নতুন সংসদ ভবন। —ফাইল চিত্র।
অধিবেশন বসেছে সবে চার দিন। তার মধ্যেই বিতর্কের কেন্দ্রে নতুন সংসদ ভবন। এই ভবনকে দমবন্ধকর একটি গোলকধাঁধা বলে উল্লেখ করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের সাংসদ জয়রাম রমেশের কথায়, “নতুন সংসদ ভবনের নাম হওয়া উচিত মোদী মাল্টিপ্লেক্স বা মোদি ম্যারিয়ট।” পাল্টা বিজেপির বক্তব্য, এ হল কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রের প্রতি হতাশার বহিঃপ্রকাশ।
গত মঙ্গলবার গণেশ পুজোর দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে অধিবেশন শুরু হয় নয়া সংসদ ভবনে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের আমলে তৈরি হওয়া নতুন সংসদ ভবন কেমন হবে তা নিয়ে গোড়া থেকেই আগ্রহ ছিল শাসক-বিরোধী সব শিবিরে। বিজেপি কর্মী-সমর্থক বা নেতারা নতুন সংসদ ভবন ঘিরে উচ্ছ্বসিত হলে কী হবে আজ এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ। তিনি লেখেন, “বহুল প্রচারের মাধ্যমে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন আসলে নরেন্দ্র মোদীর প্রকৃত উদ্দেশ্যকেই তুলে ধরেছে। ওই ভবনের নাম
হওয়া উচিত মোদী মাল্টিপ্লেক্স বা মোদী ম্যারিয়ট।”
সম্প্রতি সংসদের বিশেষ অধিবেশন চলে চার দিন। সেই চার দিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রমেশ বলেন, “অতীতে সংসদের দুই কক্ষের মধ্যে মত বিনিময়ের যে প্রক্রিয়া ছিল তার সলিল সমাধি হয়েছে। যদি কোনও স্থাপত্য গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয় তা হলে প্রধানমন্ত্রী সংবিধান নতুন করে না লিখেই তা করতে সক্ষম হয়েছেন।” জয়রামের অভিযোগ, অধিবেশন কক্ষগুলি এতটাই ছড়ানো যে এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত দেখতে দূরবিনের প্রয়োজন। সাংসদ হিসাবে কেবল জয়রাম নন একই মত সাংবাদিকদেরও। পুরনো ভবনে মাইক ছাড়াই বক্তাদের কথা উপরে বসে শুনতে পেতেন সাংবাদিকেরা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মাইক একমাত্র ভরসা। কংগ্রেসের আর এক সাংসদ প্রমোদ তিওয়ারির দাবি, নতুন ভবনের বাতানুকূল ব্যবস্থাও অবৈজ্ঞানিক। যে কারণে অন্তত ৫০ জন সাংসদ অধিবেশন চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর মতে, চেয়ার ও টেবিলের মধ্যে এতটাই দূরত্ব যে, পিছনের আসনে ঠেস দিয়ে বসা সমস্যার। তিওয়ারির কথায়, “আসলে নরেন্দ্র মোদী এতটাই আমেরিকা দ্বারা প্রভাবিত যে নতুন সংসদ ভবনটিকে তিনি সাত তারা হোটেল বানাতে চেয়েছেন। সেখানে পুরনো ভবনটি অনেক বেশি বৈজ্ঞানিক, বাস্তবসম্মত।”
জয়রামের মতে, পুরনো সংসদ ভবনের নিজস্ব একটি গরিমা যেমন ছিল তেমনই দুই কক্ষ, সেন্ট্রাল হল ও করিডোরের মধ্যে অনায়াস যাতায়াতে পারস্পরিক আলাপচারিতা সেরে ফেলা সম্ভব হত। সংসদ সুষ্ঠু ভাবে চলার জন্য দু’কক্ষের মধ্যে যে সমন্বয়ের প্রয়োজন, তা কোনও ভাবেই নতুন সংসদ ভবনে হওয়া সম্ভব নয় বলেই মত জয়রামের। পুরনো ভবন যেখানে অনেক খোলামেলা ছিল সেখানে নতুন ভবনটি একটি গোলকধাঁধা এবং দমবন্ধকর বলে আক্ষেপ জয়রামের। আগামী দিনে তিনি আবার পুরনো সংসদ ভবনে ফিরে যেতে চান বলে মন্তব্য করে জয়রাম বলেছেন, “পুরনো সংসদ ভবনে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ ছিল। সচিবালয়ের কর্মীরাও জানিয়েছেন, ওই ভবন নির্মাণের সময়ে তাঁদের কোনও পরামর্শ নেওয়া হয়নি।” জয়রামের আশা, ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের পরে ক্ষমতা পরিবর্তন হলে নতুন ভবনকে ঠিক ভাবে ব্যবহার করা হবে।
স্বভাবতই নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের প্রকল্প নতুন সংসদ ভবনকে কেন্দ্র করে বিরোধী সাংসদদের ওই কটাক্ষ আদৌ ভাল ভাবে নেয়নি শাসক শিবির। জয়রামের বক্তব্যের জবাবে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা বলেন, “এই মন্তব্য দেশের ১৪০ কোটি মানুষের অপমান। তবে এই প্রথম বার কংগ্রেস সংসদীয় প্রথার বিরোধিতা করল এমন নয়। ১৯৭৫ সালে তাঁরা চেষ্টা করেছিল কিন্তু প্রবল ভাবে ব্যর্থ হয়।” আর বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, “জয়রামের ওই দুঃখ আসলে পরিবারতন্ত্রের প্রতি হতাশার বহিঃপ্রকাশ। এক সময়ে যা তাঁদের জায়গির বলে মনে করত, তা হারিয়ে ফেলার দুঃখেই ওই কথা বলেছেন। এক সময়ে তাঁদের নেতা লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমার বলেছিলেন, পুরনো সংসদে জায়গার অভাব রয়েছে। কিন্তু এখন দলের শীর্ষ নেতাদের কথায় অন্য কথা বলছেন জয়রাম। এই ভবন হল নতুন ভারতের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। মহিলা সংরক্ষণ বিল আইনে পরিণত হলে ওই সংসদ মহিলা সাংসদের ঠিকানা হতে চলেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy