দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
‘পেপার লিক সরকার’। কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক ‘হাত’ নয়, শুক্রবার রাহুল গান্ধীর সাংবাদিক বৈঠক-মঞ্চের পিছনে বড় হরফে লাল রঙে লেখা হয়েছিল এই কটাক্ষ। তার তলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর তাঁর দলকে নিশানা করে খোঁচা— ‘৭ বছর, ৭০ লিক (প্রশ্ন ফাঁস), ২ কোটি ভুক্তভোগী’।
কংগ্রেস সদর দফতরে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা (নিট) এবং ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন (ইউজিসি) আয়োজিত নেট-এর পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা নিয়ে তীব্র ভাষায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর সরকারকে নিশানা করলেন রাহুল। তাঁর কথায়, ‘‘মধ্যপ্রদেশে ব্যাপমে যে প্রশ্ন ফাঁস দুর্নীতি হয়েছিল, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে গত কয়েক বছরে ধারাবাহিক ভাবে যেমন প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে, এ বার মোদী সেটাই ভারত জুড়ে চালু করতে চাইছেন।’’
চলতি বছরের গোড়ায় মণিপুর থেকে গুজরাত পর্যন্ত ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ করার সময় তাঁর কাছে ছাত্র-যুবরা প্রশ্ন ফাঁসের ভূরি ভূরি অভিযোগ করেছিলেন বলে দাবি রাহুলের। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সবেচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছিল ওই তিন রাজ্য থেকে।’’ নিট এবং নেট পরীক্ষা প্রসঙ্গে রাহুল বলেন, ‘‘একটি পরীক্ষা (নেট) বাতিল হয়েছে। আর একটি নিয়ে তদন্ত চলছে। জানি না, শেষ পর্যন্ত কী হবে। অপরাধ চক্রের মাথারা ধরা পড়বে কি না।’’
মোদী সরকারের জমানায় কেন্দ্র এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ধারাবাহিক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়েছে দাবি করেছেন রাহুল। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পুরো ঘটনাকে নিছক দুর্নীতির মোড়ক দিতে গররাজি তিনি। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির কথায়, ‘‘এই সরকার ধীরে ধীরে শিক্ষা ব্যবস্থায় দখলদারি চালিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কব্জা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যদের তালিকা দেখুন। বিজেপি এবং তাদের পরিবারের মূল সংগঠনের (আরএসএস) মতাদর্শের মানুষে ভরা।’’
এর পরেই রাহুলের মন্তব্য, ‘‘পরীক্ষা পদ্ধতিতে দলীয় অনুপ্রবেশের কারণেই প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা বাড়ছে। যত দিন পর্যন্ত না নিরপেক্ষ, যোগ্য এবং সৎ মানুষদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, তত দিন এমন চলতে থাকবে। এই সরকার বিচার ব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র, গোয়েন্দা বাহিনীর পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থাকেও গ্রাস করেছে।’’ শুধু প্রশ্ন ফাঁসের পর তদন্ত নয়, প্রতিটি পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রশ্ন ফাঁসের সম্ভাবনা এড়াতে পুরো পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন বলে দাবি করে রাহুল জানান, সংসদের আসন্ন অধিবেশনে তাঁরা প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে সরব হবেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে আমরা সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, এ বার সরকারের উপর চাপ বাড়িয়ে সেই কাজ করানোরই চেষ্টা করব।
কিন্তু একের পর এক প্রশ্ন ফাঁসের পরেও কেন নীরব প্রধানমন্ত্রী মোদী? রাহুলের জবাব, ‘‘আমার মনে হয়, ওঁর যাবতীয় চিন্তা এখন লোকসভার স্পিকার পদ নিজের দলের হাতে থাকে কি না, তা নিয়েই।’’ মোদীর রাজত্ব ‘মার্কেটিং’ এবং ভয়ের যুগলবন্দির উপর নির্ভরশীল বলেও দাবি করেন রাহুল। তাঁর কথায়, ‘‘এটাই গুজরাত মডেল।’’ ‘তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে’ এ প্রসঙ্গে মোদীর দুই পূর্বসূরি অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং মনমোহন সিংহের নাম উল্লেখ করে রায়বরেলীর থেকে সদ্যনির্বাচিত কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘‘ওঁরা মানুষের কথা শুনতেন। মানুষকে সম্মান করতেন, আর উনি (মোদী) ভয় দেখিয়ে চুপ করাতে চান।’’
কিন্তু ভয়ের সেই আবহ ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে বলে দাবি করেছেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘৫৬ ইঞ্চির ছাতি এখন ৩০-৩২ ইঞ্চি হয়ে গিয়েছে। বেলুন চুপসে গিয়েছে। ওঁর (মোদী) তো টেনশন হবেই। বারণসীতে কেমন চপ্পল ছোড়া হল দেখলেন না। লোকসভা ভোটের আগে এমনটা কল্পনা করা যেত?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy