প্রতীকী ছবি।
শুধু স্কুলবেলা নয়, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রবল সংশয় ও প্রশ্নের মুখে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাও। নতুন ব্যবস্থায় স্নাতকের পঠনপাঠন চার বছরের এবং স্নাতকোত্তরের পাঠ্যক্রম এক বছরের করার কথা বলা হয়েছে। নানান প্রশ্নের মধ্যে বিষয়টি সব চেয়ে তীক্ষ্ণ যে-কাঁটার মুখে পড়ছে, সেটা হল পরিকাঠামোর অভাব।
এ দেশে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাঠ্যক্রম হয় চার বছরের। কিন্তু স্নাতক স্তরে বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্যের পাঠ নিতে হয় তিন বছর ধরে। অনেকের বক্তব্য, স্নাতকে তিন বছরের পাঠ্যক্রম হলে পড়ুয়ার শৈশব থেকে পাঠকাল হয় ১৫ বছরের। কিন্তু বিদেশে স্নাতকোত্তর পাঠের জন্য ১৬ বছরের পড়াশোনা দরকার হয়। নতুন নীতিতে সেই শিক্ষা ১৬ বছরেরই হবে। ফলে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করতে গেলে আর অসুবিধা হবে না। তা ছাড়া এক বা দু’বছর পড়ে কলেজ ছেড়ে দিলেও তা বিফলে যাবে না। এক থেকে চার— প্রতি বছরের শেষে যথাক্রমে সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা, ডিগ্রি, অনার্স শংসাপত্র পাওয়া যাবে।
কিন্তু শিক্ষা শিবিরের বৃহৎ অংশের প্রশ্ন, তিন বছরের বর্তমান স্নাতক পাঠ্যক্রমকে চার বছরের পাঠে পরিণত করতে গেলে যত শিক্ষক-শিক্ষিকা লাগবে এবং যে-পরিসরগত পরিকাঠামো লাগবে, দেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে হুট করে কি তার আয়োজন করা সম্ভব?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস শুক্রবার জানান, নতুন শিক্ষানীতি আপাতত শুধু কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পাশ করানো হয়েছে। খসড়া নীতি প্রকাশের পরেই প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, নতুন নীতি সেই খসড়ারই প্রতিলিপি। এ বার এটা সংসদে পাশ করাতে হবে। তার পরে তা পরিণত হবে আইনে। দেখা যাক, এর মধ্যে কিছু পরিবর্তন হয় কি না। সুরঞ্জনবাবুর প্রশ্ন, ‘‘তিনের বদলে চার বছরের স্নাতক-পাঠের জন্য পরিকাঠামোর যে-বিপুল পরিবর্তন দরকার, এই পরিস্থিতিতে সেটা কি সম্ভব? নাকি এ-সব না-ভেবেই এমন নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে? এ তো ঘোড়ার আগে গাড়ি চলে যাচ্ছে!’’
নতুন শিক্ষানীতিতে তিন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা হয়েছে। ১) প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে গবেষণাও হবে। ২) মধ্যম মানের বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে পড়ানোর সঙ্গে হবে গবেষণা। ৩) এই স্তরের বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু স্নাতকের পাঠ চলবে, কোনও গবেষণা হবে না।
প্রশ্ন উঠছে, এমন বিশ্ববিদ্যালয় আদৌ থাকবে কেন, যেখানে গবেষণা হবে না? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিতত্ত্বের শিক্ষক এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি পার্থিব বসু বলেন, ‘‘এরা চাইছে, শিক্ষাকে সঙ্কুচিত করতে। এরা চাইছে, উচ্চশিক্ষা যেন সকলের কাছে না-পৌঁছয়। গবেষণা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই মুক্ত চিন্তা, নতুন কিছু গড়ে তোলার জায়গা। নয়া নীতি অনুযায়ী আগামী দিনে এম-ফিল থাকবে না। চার বছরের স্নাতক পাঠ শেষ করলে পিএইচ ডি করার সুযোগ মিলবে সরাসরি। এটা গবেষণা সঙ্কোচনের একটি পদ্ধতি।’’ তিনি জানান, শিক্ষায় বেসরকারি লগ্নির অবাধ আহ্বান আছে এই নীতিতে। বলা হচ্ছে, কলেজগুলিতে পাঁচ হাজারের বেশি পড়ুয়া থাকতে হবে। তাঁর প্রশ্ন, প্রান্তিক অঞ্চলের কলেজ এত ছাত্রছাত্রী পাবে কোথা থেকে? অর্থাৎ সেই কলেজগুলির অস্তিত্ব আর থাকবে না। সকলকেই ছুটে আসতে হবে শহরের দিকে। গবেষণার বিশ্ববিদ্যালয় এবং পঠনপাঠনের বিশ্ববিদ্যালয়, এমন ভাগাভাগির নীতিরও তীব্র বিরোধিতা করেছেন পার্থিববাবু। তাঁর বক্তব্য, এগুলো করা হচ্ছে বেসরকারি বিনিয়োগ আনার উদ্দেশ্যে। এতে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন অভাবী, অথচ মেধাবী পড়ুয়ারা।
সারা দেশে এক পাঠ্যক্রম নীতিরও প্রতিবাদ করছেন উপাচার্য সুরঞ্জনবাবু। তাঁর প্রশ্ন, এত বড় দেশে একই পাঠ্যক্রম কী ভাবে পড়ানো হতে পারে? রাজ্য পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদারের বক্তব্য, প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পরম্পরা অঙ্গীভূত হয়ে আছে পাঠ্যক্রমে। নতুন শিক্ষানীতিতে সেটা নষ্ট হয়ে যাবে। নতুন নীতিতে পাঠ্যক্রম ঠিক করা হবে কেন্দ্রীয় ভাবে। রাজ্যের শিক্ষা বোর্ডগুলোর কোনও মতামত থাকবে না। এটা কখনওই পড়াশোনার আদর্শ পরিস্থিতি হতে পারে না।
‘‘এটা বিদেশি শিক্ষানীতির কপি পেস্ট হয়েছে। এই ধরনের শিক্ষানীতি সংসদে পাশ হল না, শিক্ষা যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয় হওয়া সত্ত্বেও তা নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করা হল না...। ১০-১২টা পয়েন্ট আমরা ঠিক করেছি। সেগুলো নিয়ে কথা বলব,’’ এ দিন তৃণমূল ভবনে বলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
এ দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) পক্ষ থেকে এই নীতি বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। নয়া শিক্ষানীতির প্রতিবাদে এ দিন মিছিল বার করে এসএফআই।
তবে এবিভিপি র দক্ষিণবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক সুরঞ্জন সরকার সাংবাদিক বৈঠকে জানান, নতুন শিক্ষানীতি ভারতে নতুন দিগন্ত খুলে দিল। পূরণ হল এবিভিপি-র দীর্ঘদিনের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy