খাতায়-কলমে এনডিএ-র শরিক না হলেও গত দশ বছর ধরে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ রেখেই চলতেন নবীন পট্টনায়ক। তাঁর বিজু জনতা দল (বিজেডি)-ও সংসদে মোদী সরকারের বিরোধিতার রাস্তায় হাঁটত না।
এ বার সেই বিজেপিই নবীন সরকারকে হটিয়ে ওড়িশার ক্ষমতা দখল করায় বিজেডি নেতারা মনে করছেন, ওই রাজ্য থেকে বিজেপি তাঁদের সমূলে উৎখাত করতে চাইছে। আর তাই এখন কংগ্রেস ও তৃণমূলের সঙ্গে বিজেডিও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পর্যালোচনার দাবি তুলেছে। ডিএমকে, কংগ্রেসের সঙ্গে লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস নিয়েও সরব হতে রাজি হয়েছেন ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন, যিনি লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে নাম লেখাতে রাজি হননি।
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে ওড়িশার বিধানসভা ভোট হয়েছিল। সেখানে নবীনের দল ক্ষমতা হারায়। লোকসভায় একটি আসনও জিততে পারেনি। আজ বিজেডি সাংসদেরা নির্বাচন কমিশনের কাছে দরবার করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, লোকসভা ও বিধানসভার ভোটগ্রহণের হিসাবে বিপুল ফারাক ধরা পড়েছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থাগত অডিট, ইভিএমের ভোটের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের ভোটের হিসাব মেলানো উচিত। আজ রাজ্যসভায় তৃণমূলের সঙ্গে বিজেডির সাত জন সাংসদই ভোটার তালিকায় কারচুপি নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাবের নোটিস দিয়েছিলেন। রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ সম্মতি না দেওয়ায় তাঁরাও ওয়াক-আউট করেন।
অন্য দিকে, ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিন লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির প্রতিনিধিত্ব কমে যাবে বলে সরব হয়েছেন। এ জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে তিনি যৌথ কমিটি তৈরি করতে চাইছেন। ডিএমকে সাংসদ দয়ানিধি মারানের নেতৃত্বে দলের সাংসদরা আজ ভুবনেশ্বরে গিয়ে এই কমিটিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালে নবীন তাতে রাজি হয়েছেন। বিজেডি সাংসদ সস্মিত পাত্রের অভিযোগ, বিজেপি ওড়িশা থেকে তাঁদের দলকে শেষ করার ষড়যন্ত্র করছে। বিজু পট্টনায়কের উত্তরাধিকার মুছে ফেলার চেষ্টা করছে।
নবীনের দল ভোটার তালিকা থেকে আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে সরব হওয়ায় বিরোধী ঐক্য আরও মজবুত হয়েছে। কংগ্রেস আজ আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে দক্ষিণ ভারতের পাশাপাশি ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিত্ব কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান সোমবার ডিএমকে সাংসদদের ‘অসভ্য’ বলেছিলেন। তা নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে রাজ্যসভায় শিক্ষামন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করেছেন। ডিএমকে সাংসদরা আজ এর বিরুদ্ধে সংসদ চত্বরে বিক্ষোভ দেখান। সেখানে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও যোগ দিয়ে বলেন, হয় শিক্ষামন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে, না হলে তাঁকে মন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)