আইনজীবী সৌরভ কিরপাল। ছবি: সংগৃহীত।
দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি হিসাবে সমকামী আইনজীবী সৌরভ কিরপালের পদোন্নতির বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের কাছে চিঠি লিখেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডে। ওই চিঠিতে আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে কিরপালের সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্যও চেয়ে পাঠিয়েছেন তিনি।
২০১৭ সালের অক্টোবরে দিল্লি হাইকোর্টের কলেজিয়ামের সুপারিশ সত্ত্বেও বিচারকের পদে কিরপালকে বসানো নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের দাবি, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ৩৭৭ ধারা আংশিক ভাবে রদ করে সুপ্রিম কোর্ট সমকামিতাকে অপরাধের আওতা থেকে খারিজ করলেও সমকামী হওয়ার জন্যই বিচারক পদে তাঁকে উন্নীত করা নিয়ে টালবাহানা চলছে। যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেনি নরেন্দ্র মোদী সরকার। তবে সংবাদমাধ্যমের কাছে সৌরভের দাবি, তাঁর যৌন পরিচয়ের কারণেই হয়তো পদোন্নতি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। প্রসঙ্গত, নিজের যৌন পরিচয় নিয়ে সেই প্রথম সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছিলেন কিরপাল।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ২ মার্চ কিরপালের পদোন্নতির বিষয়ে একটি বৈঠকে বসেছিল কলেজিয়াম। ওই বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এন ভি রমানা এবং বিচারপতি রোহিংটন ফোলি নরিম্যানের সঙ্গে আলোচনার সপ্তাহ দুয়েক পর কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি বোবডে। এ নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান জানার পরই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বছর চারেক আগে দিল্লি হাইকোর্টের কলেজিয়ামে সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত হলেও কিরপালের পদোন্নতি আটকে রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের একটি সূত্রের খবর, কিরপালের নামে সিলমোহর দিতে মোদী সরকারের কোথায় বাধা রয়েছে, তা আরও স্পষ্ট করতে রবিশঙ্করের কাছে অনুরোধ করেছেন প্রধান বিচারপতি বোবডে। এ নিয়ে তাঁর সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য চেয়েছেন তিনি।
কিরপালের যৌন পরিচয় নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করলেও তাঁকে নিয়ে যে ‘অনীহা’ রয়েছে, তা প্রকারন্তরে বুঝিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিরপালের বিষয়ে আগেই অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে তাঁর সঙ্গে বিদেশি সঙ্গীর ছবি বার করে সে সম্পর্কে সম্পর্কে কেন্দ্রকে একটি রিপোর্টও দিয়েছিল আইবি। ওই ছবিগুলি আপত্তিকর না হলেও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মতে, দেশের সুরক্ষার ক্ষেত্রে ‘ঝুঁকি’ হতে পারেন কিরপালের বিদেশি সঙ্গী। বছর চারেক আগে কিরপালের পদোন্নতি নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের সুপারিশের পর ওই রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের কাছে পাঠিয়েছিল মোদী সরকার। ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল সেই রিপোর্ট নিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে বৈঠক করেছিল কলেজিয়াম। তার পর থেকে কিরপালের পদোন্নতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঝুলেই রয়েছে। এই নিয়ে তৃতীয় বারের জন্য তা পিছিয়ে গেল।
প্রধান বিচারপতি বোবডের চিঠির পরেও মোদী সরকার নিজের অবস্থান স্পষ্ট না করলে কলেজিয়ামই সিদ্ধান্ত নেবে বলেও সূত্রের খবর। যদিও সে সম্ভাবনাও ক্ষীণ বলে মনে করছেন অনেকে। আগামী ২৩ এপ্রিল প্রধান বিচারপতির কার্যকালের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের একটি সূত্র জানিয়েছে, কলেজিয়ামের বৈঠকে প্রধান বিচারপতিকেই নেতৃত্ব দিতে হবে, এমন কোথাও লিখিত ভাবে বলা নেই। তাঁর মতে, “অবসরের আগে এ ধরনের বৈঠক এড়াতেই চাইবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy