(বাঁ দিক থেকে) অরবিন্দ কেজরীওয়াল, রাহুল গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খড়্গে। —ফাইল চিত্র।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করল কংগ্রেস। বুধবার কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদদের হুইপ দেওয়া হয়েছে, দিল্লির আমলাদের ‘রাশ’ হাতে রাখার জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকারের জারি করা অর্ডিন্যান্স (অধ্যাদেশ) স্থায়ী বিল হিসাবে পেশ করা হলে, তার বিরুদ্ধে ভোট দিতে হবে। বৃহস্পতিবার বিলটি রাজ্যসভায় পেশের জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। বিতর্ক এবং ভোটাভুটির সময় রাজ্যসভার সব কংগ্রেস সাংসদকে হাজির থাকারও ‘হুইপ’ দেওয়া হয়েছে দলের তরফে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতার রাশ হাতে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) জারি করেছিল শীর্ষ আদালতেই তা চ্যালেঞ্জ করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টি (আপ)-র প্রধান কেজরীওয়াল। গত ৩০ জুন দিল্লি সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল। কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্সের জেরে দিল্লির ‘ইলেক্ট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন’-এর চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে বলে সরকার পক্ষের তরফে অভিযোগ করায় ১৭ জুলাই ‘আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্রের সন্ধান করার’ কথা বলে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
পাশাপাশি, জানানো হয়, যে হেতু কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ২৩৯এএ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অর্ডিন্যান্স জারি করেছে, তাই সাংবিধানিক বেঞ্চে শুনানি স্থানান্তরিত হওয়া উচিত। এর পর গত ২০ জুন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ কেন্দ্রের ওই বির্তকিত অর্ডিন্যান্স সংক্রান্ত মামলাটি পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠিয়েছিল। সেই সাংবিধানিক বেঞ্চেই বিষয়টি এখন বিচারাধীন। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, অর্ডিন্যান্সের সাংবিধানিক বৈধতা খতিয়ে দেখা হবে। সেই সঙ্গে যাচাই করা হবে, এ বিষয়ে সংসদের অধিকারের সীমাও। এরই মধ্যে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতার রাশ হাতে রাখার জন্য যে অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল, সংসদের বাদল অধিবেশনের তা পাশ করিয়ে পুরদস্তুর আইনের চেহারা দেওয়ার জন্য বাদল অধিবেশনে বিল পেশ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১১ মে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছিল, আমলাদের রদবদল থেকে যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে দিল্লির নির্বাচিত সরকারের। এর পর হঠাৎ গত ১৯ মে গভীর রাতে অর্ডিন্যান্স এনে ১০ পাতার গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তাতে বলা হয়, ‘জাতীয় রাজধানী সিভিল সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হচ্ছে। আমলাদের নিয়োগ ও বদলির ব্যাপারে তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। অধ্যাদেশে জানানো হয়, (দিল্লির) মুখ্যমন্ত্রী হবেন এর চেয়ারপার্সন। সদস্য হিসেবে থাকবেন মুখ্যসচিব এবং প্রিন্সিপাল স্বরাষ্ট্রসচিব। নিয়োগ ও বদলি সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত এই কর্তৃপক্ষ ভোটাভুটির মাধ্যমে চূড়ান্ত করবেন। মতবিরোধ হলে শেষ কথা বলবেন উপরাজ্যপাল।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে প্রশাসনিক ক্ষমতার রাশ হাতে রাখার জন্য মোদী সরকারের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে গত দু’মাস ধরে ধারাবাহিক ভাবে ‘সক্রিয়তা’ দেখিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল। রাজ্যে রাজ্যে ঘুরে কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতায় অবিজেপি দলগুলির সমর্থন চেয়েছেন তিনি। আবেদন জানিয়েছেন, ওই অর্ডিন্যান্সকে স্থায়ী রূপ দিতে মোদী সরকার সংসদে বিল আনলে বিরোধী দলগুলি যেন ঐক্যবদ্ধ ভাবে তার বিরোধিতা করে। মে মাসেই নবান্নে এসে মমতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন কেজরী। তৃণমূল-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের তরফে সহায়তার আশ্বাস মিললেও প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেস অর্ডিন্যান্স বিতর্কে কেজরীর পাশে দাঁড়ায়নি। শেষ পর্যন্ত বেঙ্গালুরুতে বিরোধী নেতৃত্বের বৈঠকের আগে গত ১৬ জুলাই কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেয়, বিতর্কিত ওই অর্ডিন্যান্সকে ‘স্থায়ী’ আইনে পরিণত করতে মোদী সরকার সংসদে বিল আনলে তার বিরোধিতা করা হবে। এর পরেই কেজরী জানিয়েছিলেন ১৭-১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুর বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy