গুন্ডিচা মন্দিরের কাছে ভিড় জমেছিল ভালই। বেশির ভাগই নানা রাজ্য থেকে আসা সাধারণ, খেটে-খাওয়া শ্রমিক। মহিলা মুখ চোখে পড়ার মতো। তাঁদের সামনে সমাবেশ-মঞ্চ থেকে কথাটা বলার সময়ে পরিষ্কার রাগ ফুটে বেরোচ্ছিল রাজ্যসভার সাংসদ তপন সেনের গলা থেকে— “দেশের ১০ শতাংশ মানুষের কাছেও ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড নেই। ব্যাঙ্ক পরিষেবার আওতায় দেশের ৪০ ভাগের বেশি মানুষ এখনও নেই। কার্ড কোথায় সোয়াইপ করবেন? মোদীজি’র মাথায়?”
নরেন্দ্র মোদীর সিদ্ধান্তের ধাক্কায় মাথায় হাত পড়েছে তপনবাবুদের। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের জন্য নয়। পুরীতে চলছে সিটুর ১৫তম সর্বভারতীয় সম্মেলন। প্রতিনিধির সংখ্যা দু’হাজার। যা সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসের চেয়েও অনেক বেশি। এতগুলো লোক নিয়ে সম্মেলন নগদ টাকার জোগান ছাড়়া কী ভাবে চলে?
সিটুর মতো শ্রমিক সংগঠনে সম্মেলন উপলক্ষে চাঁদা যা তোলা হয়, তার প্রায় সবটাই নগদে। অল্প টাকার রসিদ ছাপিয়ে বিভিন্ন সংস্থার বা অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকেরা নিজেরা চাঁদা দেন, চাঁদা তোলেনও। রাজ্যওয়াড়ি সেই টাকা জমা হয় সম্মেলনের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিলে। টাকা তুলে সিটু পড়েছে বেকায়দায়! সব টাকা কেন্দ্রীয় ভাবে কোনও ব্যাঙ্কে জমা করে বদলে নেওয়া সম্ভব ছিল না। সিটুর সাধারণ সম্পাদক তপনবাবুর কথায়, “রাজ্যগুলোকে হাত জোড় করে বলেছি, ভাই পুরনো নোট দিয়ে বিপদে ফেল না! যত পারো, ছোট নোট দাও বা নতুন নোট আনো। সবটা তো সে ভাবে করে ওঠা যায়নি।’’ তাই বহু ক্ষেত্রেই ধারে কাজ চালাতে হচ্ছে এ বারের সম্মেলনে।
টাকা নিয়ে সমস্যা বলে জিনিসপত্র দিয়ে সাহায্যের উপরে এ বার বেশি জোর দিয়েছেন সিটু নেতৃত্ব। সংগঠনের অন্যতম সহ-সম্পাদক কে হেমলতা যেমন বলছিলেন, “মিড-ডে মিলের ‘আশা’ কর্মীরা আমাদের মুড়ি দিয়েছেন। ওটাই ওঁদের সহযোগিতার হাত। সেই মুড়িই সম্মেলন চলাকালীন সন্ধ্যায় প্রতিনিধিদের জলযোগের জন্য দিচ্ছি।” সিটুর অধীন আরও কিছু সংগঠনের কর্মীরা এনে দিয়েছেন বস্তা বস্তা চাল। আয়োজক হিসাবে প্রচারের দায়িত্ব ওড়িশা রাজ্য সিটুর উপরেই ছিল। ধার-বাকি রেখে হলেও সে কাজে তারা ফাঁক রাখতে চায়নি।
কিন্তু আসল বিপদটা হয়েছে অভ্যর্থনা কমিটির নেতাদের। সম্মেলনের যাবতীয় খুঁটিনাটির আয়োজন করতে হয় তাঁদেরই। সেখানে কার্ডে লেনদেন বা চেক দিয়ে পাওনা মেটানোর সুযোগ কম। প্যান্ডেল, চেয়ার বা মাইকের জন্য ডেকরেটরের বিল নগদে মেটানোই রেওয়াজ। সম্মেলন উপলক্ষে সমুদ্র সৈকতের ধারে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে। সেখানে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের যত্সামান্য সাম্মানিক নগদেই দিতে হয়। আংশিক টাকা দিয়ে, ডিউ স্লিপ ধরিয়ে সামাল দিচ্ছেন স্থানীয় নেতারা।
সম্মেলনের গোড়ার দিকেই নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে তুলোধোনা করে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সাধারণ মানুষকে দুর্দশায় ফেলে অবিবেচকের মতো এই সিদ্ধান্তকে অর্থনীতির পক্ষে ক্ষতিকর বলেই দাবি করা হয়েছে সেখানে। কারণ, কৃষক থেকে শুরু করে অসংগঠিত শ্রমিকের মতো প্রান্তিক মানুষেরা নগদ টাকার জোগান কমে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন।
কাজ হারাচ্ছেন অনেক শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের সুতো কলে কর্মরত শ্রমিকদের যেমন এখন বাড়ি ফিরে আসার ট্রেন ধরতে হচ্ছে।
কর্মী আর নেতার বিপদ এমন একাকার আগে হয়েছে কি? আপাতত যা হইয়ে দেখিয়েছেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy