Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

৩৫ক মামলায় বিপাকে কেন্দ্র

কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে সওয়াল করায় কং‌গ্রেস নেতা পি চিদম্বরমকে কার্যত ‘দেশদ্রোহী’র তকমা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেই সময়েই জম্মু-কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’ সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৫ক অনুচ্ছেদের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে প্যাঁচে পড়ল মোদী সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:০৫
Share: Save:

কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে সওয়াল করায় কং‌গ্রেস নেতা পি চিদম্বরমকে কার্যত ‘দেশদ্রোহী’র তকমা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেই সময়েই জম্মু-কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’ সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৫ক অনুচ্ছেদের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে প্যাঁচে পড়ল মোদী সরকার। আজ অবশ্য ওই মামলার শুনানি আট সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

সংবিধানের ৩৫ক ধারা অনুযায়ী, কাশ্মীরের ‘স্থায়ী বাসিন্দা’-র সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে পারে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা। ওই স্থায়ী বাসিন্দারা জম্মু-কাশ্মীরে বিশেষ সুযোগ সুবিধে পান। এই বিষয়টি সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত জম্মু-কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’রই অঙ্গ। ১৯৫৪ সালে এক ‘প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার’-এর মাধ্যমে এই অনুচ্ছেদ সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কোনও ব্যক্তি ১৯৫৪ সালের ১৪ মে জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা হলে বা ১০ বছর ওই রাজ্যে বসবাস করে আইনসম্মত ভাবে সম্পত্তি কিনলে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন।

৩৫ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘স্থায়ী বাসিন্দাদের’ সুবিধা

• স্থায়ী বাসিন্দা না হলে জম্মু-কাশ্মীরে সম্পত্তি কেনা যায় না।

• জম্মু-কাশ্মীর সরকারের চাকরিতে যোগ দেওয়া যায় না।

• রাজ্যের কোনও পেশাদারি শিক্ষার কলেজে প়ড়া যায় না। মেলে না রাজ্য সরকারের আর্থিক সাহায্যও।

• জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার সদস্য হওয়া যায় না।

• রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা কোনও মহিলার স্বামী যদি স্থায়ী বাসিন্দা না হন তবে তাঁদের সন্তানদেরও স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা দেওয়া হয় না। সে ক্ষেত্রে সন্তানেরা ওই মহিলার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন।

দীর্ঘদিন ধরেই এই ধারার বিরুদ্ধে সরব আরএসএস-সহ বিভিন্ন শিবির। ২০১৪ সালে ওই ধারার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। পরে এই বিষয়ে আরও কয়েকটি আর্জি পেশ হয়। সংবিধানের ৩৫ক অনুচ্ছেদ খারিজের সম্ভাবনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে শুরু করে কাশ্মীরি জনমত। এ ক্ষেত্রে প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে পিডিপি-র মেহবুবা মুফতি ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লার মুখে। মেহবুবা বলেন, ‘‘ওই অনুচ্ছেদ খারিজ হলে কাশ্মীরে ভারতের জাতীয় পতাকা বহনের জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।’’ শীর্ষ আদালতে রাজ্য সরকার ৩৫ক অনুচ্ছেদ খারিজের বিরোধিতা করেছে। কিন্তু জোট- শরিক পিডিপি-র অনুরোধ সত্ত্বেও এ নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেনি মোদী সরকার। অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল সুপ্রিম কোর্টে জানান, এই বিষয়টির সঙ্গে সংবিধান জড়িত। তাই বৃহত্তর বিতর্কের প্রয়োজন। তার পরেই বিষয়টি আসে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, এক দিকে ওই অনুচ্ছেদ খারিজের জন্য চাপ দিচ্ছে আরএসএস। অন্য দিকে মেহবুবার সঙ্গে জোট বজায় রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে, প্যাঁচে পড়েছে কেন্দ্র।

শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় আপাতত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পিডিপি জানিয়েছে, দীর্ঘ চেষ্টার ফল পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ন্যাশনাল কনফারেন্সের দাবি, লোকসভা ভোটের আগে ফের জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মেরুকরণের রাজনীতি করবে বিজেপি। ৩৫ক অনুচ্ছেদ বাতিল হলে উপত্যকা জুড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত। আজ টুইটারে তাদের খোঁচা দিয়ে ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা বলেন, ‘‘হুরিয়ত নেতারা ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ রক্ষার চেষ্টা করছেন?’’ তার পর থেকে হুরিয়ত নেতৃত্ব মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy