অন্ধ্র টাস্ক ফোর্সের গুলিতে নিহত ২০ জনের দেহ নিতে বুধবারই অন্ধ্রপ্রদেশে গেল তামিলনাড়ু পুলিশের একটি দল। তাদের দাবি, মৃতদেহগুলি দেখলেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে পুরোটাই সাজানো। কয়েকটি দেহে পোড়া দাগ রয়েছে। খুব কাছ থেকে গুলি না করলে এই ধরনের ক্ষত হওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া নিহতদের দেহে গুলি লেগেছে হয় মাথায়, নয়তো বুকে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, আত্মরক্ষার জন্য এলোপাথাড়ি গুলি চালালে এমনটা হয় কী ভাবে?
নিহত ২০ জন সত্যিই রক্তচন্দন কাঠ পাচারকারী, না নিরীহ শ্রমিক— তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল মঙ্গলবারই। নিহতদের এক আত্মীয়ের বয়ান সেই বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছে। তামিলনাড়ুর তিরুআন্নামালাই জেলার অর্জুনপুরম গ্রামের ওই বাসিন্দার দাবি, সোমবার বিকেলে তিরুপতিতে কাজ খুঁজতে একটি বাসে করে রওনা দিয়েছিলেন তাঁদের গ্রামের আট জন। মাঝপথে বাসটিকে আটকায় অন্ধ্র পুলিশ। আট জনের মধ্যে মাত্র এক জন অন্ধ্র পুলিশের চোখ এড়িয়ে কোনও ক্রমে পালাতে পেরেছিলেন। গ্রামে ফিরে এসে তিনিই সব কথা জানান। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই খবর আসে চন্দন কাঠ পাচারকারী সন্দেহে মেরে ফেলা হয়েছে ২০ জনকে। গ্রামবাসীরাই তখন সেই ব্যক্তিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দফতরে নিয়ে যান। নিরাপত্তার খাতিরে ওই প্রত্যক্ষদর্শীর পরিচয় এখন প্রকাশ করা হবে না। তবে প্রয়োজনে তাঁকে আদালতে পেশ করা হবে বলে কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা চিন্তা মোহনও দাবি করেছেন, গোটা ঘটনাটাই অন্ধ্র পুলিশের সাজানো। তাঁর মতে, সেশচলমের ঘন জঙ্গলে কোনও চন্দন গাছ নেই। তবে কংগ্রেস নেতার এই দাবি সঠিক নয় বলেই জানাচ্ছেন বন দফতরের কতার্রা। এ দেশে রক্তচন্দনের গাছ রয়েছে শুধু অন্ধ্রপ্রদেশেই এবং শ্রী বেঙ্কটেশ্বর জাতীয় উদ্যানই রক্তচন্দনের মূল ভাণ্ডার। সেশচলম জঙ্গলের একটা বড় অংশ নিয়েই তৈরি হয়েছে এই শ্রী বেঙ্কটেশ্বর জাতীয় উদ্যান।
চিন্তা মোহন আরও দাবি করেছেন, মৃতদেহগুলির পাশ থেকে যে রক্তচন্দন কাঠগুলি উদ্ধার হয়েছে সেগুলি মোটেও সদ্য কাটা নয়। বরং সেগুলির গায়ে সরকারি নম্বর লেখা রয়েছে। যার থেকে এ কথা স্পষ্ট, কয়েকটি নিরীহ মানুষকে মেরে ঘটনাটাকে চোরাচালানকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের রূপ দিতেই কাঠের গুঁড়িগুলি এনে ফেলে রাখা হয়েছে। এক মানবাধিকার কর্মীও দাবি করেছেন, যে ভাবে সেশচলমের ঘন জঙ্গলে ৩০০ মিটারের ব্যবধানে দু’টি সংঘর্ষে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, তা থেকে বোঝাই যাচ্ছে যে ঘটনাটা আচমকা হয়নি। পুরোটাই সুপরিকল্পিত।
নানা মহলে চিত্তুর-কাণ্ডের সমালোচনা হলেও বক্তব্য থেকে একচুলও সরেনি অন্ধ্র পুলিশ। এ দিনও তাদের তরফে জানানো হয়, শ’খানেক চোরাচালানকারী ঘিরে ধরায় আত্মরক্ষায় গুলি চালাতে হয়েছিল তাদের। যদিও অভিযান চালাতে কত জন ওই জঙ্গলে গিয়েছিলেন তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পুলিশকর্তারা। তবে তাঁদের দাবি, অতীতে ঘন জঙ্গলে পাচারকারীদের হাতে পুলিশকর্মীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। গুলি না চালালে টাস্ক ফোর্সের এই দলটির সদস্যদেরও একই পরিণতি হতে পারত। হায়দরাবাদ থেকে আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, বুধবারও ওই এলাকায় বাকি পাচারকারীদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি চালানো হয়েছে। গত রাতে ওই এলাকা থেকে প্রায় সাড়ে তিন টন রক্ত চন্দন কাঠ উদ্ধার হয়েছে। চোরাবাজারে যার দর প্রায় ১ কোটি টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy