ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে যাতে ছাদ-বারান্দা বা সিঁড়ির দামও দিতে না হয়, তা নিশ্চিত করুক সরকার। আবাসন নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ বিলে এমনটাই সুপারিশ করতে চলেছে রাজ্যসভার সিলেক্ট কমিটি। নরেন্দ্র মোদী সরকার সেই সুপারিশ মেনে নিলে ফ্ল্যাটের ভিতর যতটুকু থাকার জায়গা, ক্রেতাকে ততটারই দাম দিতে হবে।
সিলেক্ট কমিটির সুপারিশ হল, ফ্ল্যাটের ভিতর আসলে কতটুকু জায়গা বা ‘কার্পেট এরিয়া’ রয়েছে, বিক্রির সময় তা প্রোমোটারকে খোলসা করে জানাতে হবে। কার্পেট এরিয়ার ভিত্তিতেই প্রতি বর্গফুটের হিসেবে দাম ঠিক হবে।
কিন্তু কার্পেট এরিয়া মাপা হবে কী ভাবে?
এর মধ্যে বাইরের দেওয়ালের অংশ থাকবে না। মাপ শুরু হবে বাইরের দেওয়ালের ভিতর থেকে। একই ভাবে ফ্ল্যাটের ব্যালকনি বা একতলার ফ্ল্যাটের বারান্দা, লিফট বা সিঁড়ির অংশ, একান্ত নিজস্ব ব্যবহারের ছাদও থাকবে না এর মধ্যে। তবে ফ্ল্যাটের ভিতরের দেওয়ালের অংশ কার্পেট এরিয়ার হিসেবের মধ্যেই পড়বে।
এখন বিভিন্ন জায়গায় নানা রকম ভাবে ফ্ল্যাটের মাপ ঠিক হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘সুপার-বিল্ট এরিয়া’ বা ‘কভার এরিয়া’-র হিসেবে প্রোমোটাররা ফ্ল্যাট বিক্রি করেন। কিন্তু আসলে ফ্ল্যাটের ভিতর জায়গা থাকে অনেক কম। এ জন্যই আবাসন ক্ষেত্রকে আইনের আওতায় আনতে ইউপিএ সরকার আবাসন নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ বিল নিয়ে এসেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, কার্পেট এরিয়ার ভিত্তিতেই ফ্ল্যাট কেনাবেচা হবে। বাইরের দেওয়াল বাদ দিয়ে ভিতরের অংশ কার্পেট এরিয়া হিসেবে মাপা হবে। পরে নরেন্দ্র মোদী সরকার যে নতুন বিল আনে, তাতে কার্পেট এরিয়ার সংজ্ঞা এক থাকলেও বাড়তি ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হয়, ২০০৫-এর ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভাড়া দেওয়ার যোগ্য এলাকাকেই কার্পেট এরিয়া হিসেবে ধরা হবে।
এতেই প্রোমোটারদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেসের অজয় মাকেন, জয়রাম রমেশরা যুক্তি দেন, এর ফলে সাধারণ মানুষকে ফের বিভ্রান্ত করার সুযোগ পাবেন প্রোমোটাররা। কারণ আইন পাশ হয়ে যাওয়ার পর শুধু বিল্ডিং কোড পাল্টে কার্পেট এরিয়ার সংজ্ঞাও সুবিধে মতো বদলে ফেলা যাবে। কংগ্রেসের আপত্তিতেই বিলটি রাজ্যসভার সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। বিজেপির অনিল মাধব দাভের নেতৃত্বে কমিটি বিভিন্ন শহরে ঘুরে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্টের খসড়া তৈরি করেছে। শুক্রবার ওই রিপোর্ট সংসদে পেশ হতে পারে। কমিটি যে খসড়া রিপোর্ট তৈরি করেছে, তাতে কার্পেট এরিয়ার সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার পাশাপাশি বিল্ডিং কোডের সঙ্গে একে না মেলানোর পক্ষেও সওয়াল করা হয়েছে।
ইউপিএ-র আবাসন নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ বিলে বলা হয়েছিল, প্রোমোটাররা বাড়ির প্ল্যান বা কাঠামোগত নকশায় ইচ্ছেমতো রদবদল ঘটাতে পারবে না। তার জন্য ক্রেতাদের দুই-তৃতীয়াংশের অনুমতি নিতে হবে। তবে মোদী সরকারের বিলে সামান্য রদবদলের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। সেখানেও প্রোমোটারদের ছাড় দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সিলেক্ট কমিটি সুপারিশ করেছে, এই ‘সামান্য রদবদল’-এর সংজ্ঞা ঠিক করে দেওয়া হোক।
আবাসন ক্ষেত্রে সব থেকে বড় সমস্যা হল, ঠিক সময়ে কাজ শেষ না হওয়া। ক্রেতারা পুরো টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পরও অনেক সময়েই ফ্ল্যাটের চাবি হাতে পান না। অভিযোগ, প্রোমোটাররা একটি আবাসনের ক্রেতাদের থেকে টাকা নিয়ে অন্য প্রকল্পে খরচ করে ফেলে। ফলে আবাসন তৈরির কাজ শেষ হতে সময় লেগে যায়। ইউপিএ-র বিলে বলা হয়েছিল, কোনও প্রকল্পের ক্রেতাদের থেকে নেওয়া টাকার ৭০ শতাংশ একটি নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে রাখতে হবে। অন্য কোথাও তা খরচ করা যাবে না। মোদী সরকারের বিলে তা কমিয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়। কলকাতা-বেঙ্গালুরু-মুম্বইয়ের মতো শহরে সিলেক্ট কমিটির সামনে প্রোমোটাররা এসে যুক্তি দিয়েছিলেন, অনেক ক্ষেত্রে আবাসন প্রকল্পের জমি কিনতেই ৮০ শতাংশ টাকা খরচ হয়ে যায়। ক্রেতা সংগঠনগুলি আবার দাবি তুলেছিল, ১০০ শতাংশ অর্থই নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে রাখতে বলা হোক। কমিটি সুপারিশ করতে চলেছে, অন্তত ৫০ শতাংশ অর্থই অ্যাকাউন্টে রাখতে হবে। সেখান থেকে টাকা তোলার আগে আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার বা চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের শংসাপত্র নিতে হবে প্রোমোটারকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy