বুধবার রাতে গুলাম নবি আজাদের বাড়িতে বৈঠকের পরে কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতারা বিবৃতি দিয়ে হাইকমান্ড সংস্কৃতি বিসর্জন দেওয়ার দাবি তুলে বলেছিলেন, সব স্তরে দলের মধ্যে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ফাইল চিত্র।
২০২৪-এ বিজেপির বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের নেতৃত্বেই কংগ্রেসকে লড়তে হবে। পঞ্জাবে আম আদমি পার্টির নেতৃত্বেই তাদের লড়তে হবে। বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসের সংগঠনের যা হাল, তাতে এই আপস করতেই হবে বলে আজ যুক্তি দিলেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম।
বুধবার রাতে গুলাম নবি আজাদের বাড়িতে বৈঠকের পরে কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতারা বিবৃতি দিয়ে হাইকমান্ড সংস্কৃতি বিসর্জন দেওয়ার দাবি তুলে বলেছিলেন, সব স্তরে দলের মধ্যে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কংগ্রেসকে সমমনস্ক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে হবে। যাতে ২০২৪-এ বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প মঞ্চ তৈরি করা যায়। এই দাবির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফের কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতাদের গোষ্ঠীর কয়েক জন সেই গুলাম নবির বাড়িতেই বৈঠকে বসেছেন। অন্য দিকে গান্ধী পরিবারের তরফে বিক্ষুব্ধ নেতাদের অন্যতম ভূপেন্দ্র হুডাকে জি-২৩ থেকে বার করে আনার চেষ্টা শুরু হয়েছে। আজ রাহুল গান্ধী ভূপেন্দ্রের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। হুডা তার পরেই গুলাম নবির বাড়িতে যান। সন্ধ্যার বৈঠকেও তিনি হাজির ছিলেন।
খাতায়-কলমে জি-২৩ গোষ্ঠীর সদস্য না হলেও চিদম্বরম আজ কার্যত তাঁদের সুরেই যুক্তি দিয়েছেন। আরও এক ধাপ এগিয়ে যে সব রাজ্যে কংগ্রেস দুর্বল, সেখানে আঞ্চলিক দলের নেতৃত্ব মেনে নিয়ে কংগ্রেসকে আপস করতে হবে বলে যুক্তি দিয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, গোয়ায় নির্বাচনে চিদম্বরম কংগ্রেসের বিশেষ পর্যবেক্ষক ছিলেন। এবং ভোটের ঠিক আগে তৃণমূলের বোঝাপড়ার প্রস্তাব কংগ্রেস প্রত্যাখ্যান করেছিল। উত্তরপ্রদেশ, গোয়া, পঞ্জাব-সহ পাঁচ রাজ্যে কংগ্রেসের ভরাডুবির পরে চিদম্বরম আজ বলেছেন, বহু জায়গায় কংগ্রেসের কোনও নেতাই নেই। গোয়ায় গিয়ে তিনি দেখেছেন, শুধু খাতায়-কলমে ব্লক কমিটি ছিল। সব ভেঙে নতুন করে সংগঠন গড়তে হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে সংগঠন মুছে গিয়েছে। নির্বাচনে লড়তে হলে প্রথমে সংগঠন তৈরি করতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে সংগঠন গড়ে তোলা ও ভোটে লড়াই সম্ভব নয়। কার্যত বিক্ষুব্ধদের পাশে দাঁড়িয়ে চিদম্বরম বলেন, ‘‘কপিল সিব্বল, গুলাম নবি আজাদও এই সাংগঠনিক দুর্বলতার কথাই বলছেন।’’
বুধবার রাতে গুলাম নবিদের বিবৃতির বক্তব্য ছিল, কংগ্রেসের সামনে এখন একমাত্র রাস্তা হল সবাইকে নিয়ে নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্তগ্রহণ। মুখে না বললেও তাঁদের আঙুল রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের নেতাদের দিকে। অভিযোগ, কে সি বেণুগোপাল, রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা, অজয় মাকেন, কে রাজু, সচিন রাওয়ের মতো নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে রাহুল পিছন থেকে দল চালাচ্ছেন। তাঁদের সরাতে হবে।
রাহুল আজ বিক্ষুব্ধদের অন্যতম, ভূপেন্দ্র সিংহ হুডার সঙ্গে নিজের বাড়িতে বৈঠক করেন। হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র গান্ধী পরিবারের জামাই রবার্ট বঢরার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তাঁর ছেলে দীপেন্দ্র আবার প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের প্রচারে ঘুরেছেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, ভূপেন্দ্রর ক্ষোভ মেটাতে তাঁর ছেলেকে হরিয়ানার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করা হতে পারে। গান্ধী পরিবার মনে করছে, বিক্ষুব্ধদের মধ্যে একমাত্র ভূপেন্দ্ররই নিজস্ব জনসমর্থন রয়েছে। তাঁকে সরিয়ে আনলে জি-২৩ দুর্বল হয়ে যাবে। রাহুলের সঙ্গে বৈঠকের পরেই ভূপেন্দ্র গুলাম নবির বাড়িতে ছোটায় প্রশ্ন উঠেছে, তাঁর মাধ্যমে কি গান্ধী পরিবার দৌত্যের চেষ্টা করছে?
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, বাকিদের সঙ্গে বোঝাপড়া সম্ভব হলেও কপিল সিব্বলের বিরুদ্ধে শাস্তির খাঁড়া নেমে আসতে পারে। কারণ তিনি প্রকাশ্যে গান্ধী পরিবারের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবি তুলেছিলেন। আজ পঞ্জাবের সাংসদ রভনীত সিংহ বিট্টু, ছত্তীসগঢ়ের মন্ত্রী টি এস সিংহ দেও দাবি তুলেছেন, সিব্বলকে দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত। সিব্বল অবশ্য এ দিনও রাতে গুলাম নবির বাড়ির বৈঠকে হাজির ছিলেন।
আজ গুলাম নবির বাড়িতে আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে ভূপেন্দ্র হুডা, কপিল সিব্বল, আনন্দ শর্মারা হাজির ছিলেন। আজ গুলাম নবির সঙ্গে সনিয়া গান্ধীর বৈঠকের কথা থাকলেও তা হয়নি। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই বৈঠক হতে পারে। জি-২৩ সূত্রের ইঙ্গিত, এখনও আলোচনার মাধ্যমে সঙ্ঘাত মেটানো সম্ভব। চিদম্বরম জি-২৩ নেতাদের আর্জি জানিয়েছেন, তাঁরা যেন দল না ভাঙেন। নিজের এলাকায় সংগঠন তৈরির কাজ করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy