Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Congress

‘ত্রাতা’র অভাবেই নাজেহাল কংগ্রেস

রাজস্থান-সঙ্কটের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে আগে সনিয়া গান্ধীর রাজনৈতিক সচিব পটেল মাঠে নেমে পড়তেন। পুরো কাজটাই হত পর্দার আড়ালে।

একটি মাত্র রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদল করতে গিয়েই গান্ধী পরিবারের নাস্তানাবুদ অবস্থা।

একটি মাত্র রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদল করতে গিয়েই গান্ধী পরিবারের নাস্তানাবুদ অবস্থা। ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৩৫
Share: Save:

গত এক থেকে দেড় বছরে একের পর এক রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছে বিজেপি। কেউ কোথাও টুঁ শব্দও করেনি। কিন্তু কংগ্রেসের ক্ষেত্রে একটি মাত্র রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদল করতে গিয়েই গান্ধী পরিবারের নাস্তানাবুদ অবস্থা। যা দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এক, কংগ্রেস হাইকমান্ডের কর্তৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়েছে। দুই, আহমেদ পটেল থেকে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’-দের অভাবে ভুগছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।

রাজস্থান-সঙ্কটের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে আগে সনিয়া গান্ধীর রাজনৈতিক সচিব পটেল মাঠে নেমে পড়তেন। পুরো কাজটাই হত পর্দার আড়ালে। কিন্তু পটেলের প্রয়াণের পরে মল্লিকার্জুন খড়্গে, কে সি বেণুগোপাল, কমল নাথ বা দিগ্বিজয় সিংহরা তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করতে পারেননি। রাজস্থানের সঙ্কটের পরে সনিয়া মধ্যপ্রদেশ থেকে কমল নাথকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছেন। কংগ্রেস নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ নিজেই তাঁর সঙ্গে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ায় বিবাদ সামলাতে পারেননি। যার জেরে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও কমল নাথকে ক্ষমতা হারাতে হয়।

গত বছর বিজেপি উত্তরাখণ্ডে দু’বার মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছিল। গুজরাত, কর্নাটকের মতো বড় রাজ্যেও মুখ্যমন্ত্রী বদল হয়েছে। অসমে বিধানসভা ভোটের পরে মুখ্যমন্ত্রী বদলেছে। সম্প্রতি ত্রিপুরায় মুখ্যমন্ত্রী বদল হয়েছে। কংগ্রেস মাত্র দু’টি রাজ্যে ক্ষমতায়। একটিতে মুখ্যমন্ত্রী বদলাতে গিয়েই গান্ধী পরিবারের নাজেহাল দশা। কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া এক তরুণ নেতা বলেন, ‘‘এত দিন কংগ্রেসের হাইকমান্ড যা বলেছেন, সেটাই রাজ্যের নেতারা মেনে নিয়েছেন। এখন বিজেপিতে সেই একই হাইকমান্ড সংস্কৃতি দেখতে পাচ্ছি। অথচ কংগ্রেসেই হাইকমান্ডের কথা কেউ মানছেন না।’’

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে রাহুল গান্ধী কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে খোলা চিঠিতে লিখেছিলেন, কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারা তাঁর কথা মতো চলেননি। রাহুলের এক আস্থাভাজন নেতা বলেন, ‘‘কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার সুযোগ পেয়েও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে অশোক গহলৌত কংগ্রেস হাইকমান্ডের কথা মতো চলতে রাজি না হয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাহুল ঠিক অভিযোগ করেছিলেন।’’

কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতা মানছেন, দু’বছর আগে শীর্ষ নেতৃত্বের নিষ্ক্রিয়তার দিকে আঙুল তুলে ২৩ জন বিক্ষুব্ধ নেতার সনিয়া গান্ধীকে চিঠি লেখা হাইকমান্ডের দুর্বলতার প্রথম উদাহরণ ছিল। রবিবার রাতে রাজস্থানের ঘটনা চূড়ান্ত নমুনা। কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, সনিয়া নিজে গহলৌতকে সভাপতির দায়িত্ব নিতে বলেছেন। অথচ গহলৌত যে সভাপতি না হওয়া পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়তে চাইবেন না, তাঁর অনুগামীকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসাতে না পারলে বিদ্রোহ করবেন, তা হাইকমান্ড আঁচ করতে পারেননি। সিদ্ধান্ত মানতে গহলৌতকে বাধ্য করতেও পারেননি।

প্রয়াত পটেলের এক পুরনো অনুগামীর মতে, জি-২৩-র চিঠির পরেও পটেল বিক্ষুব্ধ নেতাদের সামলেছিলেন। এই রাজস্থানেই সচিনের বিজেপিতে যাওয়া আটকান পটেল। মহারাষ্ট্রে ২০১৯-এ গান্ধী পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও রাজ্যের বিধায়কদের কথা শুনে জোটের রাস্তা তৈরি করেছিলেন। মনমোহনের আমলে বহু সঙ্কটে পটেল, প্রণবকে ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ বা ‘ট্রাবল শুটার’-এর ভূমিকায় নামতে হয়েছে। গান্ধী পরিবারের আস্থাভাজনদের ধারণা ছিল, গহলৌত কংগ্রেস সভাপতি হয়ে নিজেই সব সঙ্কটের সমাধান করবেন। কংগ্রেস ছেড়ে ত্রিপুরায় নতুন দল গড়া প্রদ্যোতমাণিক্য দেব বর্মণের মন্তব্য, ‘‘যিনি ক্যাপ্টেন হবেন, তিনি আগেই দেখিয়ে দিলেন যে তিনি নিজের উইকেট নিয়ে বেশি চিন্তিত। তা হলে আর ভবিষ্যতে কী হবে?”

অন্য বিষয়গুলি:

Congress sonia gandhi Rahul Gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy