২০২৩-এর শেষ থেকেই মসজিদ তৈরির কাজে হাত লাগানো হতে পারে। ফাইল চিত্র ।
তিন বছর ধরে থমকে থাকার পর থেকে এই বার হাত দেওয়া হতে পারে অযোধ্যার মসজিদ তৈরির কাজে। এটিই হতে চলেছে বাবরি মসজিদের বিকল্প মসজিদ। ২০১৯ সালে রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ জমি বিরোধ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির নির্মাণের অনুমতি দেয়। পাশাপাশি শীর্ষ আদালত নতুন মসজিদ তৈরির জন্য উত্তরপ্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি বরাদ্দ করারও নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ মেনে সরকারের তরফে ফৈজাবাদ জেলার ধন্নিপুরে মসজিদ তৈরির জমি বরাদ্দ করা হয়। মসজিদ তৈরির দায়িত্ব আসে ‘ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন’-এর উপর। ‘ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন’ হল ১৫ সদস্যের ট্রাস্ট।
মসজিদ ট্রাস্টের তরফে তড়িঘড়ি ওই জমি দশ ফুট উঁচু কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়। জমির বাইরে বোর্ডে ফলাও করে মসজিদের অত্যাধুনিক নকশার ছবিও লাগানো হয়। কিন্তু ওই অবধিই। তখন থেকে ওই জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। নতুন মসজিদ কমপ্লেক্স তো দূর অস্ত, একটি ইট, বালি, সিমেন্টের কণা পর্যন্ত ওই জায়গায় নেই। তবে মসজিদ ট্রাস্টের কাজ শীঘ্রই শুরু হতে পারে বলে সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’র প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গিয়েছে।
‘ইন্ডিয়া টুডে’র সঙ্গে কথা বলার সময়, অযোধ্যা কমিশনার তথা অযোধ্যা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভাইস-চেয়ারপার্সন বিশাল সিংহ এবং ‘ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন’-এর সেক্রেটারি আতহার হুসেন উভয়েই জানিয়েছেন যে, লখনউ-ফৈজাবাদ জাতীয় সড়কের কাছে ধন্নিপুরের প্রস্তাবিত মসজিদের নির্মাণকাজ শীঘ্রই শুরু হতে পারে।
আতহার হুসেন বলেন, “আমরা অযোধ্যা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমি ব্যবহারের অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিলাম। সেই অনুমোদন অবশেষে পাওয়া গিয়েছে। এখনও এই অনুমোদনপত্র আমাদের হাতে এসে পৌঁছয়নি। তবে আমাদের স্থানীয় ট্রাস্টের সদস্য আরশাদ এটি সংগ্রহ করেছেন।’’
তা হলে এখনও আর কী কী বাধা রয়েছে মসজিদ তৈরি শুরু করতে? আতহার বলেন, “এখন শুধু দমকল বিভাগের ছাড়পত্র পাওয়া বাকি। আমাদের তরফে দমকল বিভাগে পাঠানো কাগজ দু’মাস আগে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। তবে আমরা সেই কাগজ পাল্টিয়ে আবারও পাঠিয়েছি। ওয়াকফ বোর্ড উত্তরপ্রদেশের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে জমি পেয়েছে। প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আরও জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি, এই মাসের শেষের দিকে সে সবও মিটবে। তার পরেই শুরু হবে নির্মাণ কাজ।’’
অর্থাৎ আশা করা যাচ্ছে যে, ২০২৩-এর শেষ থেকেই মসজিদ তৈরির কাজে হাত লাগানো হতে পারে।
আতহার জানান, কোনও গম্বুজ বা মিনারবিহীন ডিম্বাকৃতির দোতলা এই মসজিদটি হবে সৌরশক্তিচালিত।
আতহার আরও জানান, শুধু মসজিদই নয়, মসজিদ চত্বরে একটি ২০০ শয্যার হাসপাতালও তৈরি করা হবে। মোট বরাদ্দের ১০ শতাংশ দিয়ে শুধু মসজিদ তৈরি হবে। তিনি যোগ করেন, ‘‘প্রথম পর্যায়ে আমরা মসজিদ এবং হাসপাতাল নির্মাণে ১০০ কোটি ব্যয় করব। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে শুধু মাত্র হাসপাতালকে আধুনিক ভাবে তৈরি করতে।’’ প্রথমে ওই হাসপাতালে ১০০ শয্যা থাকলেও পরবর্তী কালে শয্যা আরও বাড়ানো হবে। অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুদের এবং মহিলাদেরও চিকিৎসা করবে এই হাসপাতাল৷
হাসপাতালের পাশাপাশি মসজিদ চত্বরে ইন্দো-ইসলামিক গবেষণা কেন্দ্র, ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের একটি আর্কাইভ-সহ লাইব্রেরি এবং একটি কমিউনিটি রান্নাঘর থাকবে। এই রান্নাঘরে প্রায় দু’হাজার জনের রান্না-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে বলেও আতহার জানিয়েছেন।
অন্য দিকে, অযোধ্যা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তরফে সংবাদমাধ্যমে বিশাল জানিয়েছেন, ওই জমি অযোধ্যা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে আছে। একটি ‘মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি না হলে, এই কৃষিজমি অন্য কোনও কাজে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, “উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বোর্ড জমির ব্যবহারিক ক্ষেত্র পরিবর্তনের অনুমতি দিয়েছে এবং চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কাগজপত্র উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। মসজিদ ট্রাস্টও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতিপত্র পেয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে জমি ব্যবহারের ছাড়পত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদ নির্মাণ শুরু হবে।’’
অযোধ্যা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মসজিদ নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসন-সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দফতরের কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন।
অন্য দিকে, রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পট রায় অক্টোবরে জানিয়েছিলেন যে, মন্দিরের নির্মাণকাজ ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২০ সালের অগস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন্দিরের ‘ভূমিপুজো’ করেন। এখন যে জমিতে রামমন্দির, ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বরের আগে সেই জমিতেই ছিল বাবরি মসজিদ।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর হিন্দু করসেবকরা মিলে মুঘল জমানার গোড়ার দিকে তৈরি বাবরি মসজিদ ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। অভিযোগ ছিল, রীতিমতো পরিকল্পনা করেই শাবল-গাঁইতি নিয়ে জড়ো হয়ে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। এই ঘটনা নিয়ে সারা দেশে হইচই পড়ে। জমি কাদের, তা নিয়ে মামলা গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট অবধি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy