—ফাইল চিত্র
বৈঠকের মাঝেই প্রায় পৌনে দু’ঘন্টার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছিলেন!
তিন কৃষি আইন নিয়ে মোদী সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে সোমবারের বৈঠক নিয়ে এমনই অভিযোগ তুলেছেন কৃষক নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর ও খাদ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল কৃষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ৩৫ মিনিট দেরিতে পৌঁছন। বেলা দু’টোয় বৈঠক শুরুর কথা ছিল। বিকেল সাড়ে তিনটেয় জলপানের বিরতি হয়। সে সময়ই মন্ত্রীরা উধাও হয়ে যান। তাঁরা বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে ফিরে আসেন। কিসান মজদুর সংঘর্ষ কমিটির নেতা সারওয়ান সিংহ পান্ধেরের বক্তব্য, ‘‘আমরা জানি না, ওঁরা কোথায় চলে গিয়েছিলেন। মনে হচ্ছিল, তাঁরা কারও সঙ্গে কথা বলছেন।’’ কৃষক নেতাদের ধারণা, বৈঠকের মধ্যেই উপরমহলের ‘নির্দেশ’ জানতে অমিত শাহর সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে তোমর, গয়ালদের। সে কারণেই তাঁরা বৈঠকের মাঝে ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছিলেন।
তোমর নিজে এদিনও বলেন, সরকার আশা করছে, আন্দোলনকারীরা কৃষি সংস্কারের পিছনে সরকারের উদ্দেশ্য বুঝতে পারবেন। যদিও কৃষকরা আন্দোলনে অবিচল। দিল্লির সীমানায় তাঁদের আন্দোলন আজ ৪২তম দিনে পড়ল। বৃহস্পতিবার কৃষকরা দিল্লির সীমানায় ট্র্যাক্টর মিছিল করবেন। তার আগে বুধবার শিরোমণি গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটি (এসজিপিসি) ঘোষণা করেছে, আগামী দিনে শিখদের কোনও অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হবে না।
পঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকদের আন্দোলন শুরুর পরে গত ১৯ ডিসেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী আচমকাই দিল্লির গুরুদ্বারা রাকাবগঞ্জে চলে গিয়েছিলেন। সেদিন ছিল শিখ গুরু তেগবাহাদুরের শহিদি দিবস। প্রধানমন্ত্রী গুরুদ্বারায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শিখদের সুসম্পর্কের বিবরণ দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একটি পুস্তিকাও প্রচার করেছিল। তাতে করতারপুর করিডরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসার সঙ্গে শিরোমণি গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটির প্রাক্তন সভাপতির সঙ্গে মোদীর ছবিও ছিল।
সেই কমিটিরই সভানেত্রী জাগির কউর বুধবার জানিয়েছেন, আগামী দিনে গুরু তেগবাহাদুরের ৪০০তম জন্মবার্ষিকী, নানকানা সাহিব হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষ বিরাট করে পালন করা হবে। কিন্তু তার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে কোনও বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হবে না। জাগির বলেন, ‘‘শিখদের ধর্মীয় উৎসবে সকলেই স্বাগত। কিন্তু আমরা প্রধানমন্ত্রীকে কোনও বিশেষ আমন্ত্রণ পাঠাব না। কারণ কৃষি আইন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। এতে কৃষকদের ক্ষতি হচ্ছে।’’
তবে তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার ও ফসলের ন্যায্য দামের দাবিতে এ ভাবে ধর্মীয় রং লাগায় কৃষক নেতাদের একাংশ অস্বস্তিতে। তাঁদের মতে, এতে বিজেপিরই সুবিধা হয়ে যাবে। বস্তুত পঞ্জাবের বিজেপি নেতা তরুণ চুঘ এ দিনই অভিযোগ তুলেছেন, কউর অকালি দলের হয়ে ‘সস্তা ও নোংরা’ রাজনীতি করেছেন। কোনও ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে ‘প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাব না’ বলাটা নেতিবাচক বিভাজনের রাজনীতি। পঞ্জাব-হরিয়ানা বাদে অন্য রাজ্যের কৃষক নেতাদেরও মত, এর মধ্যে গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটির জড়ানোটা ঠিক নয়।
৪২ দিন আন্দোলনের পরেও কোনও সমাধানসূত্র না মেলায় এ দিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, আদালতের উদ্দেশ্য ছিল, দু’পক্ষের আলোচনায় উৎসাহ দেওয়া। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, ‘‘পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। আমরা পরিস্থিতি বুঝতে পারছি, আলোচনাতেও উৎসাহ দিচ্ছি।’’ কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীরা আদালতকে জানান, আলোচনা চলছে। কিছু সমঝোতার সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্রবার ফের বৈঠক রয়েছে জেনে সুপ্রিম কোর্টে সোমবার এ বিষয়ে শুনানি হবে বলে ঠিক হয়েছে। কিন্তু প্রবীণ নেতা বলবীর সিংহ রাজেওয়াল জানিয়েছেন, তাঁরা আদালতের কাছে যাবেন না। কৃষি আইনের আইনি দিক খতিয়ে দেখতে অনেক সময় লেগে যাবে।
এর মধ্যে আরও দুই কৃষকের মৃত্যুর খবর এসেছে। পঞ্জাবের প্রবীণ কৃষক নজর সিংহ ঠান্ডা আর বৃষ্টিতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। বাড়িতেই মারা গিয়েছেন। ভাটিন্ডার বাসিন্দা মনপ্রীত সিংহের বয়স বেশি নয়। জামাকাপড় আনতে বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথেই হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy