Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

প্রস্তাবিত ডেন্টাল কলেজের ‘খাস’ জমি নিয়েই জটিলতা

জমি নিয়ে সঙ্কটে প্রস্তাবিত শিলচর ডেন্টাল কলেজের ভবিষ্যৎ। নতুন সরকার ক্ষমতায় বসেই শিলচরে ডেন্টাল কলেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। সে জন্য বাজেটেও ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। শর্ত একটাই, জমির ব্যবস্থা করতে হবে জেলা প্রশাসনকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৩
Share: Save:

জমি নিয়ে সঙ্কটে প্রস্তাবিত শিলচর ডেন্টাল কলেজের ভবিষ্যৎ।

নতুন সরকার ক্ষমতায় বসেই শিলচরে ডেন্টাল কলেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। সে জন্য বাজেটেও ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। শর্ত একটাই, জমির ব্যবস্থা করতে হবে জেলা প্রশাসনকে। সিদ্ধান্ত হয়, মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি ঘুংঘুর ভেটেরনারি বাজার লেনে একটা খাস জমি রয়েছে। সেখানেই কলেজটি নির্মিত হবে। সে জন্য ভূমিরাজস্ব বিভাগ থেকে মাপজোখ চলছে। যারা ওই জায়গা দখল করে রেখেছেন, তাঁদের দ্রুত জমি ছেড়ে দিতে মৌখিক ভাবে বলাও হয়েছে।

কিন্তু ওই জমিতে বসবাসকারীদের দাবি, তাঁরা মোটেও সরকারি জমি বেদখল করে বসেননি। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ, এনআইটি, ভেটেরনারি কার্যালয় প্রভৃতি সবই ছিল ভরাখাই টি এস্টেটের। বিভিন্ন জায়গায় তারা পুরনো শ্রমিকদের বসতি স্থাপনের সুযোগ দিয়েছে। ভেটেরনারি বাজার লেনে ১৫৩ বিঘা জমিতে বসবাস করছে প্রায় ২৫০টি পরিবার। টি এস্টেট নিয়মিত শ্রমিকদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করেছে। সাপ্তাহিক মজুরি থেকে জমির দাম বাবদ টাকাও কেটে নিয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাঁরা রাজ্য সরকারকে খাজনা দিচ্ছেন।

তাঁদের দাবি, অনেকের হাতে রয়েছে বহু পুরনো দলিল, খতিয়ান-সহ নানা নথিপত্র। ওই জমিতে তাঁদের নামে সরকারি উদ্যোগে বিদ্যুত সংযোগ, পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকী, মিলেছে ইন্দিরা আবাস যোজনার অর্থও। তাঁদের চলাচলের সুবিধের জন্য সরকারই প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তা বানিয়ে দিয়েছে। ‘এখন হঠাৎ করে উঠতে বললেই উঠে যাব নাকি’, হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়ে দেন হরিনারায়ণ দোষাদ, ধেনু দোষাদ, বিক্রম রবিদাস-রা। ১৯২৯ সাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ের কাগজপত্র দেখিয়ে তাঁরা হুঙ্কার ছেড়েছেন, ‘জান দিয়ে দেবো, তবু জমি দেব না।’

এই পরিস্থিতিতে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে ইয়ুথ এগেনস্ট সোশ্যাল এভিলস (ইয়াসি) নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার সভাপতি সঞ্জীব রাই বলেন, ‘‘আমরা জমি-বিবাদে ঢুকতে চাই না। আমাদের দাবি, জেলাশাসকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। কাগজপত্র পরীক্ষা করে তাঁদের দাবি যাচাই করা হোক। শুধু ভূমিরাজস্ব বিভাগের কথায় বিশ্বাস করে ২৫০টি পরিবারকে ভিটেছাড়া করা যায় না।’’

তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিতে তাঁরা এর মধ্যেই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এর জবাবে জানানো হয়েছে, বিষয়টি অসম সরকারের গণ-অভিযোগ শাখায় পাঠানো হয়েছে। একজনকে নোডাল অফিসারও নিয়োগ করা হয়েছে। সঞ্জীববাবু বলেন, পরে সেখান থেকে ফাইল গিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। তাই তদন্ত কমিটি গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। তাঁর কথায়, কাগজপত্রে সরকারি জমি প্রমাণিত হলেও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এটাই সরকারী নিয়ম।

কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন বলেন, জমি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। এটি খাস জমি। খাজনা দিলেই কিংবা সরকারি কোনও সুবিধে পেয়েছেন বলেই জমি দখল করে বসে থাকবেন, তা হবে না। তবে তিনি যে শুরুতেই সংঘাতে যেতে রাজি নন, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, জমিতে বসবাসকারীদের সঙ্গে প্রশাসনের তরফে কথা বলা হবে। আলোচনার মাধ্যমেই তাঁদের সরকারি জমি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পরক্ষণেই বিশ্বনাথন মন্তব্য করেন, ‘‘বরাক উপত্যকার উন্নয়নে এখানে যে করেই হোক ডেন্টাল কলেজ হবে।’’ ইয়াসি-র তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাবে বি‌শেষ গুরুত্ব
দেননি তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

land dental college
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy