নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে নরেন্দ্র মোদী সরকার। দেশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীর শীর্ষ অফিসাররা একজোট হয়ে সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন। অভিযোগ, তাঁদের যে হারে বেতন পাওয়া উচিত, তা তাঁরা পাচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, দিনের পর দিন এই দরজা সেই দরজায় ঘুরেও কোনও সুরাহা মিলছে না। ফাইল চালাচালির ফাঁসে আটকে জেরবার হতে হচ্ছে তাঁদের। ফাইল এক বার নর্থ ব্লকের দোতলা থেকে তিনতলায় যাচ্ছে, এক বার তিনতলা থেকে দোতলায়।
নরেন্দ্র মোদী যেখানে লাল ফিতের ফাঁস কাটিয়ে প্রশাসনে গতি আনার কথা বলছেন, সেখানে শীর্ষ পুলিশ অফিসারদের এই অভিযোগ সরকারকে চরম অস্বস্তিতে ফেলেছে। ‘বঞ্চিত’ আইপিএস অফিসারদের মধ্যে রয়েছেন বিএসএফ-এর ডিজি ডি কে পাঠক, এনআইএ-র ডিজি শরদ কুমার, এসএসবি-র ডিজি বংশীধর শর্মা, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর দু’জন স্পেশ্যাল ডিরেক্টর রাজীব জৈন ও সুরেন্দ্র সিংহ এবং জাতীয় ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)-র ডিজি আর আর বর্মা। যে দু’টি মন্ত্রকের বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযোগ, তার একটি কর্মিবর্গ দফতর। অন্যটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রথমটি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীন। দ্বিতীয়টির মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। প্রশাসনের সকলেই মানছেন, শীর্ষ অফিসারদের এ রকম একজোট হয়ে কেন্দ্রের কাছে অভিযোগ জানানো বিরল ঘটনা।
কী নিয়ে ক্ষুব্ধ এই শীর্ষ আইপিএস-রা? ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ ও কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, ডিজি পদে মনোনীত হওয়ার পরেই এঁদের সকলেরই স্থায়ী বেতন হওয়া উচিত ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু এঁরা তা পাচ্ছেন না। তার বদলে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকার বেতনক্রমে আটকে রাখা হয়েছে তাঁদের। প্রবীণ আইপিএস অফিসারদের প্রতি সরকারের এই ‘বৈষম্য’ নিয়ে গোটা আইপিএস মহলেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁদের বক্তব্য, পুরোপুরি দাগহীন রেকর্ড থাকলে তবেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর ডিজি পদে মনোনয়ন মেলে। তার পরেও এই ধরনের বৈষম্য হলে সেটা বাকি অফিসারদেরও মনোবলে ধাক্কা দেয়।
মোদী সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা বলছেন, এই সমস্যার মূলে রয়েছে আইএএস বনাম আইপিএস-দের চিরকালীন সংঘাত। আইএএস-রা চিরকালই নিজেদের বাকি সরকারি অফিসারদের থেকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন বলে অভিযোগ। তা সে পুলিশ বা সেনাবাহিনীর কেউ হোক কিংবা কূটনীতিক। কেন্দ্রীয় সরকারের সচিব পদে থাকা আমলারা ৮০ হাজার টাকার স্থায়ী বেতন পান। এটাই সরকারি স্তরে সর্বোচ্চ বেতন। কিন্তু কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী ও গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলির পুলিশ বাহিনীর ডিজি-দেরও ওই হারে বেতন পাওয়ার কথা। এবং সেই সঙ্গে সচিবদের মতোই সরকারি সুযোগ-সুবিধা। নিয়ম থাকলেও আইএএস অফিসারদের লাল ফিতের ফাঁসে তা আটকে যায়।
তার ফল কী হয়েছে? শরদ কুমার দেড় বছর আগে ডিজি পদে বসেছেন। ডি কে পাঠক বিএসএফের শীর্ষ পদে বসেছেন এক বছর আগে। পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের বংশীধর শর্মারও এসএসবি পদে আট মাস হয়ে গিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দোরে দোরে ঘুরেও লাভ হয়নি। পরিস্থিতি এমনই যে এঁদের থেকে কম বয়সের অফিসাররা কোনও রাজ্য পুলিশের ডিজি হয়ে গিয়ে বেশি বেতন পাচ্ছেন। এক প্রবীণ আইপিএস অফিসারের বক্তব্য, “পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সীমান্তের দায়িত্বে রয়েছে বিএসএফ। এনআইএ যাবতীয় সন্ত্রাসবাদী হামলার তদন্ত করে। এসএসবি নেপাল-ভুটান সীমান্তের দায়িত্বে রয়েছে। এই সব বাহিনীর প্রধানরা নিজেদের কাজ সামলাবেন না বেতনের ফাইল হাতে নর্থ ব্লকের দরজায় দরজায় ঘুরবেন?”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামীর সময় থেকে এই সমস্যার শুরু। তখন থেকেই কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বেতন নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ উঠতে শুরু করে। গোস্বামী পদ ছাড়ার পরে নতুন স্বরাষ্ট্রসচিব এল সি গয়ালের কাছেও একই অভিযোগ জমা পড়েছে। এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “সরকার এই সমস্যা সম্পর্কে অবহিত। এমন ঘটনা সত্যিই আগে ঘটেনি। আমরা চাই না, আইপিএস-দের সঙ্গে এই ধরনের সমস্যা হোক। গোটা বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা হচ্ছে।” এখনও অবশ্য ফল মেলেনি। সরকারি সূত্রের খবর, ডি কে পাঠক ও শরদ কুমারের ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে কর্মিবর্গ দফতরে গিয়েছিল। কর্মিবর্গ দফতর কিছু প্রশ্ন তোলায় সেই ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে ফেরত এসেছে। এক আইপিএস অফিসার এ প্রসঙ্গে বলেন, “সরকারের বোঝা উচিত এটা শুধু অর্থের বিষয় নয়। এর সঙ্গে সম্মানের প্রশ্ন জড়িত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy