প্রতীকী ছবি।
ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাস। সেই মরিশাসেরই ছোট্ট দ্বীপ অ্যাগালেগা। মেরেকেটে ৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকা। নারকেল গাছে ঘেরা সবুজ দ্বীপে শ’তিনেক মানুষের বাস।
নরেন্দ্র মোদী সরকার এ বারের বাজেটে সেই অ্যাগালেগা দ্বীপ তথা মরিশাসের জন্য ১১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে! অঙ্কটা নেহাত কম নয়। কারণ এ বার বাজেটে প্রধানমন্ত্রী কৃষক পেনশন যোজনার জন্যই বরাদ্দ হয়েছে ৯০০ কোটি টাকা।
কেন এই বিপুল বরাদ্দ?
অর্থ মন্ত্রকের সূত্রের ব্যাখ্যা, এই মরিশাস হয়েই গত দু’দশক ধরে ভারতে সব থেকে বেশি বিদেশি লগ্নি ঢুকছে। যার একটা বড় অংশ এ দেশের কালো টাকা। ‘মরিশাস রুট’ বা ভায়া মরিশাস ফের বিদেশি লগ্নির মুখোশ পড়ে এ দেশের শেয়ার বাজারে লগ্নি হচ্ছিল। কালো টাকা রাতারাতি সাদা হয়ে যাচ্ছিল। চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ভারত-মরিশাস নতুন কর চুক্তি চালু হয়েছে। তাতে মরিশাস হয়ে এ দেশে লগ্নি কর ফাঁকি দেওয়া বন্ধ হবে।
এতে মরিশাসের ব্যাঙ্ক, আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্রে ধাক্কা লাগবে বলে সে দেশের সরকারের আপত্তি ছিল। সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিতেই মরিশাসে পরিকাঠামো তৈরিতে বিপুল লগ্নি করছে নয়াদিল্লি। গত বছর বিদেশ মন্ত্রকের বাজেটে মরিশাসের জন্য ৩৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। এ বার তার তিন গুণের বেশি, ১১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। অ্যাগালেগা দ্বীপে বিমানঘাঁটি ও বন্দর তৈরি হবে। দু’টি ভারতীয় সংস্থাকে তার বরাতও দেওয়া হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এতে মরিশাসের যেমন লাভ, তার থেকেও বেশি লাভ ভারতের। বিমানঘাঁটি, বন্দর তৈরি হলে মরিশাসের পর্যটন, বাণিজ্য বাড়বে। কিন্তু বিমানঘাঁটি, বন্দরের মোড়কে সেখানে ভারতের সামরিক শক্তি জোরদার হবে। চিন ভারত মহাসাগরে একের পর এক ঘাঁটি তথা ‘স্ট্রিং অফ পার্লস’ তৈরি করে ভারতকে ঘিরে নজরদারির কৌশল নিয়েছে। অ্যাগালেগায় ভারতের ঘাঁটি হবে তার পাল্টা জবাব। পশ্চিম এশিয়া থেকে আসা তেলের জাহাজের পথেই এই অ্যাগালেগা দ্বীপের অবস্থান। সেখানে ভারতীয় নৌসেনার শক্তি বাড়লে নয়াদিল্লিরই লাভ।
সরকারি কর্তারা বলছেন, বস্তুত মরিশাস সরকারই ভারতের হাতে অ্যাগালেগা দ্বীপ ‘তুলে দেওয়ার’ প্রস্তাব দিয়েছিল। সঙ্গে আর্জি ছিল, ভারত যাতে ১৯৮২-র পুরনো কর-চুক্তি না বদলায়। কিন্তু কালো টাকার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা মোদী সরকার তাতে রাজি হয়নি। তাই ২০১৭-তে পুরনো কর চুক্তিতে সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়।
কী ছিল পুরনো চুক্তি?
একই সংস্থাকে যাতে দু’বার কর দিতে না হয়, তার জন্য ভারত-মরিশাসের চুক্তিতে বলা ছিল, মরিশাসের কোনও সংস্থা এ দেশে শেয়ার বাজারে লগ্নি করে মুনাফা করলে কোনও কর দিতে হবে না। অথচ মরিশাসেও এই কর দিতে হত না। সেই সুবিধা নিতে শুধু কালো টাকার কারবারিরা নয়, আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানির সংস্থাগুলিও খাতায়-কলমে মরিশাসে কোম্পানি খুলে ভারতে লগ্নি করত। ২০১৭-তে সেই চুক্তি সংশোধনের পর, গত দু’বছর অর্ধেক হারে কর বসেছে। ১ এপ্রিল থেকে পুরো হারে কর চাপছে। ফলে মরিশাস থেকে বিদেশি লগ্নি আর লাভজনক থাকছে না। মরিশাসের এই ক্ষতিপূরণেই সবুজ অ্যাগালেগা দ্বীপে তৈরি হচ্ছে নতুন বিমানঘাঁটি ও নতুন বন্দর। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মরিশাসের থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ভারতে বেশি বিদেশি লগ্নি ঢুকছে। সিঙ্গাপুরে কর ফাঁকি দেওয়া যাবে এমন নয়। কিন্তু সে দেশে ব্যবসার পরিবেশ অনেক সহজ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy