গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
মহারাষ্ট্রে ৭০ হাজার কোটি টাকার সেচ দুর্নীতি কাণ্ডে আজ সংশ্লিষ্ট ন’টি মামলার তদন্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল সে রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখা। বিরোধীদের অভিযোগ, ওই নয়টি মামলাতেই অভিযুক্ত ছিলেন এনসিপি নেতা অজিত পওয়ার। বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে অজিত উপমুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আড়াই দিনের মধ্যে ওই অভিযোগগুলি থেকে তাঁকে ছাড় দেওয়া হল বলে সরব হন বিরোধীরা। শোরগোল শুরু হওয়ায় দুর্নীতি দমন শাখা জানিয়েছে, ২০১৩ সালের সেচ দুর্নীতিতে অজিত পওয়ারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কোনওটির তদন্ত বন্ধ হয়নি।
বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়ে আলোড়ন ফেলে দেন অজিত। একে বিশ্বাসঘাতকতা আখ্যা দিয়ে ভাইপোর বিরুদ্ধে সরব হন কাকা শরদ পওয়ার। বিরোধীদের অভিযোগ, সেই বিশ্বাসঘাতকতার পুরস্কার পেলেন অজিত। বিদর্ভ অঞ্চলের অমরাবতী, ওয়াসহিম, বুলধন এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে যে ৯টি সেচ দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছিল, সেই মামলার তদন্ত আজ বন্ধ করে দিয়েছে দুর্নীতি দমন শাখা। তবে দুর্নীতি দমন শাখার এক কর্তার বক্তব্য, প্রয়োজনে সেচ দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ফের তদন্ত শুরু করা যেতে পারে। বিরোধীদের অভিযোগ, মামলাগুলিতে অভিযুক্ত হিসেবে নাম ছিল অজিতের। সেনা মুখপাত্র প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীর মন্তব্য, ‘‘তদন্ত বন্ধ। দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ। ক্ষমতায় থাকার নির্লজ্জ প্রয়াস।’’
পাঁচ বছর আগে মহারাষ্ট্রে বিজেপি সরকার আসার পরেই নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছিল অজিতের বিরুদ্ধে। গত এক বছরে ওই মামলায় গতি বাড়ায় দুর্নীতি দমন শাখা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একাধিকবার ডাকা হয় অজিতকে। ফলে বেশ কিছু দিন ধরেই চাপ বাড়ছিল তাঁর উপরে। এনসিপি শিবিরের বক্তব্য, অজিতের দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে বিজেপি। সরকার গড়তে সাহায্য করলে তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ তুলে নেওয়া হবে, সম্ভবত সেই শর্তেই অজিত বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘বিজেপি ও অজিত পওয়ারের সরকার জনতার স্বার্থে প্রথম যে পদক্ষেপ করল, তা হল দুর্নীতির তদন্ত বন্ধ করা। এতে আমরা অবাক হচ্ছি না।’’ যদিও দুর্নীতি দমন শাখার ডিজি পরমবীর সিংহের দাবি, ‘‘যে ৯টি ক্ষেত্রে তদন্ত বন্ধ হয়েছে, তার একটিতেও অজিত পওয়ারের নাম ছিল না। অন্য অভিযোগগুলির তদন্ত যথারীতি চলছে।’’
১৯৯৯ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের সেচমন্ত্রী থাকার সময়ে ৩৮টি প্রকল্পের ছাড়পত্র দিয়েছিলেন অজিত। অভিযোগ উঠেছিল, ওই প্রকল্পগুলির জন্য বিদর্ভ ইরিগেশন ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়া দূরে থাক, উল্টে দরপত্রের নিয়মকানুনে প্রয়োজন মতো পরিবর্তন করে সম্মতি দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ হওয়া সত্ত্বেও দশ বছরে এক শতাংশ জমিও সেচের আওতায় আসেনি। প্রকল্পের ব্যর্থতার জন্য অভিযোগের আঙুল ওঠে তৎকালীন সেচমন্ত্রী অজিত পওয়ারের বিরুদ্ধে। জনগণের ওই বিপুল পরিমাণ অর্থের নয়ছয়ের বিরুদ্ধে সে সময়ে সরব হয় বিজেপি-শিবসেনা। যদিও ২০১২ সালে কংগ্রেসের পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেই ক্লিনচিট দেন অজিতকে। সিএজি অবশ্য ২০১৩ সালে অসমাপ্ত প্রকল্পগুলির জন্য মহারাষ্ট্র সরকারের সেচ দফতরের তীব্র সমালোচনা করে রিপোর্ট দিয়েছিল। ২০১৪ সালে দেবেন্দ্র ফডণবীসের নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে নতুন করে তদন্ত শুরু করে। এ বার সেই ফডণবীস সরকারই ক্লিনচিট দিল অজিতকে, ঘটনাচক্রে যিনি রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy