Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
COVID Warriors

কোভিড যোদ্ধাদের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার জীবনবিমার প্রকল্প বন্ধ করে দিল কেন্দ্র

প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায় পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিনামূল্যে বাড়তি রেশনের প্রকল্পও এর আগে চুপিসাড়ে বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২১ ০৬:২৩
Share: Save:

দেশে দিনে নতুন কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা পেরিয়েছে দেড় হাজার। কোভিড রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার-নার্সরা। দু’ডোজ প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও দিল্লি-সহ বহু শহরের ডাক্তার-নার্সরা নিজেরাই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। অথচ এরই মধ্যে ‘কোভিড-যোদ্ধা’ ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার জীবনবিমার প্রকল্প বন্ধ করে দিল মোদী সরকার। এক সময় যে করোনা-যোদ্ধাদের সম্মান জানাতে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এমনকি হেলিকপ্টার থেকে পুষ্পবৃষ্টি করা হয়েছিল দিল্লি এমস-সহ কয়েকটি হাসপাতালে।

গত বছর লকডাউন ঘোষণার পরেই মোদী সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করেছিল, কোভিডের মোকাবিলায় সামনের সারিতে থাকা ডাক্তার-নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, নিকাশি কর্মী, আশা কর্মীদের বিমার আওতায় নিয়ে আসা হবে। কোভিডের মোকাবিলা করতে গিয়ে এই সমস্ত কর্মীদের মধ্যে কারও মৃত্যু হলে, তাঁর পরিবার ৫০ লক্ষ টাকা পাবেন। এখনও পর্যন্ত মাত্র ২৮৭ জন ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীর পরিবার ৫০ লক্ষ টাকার বিমার সুবিধা পেয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রক অবশ্য ফেব্রুয়ারি মাসে সংসদে জানিয়েছিল, ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া হিসেবে ৪৮৯ জন ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীর কোভিডে মৃত্যু হয়েছে। এঁদের মধ্যে ডাক্তার ১৭৪ জন, নার্স ১১৬ জন ও স্বাস্থ্যকর্মী ১৯৯ জন।

গত বছরের ২৬ মার্চ কোভিড ও লকডাউনের মোকাবিলায় ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা’ ঘোষণার সময়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছিলেন, সামনের সারিতে থাকা কর্মীরা নিজেদের কতখানি ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন, তা সরকার ভোলেনি। সেই কারণেই এই বিমা প্রকল্প। অনেকের মতে, সেই সময়ে মোদী সরকারের ধারণা ছিল, তিন মাসেই কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করে ফেলা যাবে। তাই প্রাথমিক ভাবে ২০২০ সালের ৩০ মার্চ থেকে তিন মাসের জন্য এই বিমার সুবিধা চালু হয়। কিন্তু পরে তার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের ২৪ মার্চ করা হয়।

সরকারি সূত্রের খবর, ওই দিনই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের বিমা প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়ানো হচ্ছে না। ২৪ মার্চের আগে কারও মৃত্যু হলে, তাঁর পরিবার বিমার টাকা পাবেন। ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত নথি জমা করা যাবে। কেন বিমার মেয়াদ আর বাড়ানো হচ্ছে না, তার কোনও ব্যাখ্যা অবশ্য ওই চিঠিতে নেই। তবে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীকে যে ইতিমধ্যেই কোভিডের প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে, তার উল্লেখ রয়েছে চিঠিতে। সরকারের দাবি, এই বিমা থাকার ফলে ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা মানসিক ভাবে কোভিড রোগীর চিকিৎসার সময়ে মানসিক জোর পেয়েছেন। কিন্তু প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও যে ডাক্তার-নার্সরা এখন কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন, তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে বাকিদের উপর প্রবল কাজের চাপ পড়ছে।

প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায় পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিনামূল্যে বাড়তি রেশনের প্রকল্পও এর আগে চুপিসাড়ে বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। বিমার টাকা মিলছে না বলে আগেই ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ তুলেছিল। প্রশ্ন উঠেছে, খরচ কমাতেই কি এ বার স্বাস্থ্যকর্মীদের বিমার প্রকল্পও বন্ধ করে দেওয়া হল? অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, স্বাস্থ্যকর্মীদের বিমার জন্য কোনও খরচ দিতে না-হলেও, সরকারকে নিউ ইন্ডিয়া অ্যাসিওরেন্স কোম্পানি থেকে বিমা কিনতে হচ্ছিল। চলতি আর্থিক বছরে সেই খরচের দায় আর থাকছে না। দেশে সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যখন দিনরাত এক করছেন কোভিড-যোদ্ধারা, তখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের মুখে এই সিদ্ধান্ত।

অন্য বিষয়গুলি:

Central Government life insurance COVID Warriors
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy