন্দু ধর্মে মেয়েদের দেবী হিসেবে দেখানো হয়েছে। সেখানে মেয়েদের প্রতি অসম্মানের স্থান নেই। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কেবল গেরুয়া শিবিরের স্লোগান নয়, সংবিধানেও সেই আদর্শের কথাই বলা আছে বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি।
এমআইএম সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়েইসি বিচারপতির কথার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ অতীতে একাধিক বার নিষিদ্ধ হয়েছে। এ রকম একটি ধর্মীয় সংগঠনের অনুষ্ঠানে একজন বিচারপতির যাওয়াটাই দুর্ভাগ্যজনক। এ রকম বিচারপতির কাছে কোনও সংখ্যালঘু কি সুবিচারের আশা করতে পারবেন? তিনি যা বলেছেন, তা খণ্ডন করা কঠিন নয়। কিন্তু তার চেয়েও বেশি দরকার তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া যে, সংবিধান বিচারবিভাগের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতার কথা বলে। সংবিধান গণতন্ত্রের কথা বলে, যেখানে সংখ্যালঘুর অধিকার সুরক্ষিত।’’ সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখে এ বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অল ইন্ডিয়া লইয়ার্স ইউনিয়নও বিচারপতির কথার প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রবীণ আইনজীবী রেবেকা জন বলেছেন, ‘‘কলেজিয়াম এ রকম এক জনকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করল কী করে? ইনি যা বলেছেন, তা সংবিধানের প্রতি আঘাত, ইমপিচমেন্টযোগ্য অপরাধ।’’ অনেকেই তাঁরা মনে করাচ্ছেন, বিচারপতি যাদব আগেও বিতর্কিত পদক্ষেপ করেছেন। কখনও রাম আর কৃষ্ণকে সম্মান দেখানো বাধ্যতামূলক করার জন্য আইন আনার কথা বলেছেন, কখনও গোরক্ষাকে মৌলিক অধিকারের অঙ্গ করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy