(বাঁ দিকে) কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং (ডান দিকে) এর্নাকুলমের কংগ্রেস সাংসদ হাইবি ইডেন। ছবি: সংগৃহীত।
আচমকা রাজধানী পরিবর্তনের দাবি! দলীয় সাংসদের সেই দাবি ঘিরেই অস্বস্তিতে কেরলের কংগ্রেস।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দফতর থেকে চিঠি এসেছে কেরলের বাম-শাসিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের কাছে। সেই চিঠি পেয়ে রাজ্য সরকার জানতে পেরেছে, এর্নাকুলমের কংগ্রেস সাংসদ হাইবি ইডেন তিরুঅনন্তপুরমের বদলে কোচিকে কেরলের রাজধানী করার প্রস্তাব দিয়েছেন। সংসদের বাজেট অধিবেশনে তিনি ওই মর্মে বেসরকারি বিল এনেছিলেন! এই বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করার জন্য রাজ্যের মত জানতে চেয়েছে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন ওই দাবি খারিজ করে দিয়েছেন তো বটেই। রাজনৈতিক ভাবেও সিপিএম বিষয়টিকে হাতিয়ার করেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। বিপাকে পড়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব ইডেনের দাবির থেকে দূরত্ব তৈরি করেছেন। এমনকি, সাংসদকে ওই বিল প্রত্যাহার করে নিতেও বলা হয়েছে।
রাজধানী স্থানান্তরের প্রস্তাব প্রকৃতপক্ষে উঠেছিল গত মার্চ মাসে। সংসদের বাজেট অধিবেশনের সময়ে। কিন্তু ইডেনের পেশ করা সেই বেসরকারি বিল তখন কারও নজরে আসেনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তার ভিত্তিতে বিজয়ন সরকারকে চিঠি পাঠানোর পরে বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন এনএসইউআইয়ের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি এবং তরুণ সাংসদ ইডেন যুক্তি দিয়েছিলেন, তিরুঅনন্তপুরম কেরলের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত। তুলনায় কোচি একেবারে রাজ্যের মাঝামাঝি জায়গায় এবং বিভিন্ন দিকের সঙ্গেই তার সংযোগ রয়েছে। রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলির মানুষকে রাজধানী শহরে যাওয়ার জন্য দক্ষিণ প্রান্তে যেতে হয়। কোচি রাজধানী হলে সকলেরই সুবিধা হবে। এই ছিল বেসরকারি বিলে এর্নাকুলমের (যার সদর শহর কোচি) সাংসদের বক্তব্য।
সূত্রের খবর, কেন্দ্রের চিঠি পাওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন পাল্টা লিখেছেন, তিরুঅনন্তপুরম রাজধানী আছে কেরল রাজ্য হিসেবে রূপ নেওয়ার সময় থেকেই। রাজধানী হওয়ার জন্য মূল যে পরিঠাকামো লাগে, তা ওই শহরেই আছে। তুলনায় কোচি আধুনিক, মেট্রো শহর। কিন্তু সেখানে পরিসর অনেক কম। নতুন করে সম্প্রসারণ বা পরিকাঠামো গড়ে তোলার জায়গা এখন আর কোচিতে নেই। উপযুক্ত কোনও কারণ ছাড়াই রাজধানী স্থানান্তর করতে গেলে অহেতুক কোষাগারের বিপুল টাকা খরচ হবে। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এই দাবি ‘অবাস্তব’।
তিরুঅনন্তপুরমের সঙ্গে দক্ষিণী ওই রাজ্যের ইতিহাস জড়িত। তার সঙ্গে আছে ভাবাবেগের সম্পর্কও। কংগ্রেস সাংসদের দাবির কথা তুলে ধরে সিপিএম বলতে শুরু করেছে, কংগ্রেস ইতিহাসকে অস্বীকার করতে চায়! কংগ্রেস রাজধানী সরাতে চায় বলে রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে প্রচারেও নেমে পড়েছে তারা। রাজ্যের মন্ত্রী এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পি রাজীবের কথায়, ‘‘তামিলনাড়ু কেরলের চেয়ে বড় রাজ্য। সেখানকার রাজধানী চেন্নাই তো রাজ্যের এক প্রান্তে। তা হলে কি ওখানেও রাজধানী সরিয়ে নিতে হবে?’’ আগে এর্নাকুলমেরই সিপিএম জেলা সম্পাদক ছিলেন রাজীব।
পরিস্থিতি সামাল দিতে বিরোধী দলনেতা ভি ডি সতীশন বলেছেন, ‘‘ইডেনের অভিজ্ঞতা কম। বেসরকারি বিলে উনি যা দাবি করেছেন, সেটা দলের অবস্থান নয়। দলের এই ব্যাপারে কিছু জানাও ছিল না। ওঁর সঙ্গে কথা বলেছি, ওই বিল প্রত্যাহার করে নিতে বলেছি।’’ সতীশনেরও বক্তব্য, কোচিতে রাজধানী গড়ার মতো জায়গা নেই। কংগ্রেসের নেতা, সাংসদেরা অবশ্য দলের অন্দরে ইডেনের এই উদ্যোগকে ‘অপরিণত ভাবনা’ বলে আখ্যা দিয়ে প্রবল অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। প্রকাশ্যে তাঁরা রাজধানী স্থানান্তরের দাবি থেকে দূরত্বই রাখছেন। তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর যেমন বলছেন, ‘‘ওই প্রস্তাবের কোনও সারমর্ম নেই। আর একটা বেসরকারি বিল পেয়ে কেন্দ্রের চিঠি পাঠিয়ে দেওয়াও অদ্ভুত ব্যাপার!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy