Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
State news

বিরাট চমক বাংলাকে! লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী

লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী হচ্ছেন, এ কথা এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেনি কংগ্রেস।

সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৯ ১৫:২৩
Share: Save:

বড়সড় চমক বাংলার জন্য। লোকসভায় বৃহত্তম বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা হচ্ছেন অধীররঞ্জন চৌধুরী। রবিবার সর্বদল বৈঠক শেষে নরেন্দ্র মোদী পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন বহরমপুরের সাংসদের, বলেছিলেন ‘অধীরদা বড় যোদ্ধা’। কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধীও সেই ‘যোদ্ধা’কে স্বীকৃতি দিতে ভুল করলেন না। মঙ্গলবার সকালে অধীরকে ডেকে পাঠিয়ে বৈঠক করলেন তিনি। বৈঠক শেষে লোকসভায় গিয়ে সেই আসনটায় বসলেন অধীর, যে আসনে গত পাঁচ বছর বসছিলেন মল্লিকার্জুন খড়্গে।

লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী হচ্ছেন, এ কথা এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেনি কংগ্রেস। কিন্তু অধীরের ঘনিষ্ঠ মহল তো বটেই, এআইসিসি-র নানা সূত্রও জানাচ্ছে যে, বহরমপুরের সাংসদকেই লোকসভায় নিজেদের দলনেতা হিসেবে বেছে নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড।

গত পাঁচ বছর যিনি লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা ছিলেন, সেই মল্লিকার্জুন খড়্গে এ বার আর জিততে পারেননি। গোটা দেশে কংগ্রেসের আরও অনেক রথী-মহারথী হেরে গিয়েছেন। তাই দীর্ঘ দিন ধরে লোকসভায় রয়েছেন, এমন সাংসদের সংখ্যা কংগ্রেস সংসদীয় দলে এ বার হাতে গোনা। সনিয়া গাঁধী নিজে লোকসভায় রয়েছেন ২০ বছর ধরে। অধীর চৌধুরীও রয়েছেন ২০ বছর ধরে। আর রাহুল গাঁধী রয়েছেন ১৫ বছর। লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হওয়ার পরে কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন হিসেবে সনিয়াকেই বেছে নেওয়া হয়। সেই বৈঠকে এ-ও স্থির হয় যে, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা কে হবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত সনিয়া গাঁধীই নেবেন। সনিয়া গাঁধী সিদ্ধান্তটা মঙ্গলবার নিয়ে নিলেন। অধীর চৌধুরীকে মঙ্গলবার সকালে ডেকে পাঠালেন ১০ জনপথের বাসভবনে। সেই বৈঠকেই অধীরকে এই নতুন দায়িত্বের কথা জানালেন। বৈঠক সেরে বেরিয়ে লোকসভায় কংগ্রেসের জন্য নির্ধারিত আসনের একেবারে সামনের সারিতে বসলেন অধীর।

পাঁচ বছর ধরে মল্লিকার্জুন খড়্গে যেখানে বসতেন আজ সেই আসনেই অধীর। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, লোকসভার সচিবালয়কে চিঠি দিয়ে সনিয়া গাঁধী ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, অধীর চৌধুরীই দলনেতা হয়েছেন। সেই চিঠি লোকসভার সচিবালয়ে পৌঁছেছে বলেই অধীর চৌধুরী বসতে পেরেছেন খড়্গের আসনটায়। তবে কংগ্রেসের তরফে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা তখনও হয়নি। আজ বিকেলেই আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রেস বিবৃতি দিয়ে অধীর চৌধুরীকে দলনেতা হিসেবে বেছে নেওয়ার কথা কংগ্রেস ঘোষণা করতে চলেছে বলে এআইসিসি সূত্রে জানা গিয়েছে।

আরও পড়ুন: যাঁরা দল ছাড়ার তাড়াতাড়ি ছাড়ুন, চোরেদের আমি দলে রাখব না: মমতা

বিরোধী দলের মর্যাদা পাওয়ার জন্য যে সংখ্যক আসন পাওয়ার দরকার হয়, কংগ্রেস তা পায়নি। ফলে লোকসভায় আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রধান বিরোধী দলনেতার মর্যাদা সম্ভবত অধীর চৌধুরী পাবেন না। কিন্তু লোকসভায় বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতা হওয়াও কম কথা নয়।

বাংলা থেকে এর আগে শুধুমাত্র প্রণব মুখোপাধ্যায় লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতার ভূমিকা পালন করেছেন। তখন অবশ্য কংগ্রেস বিরোধী পক্ষে ছিল না, শাসক দল ছিল। বিরোধী বেঞ্চে থাকা অবস্থায় এই প্রথম কোনও বাঙালি সাংসদ লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা মনোনীত হলেন।

আরও পড়ুন: লোকসভার স্পিকার হচ্ছেন অমিত-ঘনিষ্ঠ ওম বিড়লা?

কংগ্রেসের পুরনো সাংসদদের অধিকাংশই এ বার আর ফিরতে পারেননি লোকসভায়। সবচেয়ে পুরনো কংগ্রেস সাংসদ কমল নাথ এখন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, তাই লোকসভা ভোটে তিনি লড়েননি। আর এক প্রবীণ নেতা অমরেন্দ্র সিংহ এখন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী, তিনিও লোকসভায় লড়েননি। প্রণব মুখোপাধ্যায় অবসরে। মনমোহন সিংহ, এ কে অ্যান্টনি, পি চিদাম্বরম, গুলাম নবি আজাদরা রাজ্যসভায়। লোকসভায় রাহুল গাঁধীকে ঘিরে থাকত যে উজ্জ্বল ‘ইয়ং ব্রিগেড’, সেই ব্রিগেডও এ বার লোকসভার বাইরে। সচিন পায়লট রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, মিলিন্দ দেওড়া, সুস্মিতা দেব জিততে পারেননি। গৌরব গগৈ জিতেছেন, কিন্তু লোকসভায় তাঁর অভিজ্ঞতা মাত্র পাঁচ বছরের। তাই দলনেতা হিসেবে তাঁকে বেছে নেওয়ার কথা ভাবনাতেও আসেনি।

আরও পড়ুন: লিচুর বিষ, অপুষ্টি নাকি তাপপ্রবাহ, বিহারে শিশুমৃত্যুর কারণ নিয়ে ধন্দ চরমে

বার বার উঠে আসছিল বরং রাহুল গাঁধীর নাম। তাঁকেই লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা হিসেবে বেছে নেওয়া হোক, এআইসিসির অনেকেই সনিয়া গাঁধীকে এমন পরামর্শ দিচ্ছিলেন বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। কিন্তু ইতিমধ্যেই কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বসে থাকা রাহুল নিজে কিছুতেই রাজি হননি সে পদ নিতে। তাই অন্য কাউকে নেতা হিসেবে বেছে নেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়।

১৫ বছর ধরে লোকসভায় রয়েছেন শশী তারুর। কংগ্রেসের সুদিনে তো বটেই, দুর্দিনেও তাঁকে টলানো যায়নি তিরুঅনন্তপুরম আসনে। শুধু তাই নয়, শশী তারুরের বাগ্মিতাও প্রশ্নাতীত। তাই তারুরের নামও আলোচনায় উঠে এসেছিল। কিন্তু কখনও ব্যক্তিগত জীবন, কখনও বিভিন্ন মন্তব্যের কারণে বার বার বিতর্কে জড়িয়েছে তারুরের নাম। তাই তাঁকে নেতা হিসেবে বেছে নেওয়ার পথে আর হাঁটেনি কংগ্রেস।

টানা পাঁচ বার বহরমপুর থেকে জিতেছেন অধীর। কেন্দ্রে মন্ত্রিত্ব করেছেন, প্রদেশ কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করেছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে লোকসভায় সরব হয়েছেন এবং নানা বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। অধীরের এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং লোকসভায় তাঁর ধারাবাহিক সক্রিয়তা তাঁর সবচেয়ে বড় সহায় হয়েছে। যে ৫২ জন কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়ে লোকসভায় ঢুকেছেন এ বার, তাঁদের মধ্যে কাউকেই দলনেতার ভূমিকা পালনের জন্য অধীরের চেয়ে বেশি উপযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেননি সনিয়া-রাহুল।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Adhir Chowdhury Rahul Gandhi Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy