আসরার খানের মাথার এক্স রে রিপোর্ট দেখাচ্ছেন পরিবারের এক সদস্য। ছবি: এএফপি
মোবাইলের স্ক্রিনসেভারে ছিল বিরাট কোহালির ছবি। নিজেও খেলতেন। স্কুল ক্রিকেটে তাঁর দাপটের খবর বেরিয়েছিল কাগজে। ভারতের ক্রিকেট অধিনায়কের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই ‘রে রে’ করে উঠতেন। ১৮ বছরের আসরার আহমেদ খানকে লোকে ডাকত ‘মহল্লে কা বিরাট’ বলে।
শ্রীনগরের ইলাহি বাগের বাসিন্দা সেই আসরারের মৃত্যু নিয়েই এখন লাগাতার চাপানউতোর। সেনা আর পুলিশ আগে বলেছিল, রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরের আঘাতেই মারা যান আসরার। যদিও তাঁর মাথার এক্স-রে প্লেটে ছররার চিহ্ন ছিল স্পষ্ট। আসরারের পরিবারের অভিযোগ, ছররা তো বটেই, আধাসেনার কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতেও জখম হয় আসরারের মস্তিষ্ক। শ্রীনগরের হাসপাতালের দেওয়া আসরারের মৃত্যুর শংসাপত্র হাতে এসেছে সংবাদমাধ্যমের। দেখা যাচ্ছে ‘মৃত্যুর কারণ’-এর কলামে তাতেও লেখা— ‘ছররার আঘাতের সঙ্গে শেল ফাটার আঘাত’।
আসরারের সম্পর্কিত ভাই আদিল জানিয়েছেন, গত ৬ অগস্ট বিকেলে রাস্তায় ক্রিকেট খেলার সময়ে একটু দূরে বল আনতে গিয়েছিলেন আসরার। রাস্তায় তখন ৬০-৭০ জন ছেলে। কেউ ক্রিকেট খেলছিল, কেউ ক্যারম। হঠাৎ সিআরপি-র একটা গাড়ি আসে। তারা ছেলেদের বাড়ি যেতে বলেই কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে থাকে। আদিলের কথায়, ‘‘আসরারের সামনেই ফেটেছিল একটা শেল। চোখে জ্বলুনি নিয়ে ও বসে পড়ে। তখনই ওর মুখে এসে বেঁধে একঝাঁক ছররা। তুলে আনতে গেলাম ওকে। এ বার একটা শেল এসে লাগল ঠিক ওর মাথায়।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কালই জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিজি দিলবাগ সিংহ বলেছেন, ‘‘যারা পাথর ছুড়ছিল, তাদের মধ্যে এক জন মারা গিয়েছে।’’ অর্থাৎ আর ‘বিক্ষোভকারীদের পাথরে মৃত্যু’ নয়, নিজেই ‘বিক্ষোভকারী’-র তকমা পেয়ে গিয়েছেন আসরার। যা শুনে শৌরার বাড়িতে ছেলের স্কুলের মার্কশিট দেখাচ্ছেন মা। সর্বশেষ পরীক্ষাতেও ৯০ শতাংশ নম্বর। অঙ্ক আর বিজ্ঞানে একশোয় একশো। মা বলছেন, ‘‘এটা কি কোনও পাথর-ছোড়া ছেলের মার্কশিট? ছেলেটার রাজনীতি নিয়ে, ৩৭০ ধারা তোলা নিয়েও উৎসাহ ছিল না।’’ আসরারের মৃত্যুর শংসাপত্রটা তুলে ধরে বাবা ফিরদৌস বলছেন, ‘‘এটাও কি মিথ্যে?’’
ডিজি মনে করছেন, গত এক মাস ধরে আইন-শৃঙ্খলায় জোর দিতে গিয়ে জঙ্গি-দমন অভিযানে একটু হলেও নজর কমেছে। কিন্তু সম্প্রতি জঙ্গি হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ‘মাল্টি এজেন্সি সেন্টার’ (ম্যাক)। প্রতিরক্ষা সূত্রের বক্তব্য, নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া কুপওয়ারা ও বারামুলা জেলার জঙ্গলে জঙ্গিদের খোঁজে বড়সড় তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযান চলছে টাংধর, কেরন, উরি, মছিল ও গুরেজ সেক্টরেও। শহরের রাস্তায় চলছে গাড়িতে তল্লাশি। মঙ্গলবার থেকে গণপরিবহণের কিছু কিছু গাড়ি দেখা গিয়েছে। তবে স্কুল-কলেজ-অফিসে লোকজনের দেখা নেই। ডিজি-র বক্তব্য, ‘‘প্রত্যেক দিন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। মানুষ কাজে ফিরছেন।’’
৬ সেপ্টেম্বরের সরকারি হিসেব উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বলছে, ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের সময় থেকে উপত্যকায় গ্রেফতারির সংখ্যা ৩৮০০ ছাড়িয়েছে। অধিকাংশের বিরুদ্ধেই অশান্তি বাধানোর অভিযোগ। পরে এঁদের মধ্যে ২৬০০ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কাল মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়োকে চিঠি লিখেছেন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের একমাত্র ভারতীয় বংশোদ্ভূত সদস্যা প্রমীলা জয়পাল এবং আর এক সদস্য জেমস পি ম্যাকগভার্ন। তাঁদের আর্জি, কাশ্মীরে যাঁদের আটক করা হয়েছে তাঁদের মুক্তি চেয়ে এবং উপত্যকায় স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ফেরাতে বলে ভারতকে চাপ দিক আমেরিকা। ফেরানো হোক কাশ্মীরিদের জমায়েতের অধিকার। স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়া হোক সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy