Advertisement
১৮ জানুয়ারি ২০২৫
Mamata Banerjee

‘ইন্ডিয়া’র নেতৃত্ব পেলে...,মমতার মন্তব্যে চাপে কংগ্রেস

এমনিতেই হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে জোড়া হারের পরে কংগ্রেস অস্বস্তিতে। অখিলেশ যাদব, অরবিন্দ কেজরীওয়ালরা কংগ্রেসকে বেশি রেয়াত করতে চাইছেন না।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১১
Share: Save:

সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে দু’সপ্তাহ কেটে গেলেও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের দফতরে বিরোধী দলগুলির প্রতি দিনের বৈঠকে যায়নি তৃণমূল। আদানি ঘুষ কাণ্ড নিয়ে সংসদের ভিতরে-বাইরে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিক্ষোভেও যোগ দেয়নি তারা। এ বার বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’য় তিনি চাইলেই নেতৃত্ব দিতে পারেন বলে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বকে আরও চাপে ফেলে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এমনিতেই হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে জোড়া হারের পরে কংগ্রেস অস্বস্তিতে। অখিলেশ যাদব, অরবিন্দ কেজরীওয়ালরা কংগ্রেসকে বেশি রেয়াত করতে চাইছেন না। তার উপরে মমতা নিজে ‘ইন্ডিয়া’র নেতৃত্ব দেওয়ার কথা বলায় কংগ্রেস অস্বস্তিতে পড়ল। তৃণমূলনেত্রীর এই মন্তব্যকে স্বাগত জানানো হবে না কি সমালোচনা করা হবে, সেটাই ঠিক করতে পারল না কংগ্রেস। ফলে কংগ্রেস নেতারা এক-এক জন এক-এক সুরে প্রতিক্রিয়া জানালেন। কেউ বললেন, মমতা সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে কিছু মন্তব্য করেছেন। কেউ আবার পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যে তৃণমূলের কোনও শক্তি নেই, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেসের পদস্থ মুখপাত্ররা কেউ মুখ খোলেননি। অন্য দিকে, সমাজবাদী পার্টি, শরদ পওয়ারের এনসিপি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘উদ্যোগ’-কে স্বাগত জানিয়েছে।

হরিয়ানার পরে মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের হার এবং পশ্চিমবঙ্গে ছ’টি উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের পরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তৃণমূল সাংসদেরা দাবি তুলেছিলেন, মমতার হাতে ‘ইন্ডিয়া’র নেতৃত্ব তুলে দেওয়া উচিত। শুক্রবার রাতে একটি সাক্ষাৎকারে মমতা ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ সম্পর্কে বলতে গিয়ে মন্তব্য করেন, ‘‘আমি তো ইন্ডিয়া জোট তৈরি করে দিয়েছিলাম।” বিরোধী জোটের বর্তমান ছন্নছাড়া অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমি তো সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছি না। যাঁরা নেতৃত্বে, তাঁদের এটা দেখা উচিত।’’ তাঁর সঙ্গে সমস্ত আঞ্চলিক ও জাতীয় দলের যোগাযোগ রয়েছে বলেও জানান মমতা। তাঁর নেতৃত্ব দেওয়া প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘আমি দায়িত্ব পেলে এ টুকু বলতে পারি… যদিও আমি তা চাই না...কিন্তু এ টুকু আমি মনে করি, এখানে বসেও আমি এটা চালিয়ে দিতে পারি।’’

তৃণমূলনেত্রীর এই মন্তব্য শুনে এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার বলেন, ‘‘মমতা দেশের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। তিনি দায়িত্বশীল লোকদের সংসদে পাঠান। ফলে এ কথা বলার অধিকার তাঁর আছে।’’ তাঁর কন্যা সুপ্রিয়া সুলের কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়া জোটের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। উনি যদি আরও দায়িত্ব নিতে চান, আমরা খুবই আনন্দিত হব।’’ ওই দলেরই রাজ্যসভা সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীর মতে, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার সফল মডেল তুলে ধরেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, লড়াইয়ের ইচ্ছা থেকে তিনি আগ্রহ দেখিয়েছেন। ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক হলে এ বিষয়ে শীর্ষনেতারা কথা বলবেন।’’ উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘‘আমরা চাই, উনি ইন্ডিয়া জোটের গুরুত্বপূর্ণ শরিক হিসেবে থাকুন। আমরা খুব শীঘ্র কলকাতা গিয়ে ওঁর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব।’’ সমাজবাদী পার্টির জাতীয় মুখপাত্র উদয়বীর সিংহের মতে, ‘ইন্ডিয়া’য় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত নিয়ে আলোচনা করা উচিত। এতে জোট মজবুত হবে। সমাজবাদী পার্টির ‘একশো শতাংশ’ সমর্থন মমতার সঙ্গে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন উদয়বীর।

অন্য দিকে, বিজেপির নেতা তরুণ চুঘের কটাক্ষ, ‘‘পরস্পরের সঙ্গে মিশ খায় না, এমন সব দলের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই এটা। কংগ্রেস এবং রাহুল গান্ধী অন্যদের বোঝা। রাহুলের বারে তো জোট নুইয়ে পড়েছে।’’

লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘ইন্ডিয়া’ তৈরি হলেও তার কোনও সভাপতি বা আহ্বায়ক নিয়োগ করা হয়নি। কংগ্রেসই মূলত জোটে সমন্বয়ের কাজ করে। গত ডিসেম্বরে দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে মমতাই মল্লিকার্জুন খড়্গের নাম ওই মঞ্চের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাতে কংগ্রেস যেমন চমকে গিয়েছিল, মমতার এ বারের মন্তব্যেও কংগ্রেস তেমনই চমকে গিয়েছে। কংগ্রেসের প্রবীণ সাংসদ তারিক আনোয়ার বলেছেন, ‘‘ইন্ডিয়া জোটে অনেক দল রয়েছে। কে নেতৃত্ব দেবেন, তা সবাই মিলে ঠিক করা হবে।’’ কংগ্রেস নেতা উদিত রাজ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গের বাইরে শিকড় ছড়াতে চেয়েছিল। যথেষ্ট চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফল হয়নি। যিনি পশ্চিমবঙ্গের বাইরে দলকে নিয়ে যেতে পারেননি, তিনি কী ভাবে জাতীয় স্তরে লড়বেন? কী ভাবে তিনি নেতৃত্ব দেবেন?” আর ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস নেতা রাজেশ ঠাকুরের ব্যাখ্যা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে কিছু বলেছেন। কোনও রাজনৈতিক নেতানেত্রীই বলবেন না যে তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নেই। মমতা যদি ‘ইন্ডিয়া’র নেতাদের এ বিষয়ে কিছু বলেন, তখন তাঁরা নিশ্চয় এ বিষয়ে আলোচনা করবেন।

অন্য বিষয়গুলি:

INDIA Alliance Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy