—ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজকুমার সিংহের সামনেই পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র অভিযোগ করলেন, কেন্দ্র ‘পিছনের দরজা’ দিয়ে ‘পছন্দের শিল্পপতি’-দের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ঢোকার রাস্তা তৈরি করতে দিতে চাইছে বলেই বিদ্যুৎ আইনে সংশোধন করে মাসুল বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ আইনে সংশোধন করে কেন্দ্র নিজের হাতে ক্ষমতা তুলে নিতে চাইছে বলে রাজ্যগুলির অভিযোগ। এ বিষয়ে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টাতেই সব রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে বৈঠক ডেকেছিলেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই এ বিষয়ে আপত্তি তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। আজ ভরা হাটে, সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও বিদ্যুৎমন্ত্রীদের সামনে অমিত মিত্র মোদী সরকারের মনোবাঞ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তিরের মুখে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী তাঁকে বলেন, তিনি নিজে কলকাতায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। তিনি বলেন, “দিদি আমাকে চেনেন। উনি যখন কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেন, তখন আমি কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলাম। আমি নিজেই গিয়ে ওঁর সঙ্গে কথা বলব।”
বিদ্যুৎ আইনে সংশোধন করে কেন্দ্র নিশ্চিত করতে চাইছে, বিদ্যুতের মাসুল যেন বিদ্যুৎ তৈরির খরচ অনুযায়ীই ঠিক হয়। অমিতবাবু যুক্তি দেন, বিদ্যুৎ কোনও বাজারি পণ্য নয় যে তার দাম তৈরির খরচ অনুযায়ী ঠিক হবে। এটা জনসাধারণের ব্যবহারের পণ্য। সেখানে গরিব মানুষের জন্য কম মাসুল রাখতেই হবে। সরকারকে সুরাহা দিতেই হবে।
আজ বৈঠকের শুরুতেই কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী জানিয়ে দেন, মোদী সরকারের লক্ষ্য হল বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলিকে স্বাবলম্বী ও লাভজনক করে তোলা। লকডাউনের জেরে আর্থিক সমস্যার জন্য ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের অঙ্গ হিসেবে রাজ্যের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির জন্য ৯০ হাজার কোটি টাকার নগদ ঋণ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। আজ তা বাড়িয়ে ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী। কিন্তু তাতেও রাজ্যগুলির মন গলেনি। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলিও জোরালো আপত্তি তুলেছে
আইন সংশোধনের।
কেন্দ্রের প্রস্তাব— শিল্প ও ব্যবসার জন্য বেশি মাসুল, গরিব ও চাষির জন্য কম মাসুল, এই পারস্পরিক ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে। অমিতবাবু বৈঠকে পাল্টা যুক্তি দেন, এক এক রাজ্যে জনসংখ্যা এক এক রকম। কোনও রাজ্যে কৃষকের সংখ্যা অনেক বেশি। গোটা দেশে একই রকম মাসুল নীতি চলতে পারে না। সরকারকে সেখানে সুরাহা দিতেই হবে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ব্যবসা লাভজনক না হলে চলছে কী করে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে ৭৫ লক্ষ থেকে বেড়ে ২ কোটি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে গেল কী করে? কলকাতা থেকে লোডশেডিং বিদায় নিল কী ভাবে? প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, তিনি নিজেই কলকাতা যাবেন।
বৈঠকের পরে রাজকুমার বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কিছু ভুল ধারণা ছিল, তা আমরা দূর করার চেষ্টা করেছি। তবে এটা আলোচনার প্রথম ধাপ। এর পরে রাজ্যওয়াড়ি ঘুরে ঘুরে বিলের খসড়া নিয়ে আলোচনা হবে।” রাজ্য সরকার অবশ্য নিজের অবস্থানে অনড়। অমিতের যুক্তি, রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে নিয়োগের ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নিতে চাইছে কেন্দ্র। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় স্তরে পৃথক কর্তৃপক্ষ তৈরি করতে চাইছে। তার বদলে রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকেই আরও ক্ষমতা দেওয়া যেত। কেন্দ্রের পদক্ষেপকে রাজ্যের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী বলেও আখ্যা দেন অমিতবাবু। তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়। অথচ কেন্দ্র রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না-করেই বিলের খসড়া তৈরি করেছে। রাজ্যের মতামত জানানোর জন্য মাত্র ২১ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy