কৃষি আইন নিয়ে বৈঠকের বিরতিতে কেন্দ্রের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজের প্রস্তাব ফিরিয়ে নিজেদের আনা খাবারই খেলেন কৃষক নেতারা। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই
তিন বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারে রাজি না-হলেও আইনে কিছু সংশোধন করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিল মোদী সরকার। কিন্তু কৃষক সংগঠনের নেতারা জানিয়ে দিলেন, শুধু সংশোধন নয়। তিনটি আইনই প্রত্যাহার করতে হবে।
কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে মোদী সরকারের মন্ত্রীদের সাত ঘণ্টারও বেশি ম্যারাথন বৈঠকের পরেও আজ তাই রফাসূত্র অধরাই রইল। ঠিক হয়েছে, শনিবার ফের বৈঠক হবে। সেখানেই চূড়ান্ত সমাধানসূত্র মিলবে বলে কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর আশা প্রকাশ করেছেন। উল্টো দিকে কৃষক নেতাদের দাবি, শনিবারই তিন আইন প্রত্যাহার নিয়ে সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে তিন কৃষি আইনের প্রয়োজনীয়তা কৃষক সংগঠনের নেতাদের সামনে তুলে ধরা হয়। তার আগেই সকালে কৃষক সংগঠনগুলি তিন আইন নিয়ে লিখিত ভাবে তাদের আপত্তি সরকারকে জানিয়েছিল। বৈঠকে সরকারের তরফে অনেক ক্ষণ ধরে বোঝানোর পরেও কৃষক সংগঠনগুলি তাদের আপত্তিতে অনড় থাকে। কেন আইন প্রত্যাহার করা উচিত, একে একে সেই যুক্তি তুলে ধরেন কৃষকরা।
আরও পড়ুন: ‘চাষিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’র প্রতিবাদে পদ্মবিভূষণ ফেরালেন প্রকাশ সিংহ বাদল
বৈঠকে আসার আগেই কৃষিমন্ত্রী তোমর, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক করে এসেছিলেন। সূত্রের খবর, বৈঠকে কৃষক নেতারা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকায় মন্ত্রীরা নিজেদের মধ্যে কিছু আলোচনা করেন। তাঁরা অমিত শাহর সঙ্গে ফোনেও কথা বলেন। তার পরেই আইনে সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কী সেই প্রস্তাব?
তিন কৃষি আইন নিয়ে পঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকদের প্রধান সংশয়, সরকার ভবিষ্যতে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপিতে চাল-গম কিনবে কি না। তা নিয়েই আইনে লিখিত প্রতিশ্রুতি চাইছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পৌনে ৮টা পর্যন্ত বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর জানান, ‘‘এমএসপি চলছে, চলবে। তাতে কোনও বদল হবে না।’’ চাষিদের উদ্বেগ দূর করার ক্ষেত্রে সরকার কোনও ‘ইগো’ নিয়ে চলছে না বলেও তোমরের মন্তব্য।
আরও পড়ুন: ‘লাভ জেহাদ’-এর প্রথম গ্রেফতারি যোগী রাজ্যে
পঞ্জাব সরকারের বক্তব্য ছিল, এপিএমসি-র আওতায় মান্ডিতে ফসল কেনাবেচার উপরে কর বসিয়ে রাজ্যের বিপুল আয় হয়। কৃষি পরিকাঠামো তৈরিতেই সেই টাকা খরচ হয়। কেন্দ্র এপিএমসি-র বাইরে বেসরকারি সংস্থার মান্ডিতে ফসল বেচার সুযোগ করে দিলে রাজস্বের ক্ষতি হবে। তোমর জবাবে বলেন, ‘‘এপিএমসি-কে আরও মজবুত করা হবে। এপিএমসি-র বাইরে বেসরকারি মান্ডিতেও একই রকম কর আদায় হবে।’’
এ ছাড়া সরকারি সূত্রের খবর, ৩ বা ৫ একরের কম জমির মালিক বা ছোট-মাঝারি চাষিদের জন্য এমএসপি-র নিশ্চয়তা দিয়ে সরকারি নির্দেশিকা জারির কথা ভাবা হতে পারে। এপিএমসি-র বাইরে ফসল কেনার জন্য ব্যবসায়ীদের নথিভুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক করা হবে বলেও তোমর বৈঠকে জানান।
চুক্তি চাষের ক্ষেত্রে কর্পোরেট সংস্থার সঙ্গে চাষিদের বিবাদ হলে, মহকুমা শাসক পর্যন্ত নালিশ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে কৃষি আইনে। চাষিরা আদালতে যাওয়ারও ক্ষমতা চেয়েছেন। এ ক্ষেত্রেও আইনে সংশোধনের ইঙ্গিত দিয়েছেন তোমর।
দিল্লিতে বায়ূদূষণ রুখতে রাজধানী ও আশপাশের রাজ্যে খড় পোড়ানোয় শাস্তির ব্যবস্থা করে অক্টোবরে কেন্দ্রীয় সরকার অধ্যাদেশ জারি করেছে। তাতে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের শাস্তি রয়েছে। তা নিয়েও কৃষকদের আপত্তি রয়েছে। বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল এনে কেন্দ্রীয় সরকার চাষিদের বিদ্যুতে ভর্তুকি তুলে দিতে চাইছে বলেও কৃষক সংগঠনগুলি অভিযোগ করেছে। তা নিয়েও মন্ত্রীরা তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন।
কিন্তু এর পরেও কৃষক নেতারা বিল প্রত্যাহারের দাবিতেই অনড় থেকেছেন। এমনকি বৈঠকের মাঝখানে বিরতিতে বিজ্ঞান ভবনের সরকারি খাবার খেতেও অস্বীকার করেন তাঁরা। বাইরে অপেক্ষায় থাকা গাড়ি থেকে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয় তাঁদের কাছে। তাঁরা জানিয়ে দেন, কোনও সংশোধন তাঁরা মানবেন না। তিনটি আইনই প্রত্যাহার করতে হবে। কৃষক নেতা বলদেব সিংহ সিরসা বলেন, ‘‘সরকারকে মানতে হয়েছে আইনে ত্রুটি রয়েছে। তাঁরা সংশোধন করবেন। কিন্তু আমরা বলে দিয়েছি, সংশোধন নয়, আইন প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা বলেছি, এমএসপি-র গ্যারান্টি নিয়ে আইন চাই।’’
এ দিনও রফাসূত্র বার না হওয়ায় দিল্লির সীমানায় চাষিদের আন্দোলন বজায় রইল। কৃষিমন্ত্রী অবশ্য এ দিনও দিল্লির ঠান্ডা ও রাস্তা অবরোধের ফলে সাধারণ মানুষের হেনস্থার কথা ভেবে আন্দোলন তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। তাঁর বক্তব্য, সরকার আলোচনা করছে। শনিবারই চূড়ান্ত রফাসূত্র বার হবে। অন্য দিকে কৃষক নেতা হরজিন্দর সিংহ টান্ডা বলেন, শনিবার সরকারকে আইন প্রত্যাহার করতে হবে।
এ দিন উত্তরপ্রদেশ-দিল্লি সীমানার গাজিপুরে আরও কৃষক জমায়েত হওয়ায় গাড়ি চলাচল পুরোপুরিই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হরিয়ানা-দিল্লির সিংঘু সীমানায় নীল আঙরাখা, অস্ত্রে সজ্জিত শিখ যোদ্ধা সম্প্রদায় নিহঙ্গ শিখরাও এসে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে পঞ্জাবের সাংসদ, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী সোমপ্রকাশের আশা, শনিবারই আন্দোলনে ইতি পড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy