পেগাসাস নিয়ে সংসদ ও সুপ্রিম কোর্টকে ভুল পথে চালিত করার জন্য মোদী সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের অভিযোগ উঠল।
রবিবার লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লিখে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের প্রক্রিয়া শুরুর দাবি তুলেছেন। সোমবার থেকেই সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, তার ঠিক আগের দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের অভিযোগ এনে মোদী সরকারের উপরে আগেই চাপ তৈরি করে রাখা হল। পেগাসাস নিয়ে মোদী সরকার আগের মতোই মুখে কুলুপ এঁটে থাকার কৌশল নিয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বও মুখে রা কাড়ছেন না। বিরোধীরা সংসদে খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করার কৌশল নিতে চাইছেন।
পেগাসাস নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকার বেআইনি ভাবে ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। কিন্তু পেগাসাস কিনেছিল কি না, তা স্পষ্ট করে বলেনি। এর পরে সুপ্রিম কোর্ট নিজেই এ বিষয়ে তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করেছে। আজ আইনজীবী এম এল শর্মা জানিয়েছেন, তিনি সুপ্রিম কোর্টের কাছে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর ভি রবীন্দ্রনের নেতৃত্বে তৈরি সুপ্রিম কোর্টের কমিটি সম্প্রতি যে সব ব্যক্তির ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছিল, তাঁদের ফোন পরীক্ষা করানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
গত বছর জুলাই মাসে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, ইজ়রায়েল থেকে কেনা পেগাসাস সফ্টওয়্যার কাজে লাগিয়ে রাহুল গান্ধী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, আইনজীবী, নির্বাচন কমিশনার, সিবিআই-কর্তার ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে। বিরোধীদের তোপের মুখে সরকারের তরফে সংসদে বিবৃতি দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী সে সময়ে বলেছিলেন, এ সব ভারতের গণতন্ত্রকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা। তবে মোদী সরকার ইজ়রায়েল থেকে পেগাসাস কিনেছে, না কেনেনি, তা মন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেনি। এই অভিযোগ অস্বীকারও করেনি।
এ বার আমেরিকার সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ২০১৭-র ইজ়রায়েল সফরের সময়ই ২০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও পেগাসাস সফ্টওয়্যার কেনার চুক্তি হয়। আজ অধীর লোকসভার স্পিকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত সংবাদের পরে দেখা যাচ্ছে, মোদী সরকার সংসদ ও সুপ্রিম কোর্টকে ভুল পথে চালিত করেছে। দেশের মানুষকে মিথ্যা বলেছে।
সংসদে যে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করা হবে, তা বুঝিয়ে আজ কংগ্রেস নেতৃত্ব দাবি তুলেছেন, তাঁর সরকার নিষ্কলুষ হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পেগাসাস নিয়ে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দিন। রাজস্থানে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের বক্তব্য, কেন্দ্রকে বিষয়টি স্পষ্ট করতেই হবে। ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী সরকার বিরোধী শিবিরের নেতা থেকে বিচারপতিদের ফোনে আড়ি পেতেছে বলেই মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করারও সাহস নেই। বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৭-তেই ইজ়রায়েলের সঙ্গে পেগাসাস কেনার চুক্তি হয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই বছরই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের নেতৃত্বাধীন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয়ের বাজেট বরাদ্দ দশগুণ বেড়ে ৩৩৩ কোটি টাকা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী শনিবারই ভারত-ইজ়রায়েলের সম্পর্কে নতুন লক্ষ্য স্থির করার কথা বলেছিলেন। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম আজ প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘সত্যিই নতুন লক্ষ্য স্থির করার সময় ইজ়রায়েলকে জিজ্ঞাসা করা হোক, তাদের পেগাসাস স্পাইওয়্যারের কোনও অত্যাধুনিক রূপ রয়েছে কি না! শেষ বার ২০০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়েছিল। এ বার ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে ৪০০ কোটি ডলারের চুক্তি হতে পারে!’ পেগাসাস নিয়ে অভিযোগ অস্বীকার না করলেও মোদীর মন্ত্রিসভার সদস্য ভি কে সিংহ আমেরিকার নিউ ইয়র্ক টাইমসকে ‘সুপারি মিডিয়া’ বলে নিশানা করেছেন। চিদম্বরমের বক্তব্য, “উনিই আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে ‘প্রেসটিটিউটস’ বলেছিলেন। উনি কি কখনও নিউ ইয়র্ক টাইমস বা ওয়াশিংটন পোস্টের মতো সংবাদপত্র পড়েছেন? ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি ও পেন্টাগন পেপার্স ফাঁস করার পিছনে এদের ভূমিকা ওঁর জানা আছে কি না সন্দেহ রয়েছে। ইতিহাস না পড়ার ইচ্ছে থাকলে অন্তত সিনেমা দেখতে পারেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy