Advertisement
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Congress-TMC

রাহুল-যাত্রায় কংগ্রেস পাশে চায়, এখনও বিরূপ তৃণমূল 

তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রেও কংগ্রেস হাই কমান্ড ‘খোলা মনে, উদার ভাব নিয়ে’ এগোতে চাইছে।

Mamata Banerjee and rahul gandhi.

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২১
Share: Save:

রাজ্য স্তরে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে অধীররঞ্জন চৌধুরীর রোজই বাগযুদ্ধ চলছে। দু’পক্ষই একে অপরকে বিজেপির দালাল বলে আক্রমণ করছে। এই আবহের মধ্যে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছেন, রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা যখন পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে যাবে, তখন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব তাতে অংশ নিন।

তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রেও কংগ্রেস হাই কমান্ড ‘খোলা মনে, উদার ভাব নিয়ে’ এগোতে চাইছে। কংগ্রেস নেতৃত্বের ধারণা, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস একজোট হতে না পারলেও কংগ্রেসের সঙ্গে আলাদা ভাবে তৃণমূল ও সিপিএমের আসন সমঝোতা হওয়া সম্ভব। সব পক্ষকে ইতিবাচক মনোভাব নিতে হবে। কংগ্রেস এ বিষয়ে দুই শিবিরের সঙ্গেই কথা বলবে।

১৪ জানুয়ারি থেকে মণিপুর থেকে শুরু হচ্ছে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা। আজ কংগ্রেসের বৈঠকে চূড়ান্ত হওয়া যাত্রাপথে ২৭-২৮ জানুয়ারি নাগাদ পশ্চিমবঙ্গে কোচবিহার হয়ে রাহুল গান্ধীর বাস ঢুকবে। পাঁচ দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের সাতটি জেলার মধ্যে দিয়ে ৫২৩ কিলোমিটার রাস্তা ধরে যাত্রা চলবে। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি হয়ে যাত্রা বিহারের আরারিয়া, পূর্ণিয়া জেলা ঘুরে আবার পশ্চিমবঙ্গে উত্তর দিনাজপুরে ঢুকবে। তার পরে মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত গিয়ে যাত্রা ঝাড়খণ্ডে চলে যাবে। রাহুলের বাস রাজ্যের খান দশেক লোকসভা কেন্দ্র ছোঁবে। দলীয় সূত্রের খবর, বাংলায় যে সব অঞ্চলে কংগ্রেস ভাল ফল করার আশা করছে, রাহুলের যাত্রাও সেখান দিয়েই যাচ্ছে। কলকাতা বা দক্ষিণ বঙ্গে আসছে না।

কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ জানিয়েছেন, বিরোধী মঞ্চ ইন্ডিয়া-র সমস্ত শরিক দলের শীর্ষ নেতানেত্রীদের যাত্রায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তাঁরা ইম্ফলে যাত্রা শুরুর সময় আসতে পারেন। যে রাজ্যের মধ্যে যখন যাত্রা হবে, তখন সেই রাজ্যের ইন্ডিয়ার শরিক দলগুলি আসতে পারে। কংগ্রেস শীর্ষ নেতারা এ নিয়ে শরিক দলের নেতানেত্রীদের সঙ্গে কথা বলবেন। রমেশ মনে করিয়ে দিয়েছেন, এর আগে ভারত জোড়ো যাত্রাতেও বিরোধী দলের নেতানেত্রীরা রাহুলের সঙ্গে পা মিলিয়েছিলেন।

তৃণমূল শিবির অবশ্য রাহুল গান্ধীর যাত্রায় অংশ নেওয়া নিয়ে ‘নেতিবাচক’ মনোভাব নিয়েই চলছে। তৃণমূল নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, রাহুলের যাত্রা মুর্শিদাবাদে যাচ্ছে। সেই মুর্শিদাবাদ থেকেই অধীর রোজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করছেন। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, আগে আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেস কথা বলুক। তার পরে বাকি ভাবনা। আজ কংগ্রেসের বৈঠকে দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেছেন, ইন্ডিয়া-র দলগুলি গোটা দেশে ৮ থেকে ১০টি বড় জনসভা করবে। এই প্রসঙ্গেও তৃণমূল নেতারা বলছেন, আগে আসন সমঝোতা। তার পরে যৌথজনসভার ভাবনা।

কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করে ফেলার চেষ্টা হবে। আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেসের তৈরি জাতীয় জোট কমিটির সদস্যরা আজ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে তাঁদের রিপোর্ট পেশ করেছেন। ওই কমিটি পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে গত কয়েক দিনে কথা বলে আসন সমঝোতা নিয়ে তাঁদের মনোভাব জেনে নিয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা প্রথমে খড়্গে-রাহুলের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা অন্তত ন’টি আসনে নিজেদের শক্তিতে ভাল ভাবে লড়তে তৈরি। নীতিগত ভাবে রাজ্যের পরিস্থিতির নিরিখে তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতায় যেতে চান না। তবে কংগ্রেসকে ছয় থেকে সাতটি আসন তৃণমূল ছেড়ে দিলে তাঁদের আসন সমঝোতায় আপত্তি নেই। এ বার কংগ্রেসহাই কমান্ড জাতীয় ও রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচার করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন।

জোট কমিটি রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়া-র শরিকদের সমর্থন নিয়ে কংগ্রেস ৩ থেকে ৫টি আসনে ভাল ভাবে লড়তে পারে। তৃণমূল সূত্রের যুক্তি, কোনও সূত্র মেনেই কংগ্রেসকে ২টি আসনের বেশি ছাড়া উচিত নয়।

কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, তৃণমূল হোক বা আম আদমি পার্টি, কোনও দলের সঙ্গেই আসন সমঝোতা নিয়ে রাজ্যের নেতাদের মত অগ্রাহ্য করা হবে না। কিন্তু সিদ্ধান্ত হবে লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে। মোদী সরকারকে হটানোর মূল উদ্দেশ্যকে প্রাধান্য দিয়ে। পশ্চিমবঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে জোটে আপত্তির কথা জানালেও সিদ্ধান্ত হাই কমান্ডের উপরে ছেড়ে দিয়েছে। আসন সমঝোতা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাই কমান্ডের কথা বলা নিয়েও অধীর চৌধুরীদের আপত্তি নেই। এমন নয় যে, কংগ্রেসকে আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে তৃণমূল বা বামেদের মধ্যে যে কোনও এক পক্ষকে বেছে নিতে হবে। সিপিএম তৃণমূলের সঙ্গে বসতে রাজি না হলেও কংগ্রেস দুই শিবিরের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলতে পারে। দুই পক্ষের সঙ্গে আলাদা ভাবে আসন সমঝোতা হতে পারে। কংগ্রেসের জোট কমিটির আহ্বায়ক মুকুল ওয়াসনিক বলেন, ‘‘শরিক দলগুলির সময় পেলেই খুব শীঘ্র আমরা কথা বলা শুরু করে দেব। সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে কথা বলব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul Gandhi Bharat Jodo Nyay Yatra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE