ছবি সংগৃহীত
অবশেষে টেলিকম শিল্পকে স্বস্তি দিয়ে বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত, আপাতত চার বছর সংস্থাগুলিকে স্পেকট্রাম এবং লাইসেন্স ফি খাতে সরকারের বকেয়া না-মেটালেও চলবে। যে অঙ্ক স্থির হয়েছে কেন্দ্রীয় টেলিকম দফতরের হিসাব করা আয়ের (এজিআর) ভিত্তিতে। মূলত এই বোঝা মাথায় নিয়েই বেহাল ভোডাফোন আইডিয়া (ভিআই)।
এ দিন মোদী সরকারের ঘোষণা, আগামী চার বছর স্পেকট্রামের দাম মেটানোর বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় দেওয়া হবে সংস্থাগুলিকে। সেই খাতে গুনতে হওয়া সুদের টাকা চার বছর বাদে বদলে নেওয়া যাবে সরকারি শেয়ারে। একই সঙ্গে তারা বলেছে, এ বার থেকে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই বিদেশি সংস্থাগুলি সরাসরি এই শিল্পে ১০০% লগ্নি করতে পারবে। পাশাপাশি, গ্রাহকদের প্রিপেড থেকে পোস্টপেডে যেতে বা উল্টোটার ক্ষেত্রে লাগবে না নতুন কেওয়াইসি। চালু হবে ডিজিটাল কেওয়াইসি পদ্ধতিও।
ভারতকে ২০২৫ সালের মধ্যে পাঁচ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি করতে মোদী সরকারের পরিকল্পনা অর্থনীতির ঝিমুনির জেরে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল করোনা-সঙ্কটের আগেই। নতুন সংস্কার পরের কথা, টেলিকমের মতো ক্ষেত্র নড়বড়ে হয়ে পড়ার অভিযোগে বিদ্ধ হচ্ছিল কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, অবশেষে শিল্পের সমস্যা মিটিয়ে বার্তা দিতে উদ্যোগী তারা। লক্ষ্য, আর্থিক সঙ্কটে দীর্ণ টেলিকমকে অক্সিজেন জোগানো। কারণ, এজিআর-এর ভিত্তিতে স্পেকট্রাম-লাইসেন্স ফি-র বিপুল বকেয়ায় ন্যুব্জ এই শিল্পের অগ্রগতি বাধা পেলে থমকাতে পারে প্রধানমন্ত্রীর ‘ডিজিটাল বিপ্লব’। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে, সাহায্য না-পেলে ব্যবসা বন্ধ করতে হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছিল ভোডাফোন আইডিয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে ৫জি পরিষেবার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সে জন্য স্পেকট্রাম কিনতে এবং প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়তে যে বিপুল লগ্নি লাগবে তা-ও বিলক্ষণ জানে সরকার। কিন্তু ভোডাফোনের মতো সংস্থার পক্ষে সেই পথে হাঁটা এই মুহূর্তে কঠিন হবে বুঝেই এ দিন বিদেশি লগ্নি আসার পথ চওড়া করা হয়েছে। সংস্থাগুলির আর্জিতে সাড়া দিয়ে বদলানো হয়েছে এজিআরের হিসাব। টেলিকম নয় এমন ব্যবসা থেকে আয় ভবিষ্যতে তার থেকে বাদ থাকবে। সংস্থার স্পেকট্রাম হাতে রাখার সময়সীমাও বাড়ছে।
কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে খুশি রিলায়্যান্স জিয়োর কর্ণধার মুকেশ অম্বানী, ভারতী এয়ারটেলের সুনীল মিত্তল, ভিআইয়ের অন্যতম প্রোমোটার আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর কুমার মঙ্গলম বিড়লা এবং ব্রিটেনের ভোডাফোন গোষ্ঠীর সিইও নিক রিড। এর হাত ধরে প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল-লক্ষ্য পূরণের বার্তা দিয়েছেন তাঁরা। প্রাথমিক ইঙ্গিত দিয়েছেন নতুন করে পুঁজি ঢালারও। সব কিছু ঠিকঠাক চললে ভোডাফোন বন্ধ হওয়ার জল্পনায় ইতি পড়বে বলে মনে করছে টেলি শিল্পের একাংশ। রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টুইট-বার্তা, ‘‘এটি টেলিকম ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক মোড়, যারা দেশ গড়া এবং জোড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। আজকের সংস্কারে শিল্প এবং গ্রাহক, দু’পক্ষই লাভবান হবে। এই ক্ষেত্রে বৃদ্ধির পাশাপাশি নিশ্চিত হবে কাজের সুযোগ।’’ সুবিধা যে সরকারেরও হবে, সে কথা বলেছেন টেলিকমমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, গ্রাহকদের পছন্দের পরিষেবা পাওয়া এবং নতুন সংস্থার প্রবেশের পথ চওড়া করতে টেলিকম ক্ষেত্রে ন’টি কাঠামোগত সংস্কার হচ্ছে। যাতে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়।
বস্তুত, রিলায়্যান্স জিয়ো বাজারে আসার পরে যেমন দ্রুত ৪জি পরিষেবার বিস্তার ঘটে, তেমনই গোড়ায় তাদের কার্যত নিখরচায় পরিষেবা দেওয়ার জেরে তীব্র মাসুল যুদ্ধ শুরু হয়। তার উপরে তার আগে থেকেই সরকারি ফি এবং করের বোঝা মেটাতে গিয়ে সংস্থাগুলি আর্থিক সঙ্কটে বেহাল হয়েছিল। পরবর্তীকালে এজিআর খাতে কেন্দ্রকে বিপুল টাকা মেটানোর দায় চাপায় পরিস্থিতি ঘোরালো হয়। ভিআই টিকে থাকবে কি না, তৈরি হয় সেই সন্দেহ। শিল্পের একাংশই বলছে, এই পরিস্থিতি প্রতিযোগিতার শর্তকে নিয়ন্ত্রিত করবে এবং তার দায় কেন্দ্রের উপরেও বর্তাবে। এই সমস্যা থেকেই বেরোতে চাইল কেন্দ্র। টেলি শিল্পে পুঁজি ঢালার আগ্রহ ফেরাতে মরিয়া তারা।
তার উপরে এখনই সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী না হলে শুধু চালু প্রযুক্তিই নয়, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে ৫জি প্রযুক্তির কথা বলছে ভারত, তার বাস্তবায়িত হওয়া নিয়েও সংশয় দেখা দিতে পারে। ৫জি স্পেকট্রামের আসন্ন নিলাম নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে কোপ পড়তে পারে রাজকোষের আয়ে। সেই ইঙ্গিত মিলিয়েই অশ্বিনী বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে, এমনকী জানুয়ারিতেও সেই নিলাম হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সংস্থাগুলির বাঁচার জন্য সংস্কারমুখী প্যাকেজ দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy