ফাইল চিত্র
চাবিকাঠি আর সনিয়া গাঁধীর হাতে নেই। শুক্রবার রাত থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় পঞ্জাবের পালাবদল কংগ্রেস নেতাদের বুঝিয়ে দিল, দলের ব্যাটনও হাতবদল হয়ে গিয়েছে। সনিয়ার থেকে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছে তাঁর পুত্র-কন্যা রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর হাতে।
চব্বিশ নম্বর আকবর রোডের এক নেতা বলেন, “ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহকে রাতারাতি সরানোর সিদ্ধান্তে দুই ভাই-বোনের আঙুলের ছাপ স্পষ্ট। কারণ সনিয়া গাঁধীর জমানা হলে এই সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দেরি হত। সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ালেও রাহুলই পর্দার পিছন থেকে দল চালাচ্ছিলেন। সঙ্কট তৈরি হলে প্রিয়ঙ্কাকেও মাঠে নামতে হচ্ছিল। সনিয়া অন্তর্বর্তী সভানেত্রী হলেও এখন রাহুল-প্রিয়ঙ্কাই শেষ কথা বলবেন, তা পঞ্জাবের পালাবদলে প্রমাণ হয়ে গেল।”
ঠিক এক সপ্তাহ আগে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ রাতারাতি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বদলে ফেলেছিলেন। আসন্ন নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বদলে সরকার বিরোধী ক্ষোভ কমানোটাই ছিল কৌশল। রাহুল-প্রিয়ঙ্কা একেবারে মোদী-শাহকেই অনুকরণ করেছেন। কিন্তু অন্ধ অনুকরণ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে এনেছেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কংগ্রেসের এক বিক্ষুব্ধ নেতা বলেন, “গত ছয় মাসে বিজেপি নেতৃত্ব পাঁচ জন মুখ্যমন্ত্রী বদলেছে। কোনও মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে তিক্ততা প্রকাশ করেননি। পঞ্জাবে অমরেন্দ্রর ক্ষোভ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। দলকে যে খেসারত দিতে হতে পারে, তা ভাবা হয়নি।”
পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত অমরেন্দ্র সনিয়া গাঁধীকে শনিবার চিঠিতে জানিয়েছেন, তিনি গত পাঁচ মাসের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে ব্যথিত। রাহুল-প্রিয়ঙ্কার নভজ্যোত সিংহ সিধুকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি করার সিদ্ধান্তের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় রাজনীতিতে পঞ্জাবের গুরুত্ব, উদ্বেগের বিষয়গুলি না বুঝেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ সূত্রের খবর, পুত্র-কন্যার হাতে দলের লাগাম তুলে দেওয়া সনিয়া ‘আই অ্যাম সরি অমরেন্দ্র’ বলা ছাড়া তাঁকে আর কোনও জবাব দিতে পারেননি। কারণ গোটা পর্বে রাহুলই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলের পর্যবেক্ষক হিসেবে তিনি নিজের আস্থাভাজন অজয় মাকেন ও হরিশ চৌধরিকে পঞ্জাবে পাঠিয়েছেন। প্রিয়ঙ্কা পঞ্জাবের বিধায়কদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন। অমরেন্দ্রর মিডিয়া উপদেষ্টা রবীন ঠুকরাল বলেন, “নিজের যন্ত্রণা ছাড়াও এই পালাবদলে রাজ্যের শান্তি-উন্নয়ন নষ্ট হবে না বলেও ক্যাপ্টেন সনিয়াকে লেখা চিঠিতে আশা প্রকাশ করেছেন।”
অমরেন্দ্রর এই ক্ষোভ নিরসনে সনিয়া-প্রিয়ঙ্কারা কী পদক্ষেপ করছেন, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। তবে এই মাপের এক প্রবীণ নেতার ক্ষোভ যে পঞ্জাব ভোটে ছাপ ফেলতে পারে, তা আঁচ করে সেই রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা হরিশ রাওয়ত জানিয়েছেন, তিনি অমরেন্দ্রর ক্ষোভ নিরসনে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান। সে জন্য ‘ক্যাপ্টেনে’র কাছে সময়ও চাওয়া হয়েছে।
পঞ্জাব কংগ্রেসের এক নেতার বক্তব্য, গুজরাতে বিজয় রূপাণীকে হঠানোর আগেই মোদী-শাহ ঠিক করে ফেলেছিলেন, ভূপেন্দ্র পটেল পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন। সব চিত্রনাট্য মেনে এগিয়েছে। পঞ্জাবে অমরেন্দ্রকে সরানোর পরে হাইকমান্ড ভাবতে বসেছে, পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন। অমরেন্দ্রর পদত্যাগের পরে শনিবার রাতে রাহুল ৭৮ বছরের অম্বিকা সোনিকে ডেকে মুখ্যমন্ত্রী হতে বলেছেন। তাঁর মতে, “রাহুল-প্রিয়ঙ্কার দূরদৃষ্টি, পরিকল্পনার অভাব ও সিদ্ধান্তগ্রহণে দুর্বলতা বোঝা যাচ্ছে।” প্রিয়ঙ্কার স্বামী রবার্ট বঢরার ভগ্নিপতি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক তেহসিন পুনাওয়ালার পাল্টা যুক্তি, “গুজরাতের নতুন মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করতে বিজেপির তিন দিন লেগেছিল। কংগ্রেস ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পঞ্জাবের নতুন মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করছে। অথচ এর পরেও বলা হবে, মোদী-শাহ নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন আর কংগ্রেস নেতৃত্ব দুর্বল!”
পঞ্জাবে অমরেন্দ্র সিংহের বিরুদ্ধে সিধুর বিদ্রোহে রাহুল-প্রিয়ঙ্কা সিধুর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু অমরেন্দ্রর বিরুদ্ধে সিধুর বিদ্রোহই ক্যাপ্টেনের গদিচ্যুত হওয়ার একমাত্র কারণ নয় বলে কংগ্রেস শিবিরের দাবি। দলের নেতারা বলছেন, বিধানসভায় ৮০ জন কংগ্রেস বিধায়কের মধ্যে ৬০ জন সনিয়াকে চিঠি লিখে অমরেন্দ্রর প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, অমরেন্দ্র নিজের ইচ্ছে মতো সব সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর দেখাই পাওয়া যায় না। কারও সঙ্গে তিনি আলোচনাও করেন না। শিরোমণি অকালি দলের প্রতি অমরেন্দ্র নরম অবস্থান নিয়ে চলছেন বলেও বার্তা যাচ্ছিল। সর্বোপরি সরকারের বিরদ্ধে ক্ষোভ প্রশমিত করতে মুখ্যমন্ত্রী বদল দরকার। টিম রাহুলের বক্তব্য, ব্যক্তি নয়, দলের স্বার্থ দেখেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পঞ্জাবে আচমকা মুখ্যমন্ত্রী বদলের পরে কংগ্রেসের একাংশ নেতা মনে করছেন, এ বার রাজস্থানে সচিন পাইলট নতুন করে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি জানাবেন। তিনি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অশোক গহলৌতকে সরানোর দাবি তুলবেন। মরুরাজ্যে ঝড় উঠলে রাহুল-প্রিয়ঙ্কা তা কী ভাবে সামলাবেন, সে প্রশ্ন উঠেছে। গহলৌতকে সরাতে গেলে তিনিও অমরেন্দ্রর মতো প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করবেন কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, আজ গহলৌত বলেছেন, “আমার আশা, ক্যাপ্টেন এমন কোনও পদক্ষেপ করবেন না যাতে কংগ্রেসের ক্ষতি হয়। উনি নিজেই বলেছেন, পার্টি তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে, সাড়ে নয় বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকতে দিয়েছে।” রাজস্থানের এক নেতার প্রশ্ন, রাহুল-প্রিয়ঙ্কা তাঁকেও সরানোর সিদ্ধান্ত নিলে গহলৌত কি এতটা উদারতা দেখাতে পারবেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy