প্রতীকী ছবি।
শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) ভুক্ত দেশগুলির শীর্ষ বৈঠকে আজ অনুপস্থিত থাকলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তবে সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে নাম না করে আজ পাকিস্তানকে নিশানা করল এই বৈঠকের সভাপতির দায়িত্বে থাকা নয়াদিল্লি। পাশাপাশি ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার কথা বলে বার্তা দিল বেজিং-কেও।
চিনও আজ এসসিও-র যৌথ বিবৃতিতে ভারতকে ছাড়াই তাদের মহাযোগাযোগ প্রকল্প ওবর-এ বাকি সদস্য দেশগুলির পক্ষ থেকে সিলমোহর লাগিয়ে নিল। রাশিয়া এবং পাকিস্তান-সহ ছটি দেশ আজ কার্যত নয়াদিল্লির নাকের ডগায় ওবর -এ সমর্থন জানিয়েছে।
ওই ভিডিয়ো-বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তাঁর কথায়, “এই মুহূর্তে আমরা সবচেয়ে বড় যে বিপদের মুখোমুখি তা হল সন্ত্রাসবাদ। বিশেষ করে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস। যে সব রাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদকে বিদেশনীতির অংশ করে নিয়েছে, আমরা সেই সব দেশের বিরোধী। সুস্থিতি এবং স্থায়ী অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন আমাদের।’’ এর পরেই তিনি বলেন, “এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলিকে এসসিও মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। তার ফলে হিতে বিপরীত হয়।’’
আজকের বৈঠকে ছিলেন চিনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্যচিয়াং-সহ রাশিয়া, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিস্তান-সহ সদস্য দেশগুলির শীর্ষ নেতৃত্ব। এসসিও রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সংযোগ গড়ে তোলা নিয়ে আলোচনার মোড়কেই কিন্তু স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, সীমান্ত নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলির প্রতি ভারতের উষ্মার দিকটি। পাকিস্তানের পাশাপাশি চিনের বিরুদ্ধেও ‘সম্প্রসারণবাদ’ এবং ‘বাণিজ্যিক একাধিপত্য’ সংক্রান্ত অভিযোগগুলিকে নিয়ে বার্তা দিয়েছেন বেঙ্কাইয়া। তাঁর কথায়, “আমাদের পারস্পরিক ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’’
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি দেশের স্বচ্ছতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেছেন বেঙ্কাইয়া। বলেছেন, “বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য (অতিমারির পর) প্রত্যেকটি অংশীদার রাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই হবে। কারণ, এই দু’টিই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের স্থায়িত্বের নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে। প্রত্যেকটি দেশকে বহুপাক্ষিক আইন ও নিয়মকানুনকে মান্যতা দিয়ে চলতে হবে।’’
পাকিস্তানের তরফে বৈঠকে ছিলেন সে দেশের সংসদীয় সচিব। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, যেহেতু এই বৈঠকটির আয়োজক ভারত, তাই সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি না পাঠিয়ে নিছক এক জন সচিবকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠাল ইমরান সরকার। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পাক সচিব আন্দলিব আব্বাসও সন্ত্রাস প্রসঙ্গে সরব হয়েছেন। তার মধ্যে ‘বিতর্কিত এলাকা’-য় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসও রয়েছে। নাম না করে তিনি যে ভারত ও কাশ্মীরের কথা বলতে চেয়েছেন তা নিয়ে সন্দেহ নেই কূটনীতিকদের। পাশাপাশি নব্য নাৎসি মতবাদ ও ইসলামভীতির জেরে হওয়া উগ্রপন্থী হামলারও সমালোচনা করেছেন তিনি।
ইসলামাবাদের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণরেখায় ছায়াযুদ্ধ চলছে ভারতের। দু’দিন আগে ওআইসি-র বৈঠকে আলোচ্যসূচিতে না থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করেছে। গত রাতে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। নাগোরটায় পাকিস্তানের মদতে জঙ্গি অনুপ্রবেশের বিষয়টি সামনে চলে আসার পর পারস্পরিক সম্পর্কে তিক্ততা বেড়েছে।
এই অবস্থায় এসসিও-র শীর্ষ বৈঠকে নেওয়া যে বিস্তারিত যৌথ বিবৃতি আজ রাতে পেশ করা হয়েছে, তার বাস্তব মূল্য কতটুকু? এই প্রশ্নের উত্তরে বিদেশ মন্ত্রকের সচিব বিকাশ স্বরূপ বলেন, “পাকিস্তান সঙ্গে আসবে কি না সেটা সম্পূর্ণ ভাবেই তাদের উপর নির্ভর করছে। এসসিও-র নিয়মাবলিতেই রয়েছে, যদি কোনও দেশ যৌথ সহযোগিতায় বাধা দেয়, তা হলে তাকে ছাড়াই এগিয়ে যাওয়া হবে।’’ আজকের বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে তিনটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রথমত , নতুন বাণিজ্যিক উদ্যোগের জন্য বিশেষ ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করা। দুই, ভেষজ ওষুধের ক্ষেত্রটিতে গবেষণা ও উন্নয়ন ঘটানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া। তৃতীয়ত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এসসিওভুক্ত দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy