—ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা নথি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওয়েবসাইট থেকে সরানোর পরে কেটে গিয়েছে দেড় দিন। এখনও এ নিয়ে নীরব প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্যে নারাজ রাজনাথ সিংহের মন্ত্রক। যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, এ ভাবে তথ্য গোপন করার অভিযোগ মোদী সরকারের বিরুদ্ধে নতুন নয়। অতীতে রাফাল বিতর্ক থেকে বেকারত্বের হার, কৃষক আত্মহত্যার পরিসংখ্যান থেকে নোটবাতিলের ফলে ফেরত আসা কালো টাকার অঙ্ক— সবেতেই তথ্য গোপনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে।
সেনা সূত্রের মতে, কী ভাবে ওই নথি মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে সে দিন আপলোড হল, বিশেষ করে যাঁর উপর তথ্যপঞ্জি চূড়ান্ত করে তা প্রকাশের দায়িত্ব ছিল সেই ব্যক্তির ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ, গোটা ঘটনাটি খোদ প্রধানমন্ত্রীকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। মূলত ওই নথির ফলে তিনিই মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন হয়েছেন। বিজেপি শিবির ঘরোয়া ভাবে বলছে, নেহাত সংসদ বন্ধ। চালু থাকলে বিরোধীরা এ নিয়ে সরকারকে জেরবার করে দিত। কারণ, ওই নথি আর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী। তড়িঘড়ি তাই সেটা গায়েব করে দেওয়া হল।
প্রধানমন্ত্রী গত জুন সর্বদলীয় বৈঠকে জানান, ভারতীয় ভূখণ্ডে কেউ অনুপ্রবেশ করেনি। কোনও পোস্টও কেউ দখল করেনি। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নথিতে বলা হয়েছে, মে মাসের গোড়া থেকেই গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনার আগ্রাসন দেখা যাচ্ছিল। চিনা সেনা ১৭-১৮ মে কুগরং নালা, গোগরা ও প্যাংগং লেকের উত্তর প্রান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে। পরে ওই নথি ওয়েবসাইট থেকে উধাও হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: নতুন শিক্ষানীতি: নজরে সেপ্টেম্বর
এ নিয়ে রাহুল গঁাধীর প্রশ্ন ছিল, প্রধানমন্ত্রী কেন মিথ্যা কথা বলছেন? আর আজ এই ‘ডিলিট স্কান্ড্যাল’-এর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস যুব মোর্চা। তাদের মুখপাত্র রাহুল রাও বলেন, ‘‘ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে দেশবাসীর সত্য জানার অধিকার রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে মোদী সরকার তথ্য গোপন করে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করেছে।’’
প্রথম দফাতেও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক বার তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছিল। বিশেষ করে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে
তুঙ্গে উঠেছিল রাফাল বিতর্ক। কেন রাফাল বেশি দামে কেনা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হন রাহুল গাঁধী। সরকার রাফালের দাম প্রকাশ্যে না-বলার নীতি নিলেও, রাফালের দাম সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। জানা যায়, এক্তিয়ার-বহির্ভূত ভাবে ফরাসি সংস্থার সঙ্গে দর কষাকষি করেছিল প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল সুপ্রিম কোর্টে বলেছিলেন, ওই তথ্য বেআইনি ভাবে ফাঁস করা হয়েছিল।
ক্ষমতায় আসার আগে দেশে প্রতি বছর দু’কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু প্রথম পাঁচ বছরে দেশে কী সংখ্যক কর্মসংস্থান হয়েছে, জানা নেই কারও। অভিযোগ, সেই তথ্য প্রকাশিতই হতে দেয়নি সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, ‘‘সত্যিটা বেরিয়ে এলে সরকারের অস্বস্তি বাড়ত। তাই চেপে দেওয়া হয়।’’ পরিস্থিতির চাপে পড়ে দেশের পরিসংখ্যান কমিশনার পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয় পিসি মোহনন-কে। তাঁদের কাজে মোদী সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলেন তিনি। সরকারের তথ্য গোপনের প্রবণতা নিয়ে সোনীপতের ওপি জিন্দল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাজেটের প্রতিটি পয়সার জন্য সরকার দেশবাসীর কাছে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য। কিন্তু এই সরকারের তথ্য গোপনের প্রবণতার কারণে প্রকৃত তথ্য ও পরিসংখ্যান পাওয়া ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। যার ফলে সরকারের পরিকল্পনায় খামতি থেকে যেতে বাধ্য। তথ্যনির্ভর না হয়ে এই সরকার তথ্যবিকৃতির উপর জোর দিচ্ছে।’’ ইন্দ্রনীলের দাবি, গণতন্ত্রের স্বার্থে অবিলম্বে তথ্য অধিকার আইন, লোকপাল ও সিএজি-কে আরও শক্তিশালী করা উচিত। যদিও গত পাঁচ বছরে সরকার এই সংস্থাগুলিকে আরও দুর্বল করে দেওয়ার পথে হেঁটেছে বলেই দাবি বিরোধীদের।
আরও পড়ুন: ‘রক্তে ভিজে গেল আমার হাত’
নোট বাতিলের পরে দেশের বেকারত্ব নিয়ে রিপোর্ট সরকারি ভাবে দিনের আলো দেখেনি। পরে ফাঁস হয়ে
গেলে দেখা যায়, ৪৫ বছরের ইতিহাসে ভারতে সামগ্রিক বেকারত্ব মোদী সরকারের আমলে শীর্ষে পৌঁছেছিল। যাতে অস্বস্তিতে পড়তে না-হয়, তার জন্য কৃষক আত্মহত্যার পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি সরকার। অভিযোগ, নিজেদের কাজ গোপন করতে মোদী সরকার এতটাই মরিয়া যে, সুপ্রিম কোর্টে চলা অধিকাংশ মামলায় সরকারের পক্ষ থেকে মুখবন্ধ খাম দেওয়া হয়। মামলার সঙ্গে জাতীয় সুরক্ষার কোনও সম্পর্ক না থাকলেও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় মোদী সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy