প্রতীকী ছবি।
তেলের দর আগুন। দামে ‘সেঞ্চুরি’ পেরিয়েও দেশে দাপটে ‘ব্যাটিং করছে’ পেট্রল ও ডিজেল। এই পরিস্থিতিতে উৎপাদন শুল্ক ছেঁটে সাধারণ মানুষকে কিছুটা সুরাহা দেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। কিন্তু রবিবার সেই দায় কার্যত ঝেড়ে ফেলে উল্টে তেলের দাম বৃদ্ধিতে রাশ টানার জন্য কর কমানোর কাজ কংগ্রেস ও তার শরিক দলশাসিত রাজ্যগুলির উপরে চাপিয়ে দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার!
এরই মধ্যে সোমবার কলকাতায় এই প্রথম প্রতি লিটার ডিজেলের দর ৯০ টাকা ছাড়াল। আইওসি-র পাম্পে তা আরও ২৯ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৯০.১২ টাকা। পেট্রলও ২৮ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছেছে ৯৬.৩৪ টাকায়।
রবিবার এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে পরিবহণ-জ্বালানির চড়া দর নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, ‘‘মানছি, তেলের চড়া দামে ভোগান্তি হচ্ছে সাধারণ মানুষের।...কিন্তু শুধু বিনামূল্যে রেশন দিতেই এক লক্ষ কোটি টাকা খরচ করছে কেন্দ্র। এ ছাড়াও রয়েছে (কোভিড) প্রতিষেধক এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর খরচ।...জ্বালানির করের টাকা খরচ হয় বিভিন্ন সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পে।’’ প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি আমজনতার কষ্ট মেনেও তেলের দাম কমানোর দায় ঝেড়ে ফেললেন মন্ত্রী?
এ বিষয়ে নাগাড়ে বিঁধতে থাকা কংগ্রেস নেতাকে বরং প্রধানের পাল্টা চ্যালেঞ্জ, ‘‘রাহুল গাঁধী যদি করের একটি অংশকেই শুধু সামনে আনতে চান, তা হলে নিজেদের রাজ্যে করের (যুক্তমূল্য কর) হার আগে দেখুক কংগ্রেস। দেশে তা সর্বোচ্চ।’’ মন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘‘যদি তেলের দামে গরিবের কষ্টে রাহুল গাঁধী সত্যিই ব্যথিত হন, তা হলে তাঁর উচিত কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলিতে কর কমাতে মুখ্যমন্ত্রীদের অনুরোধ করা। বলা উচিত মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকেও।...মহারাষ্ট্র, রাজস্থান ও পঞ্জাবে জ্বালানির দর এত চড়া কেন?’’ উল্লেখ্য, এর মধ্যে প্রথম রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী শিবসেনা ও এনসিপি। আর বাকি দুই রাজ্যে মসনদে কংগ্রেসই।
পেট্রল এবং ডিজেল— দুই জ্বালানিই প্রথম সেঞ্চুরি (লিটারে ১০০ টাকা) ছুঁয়েছে রাজস্থানের শ্রীগঙ্গানগরে। ওই রাজ্যের চড়া যুক্তমূল্য কর অবশ্যই তার অন্যতম কারণ। কিন্তু রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং পঞ্জাব ছাড়াও পেট্রল ১০০ টাকা পেরিয়েছে আরও চারটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে (লাদাখ)। যার মধ্যে রয়েছে বিজেপিশাসিত কর্নাটক এবং মধ্যপ্রদেশ। কিন্তু সেখানকার চড়া করের হার নিয়ে এ দিন একটি শব্দও খরচ করেননি প্রধান!
শুধু তা-ই নয়। মন্ত্রী শুধু যুক্তমূল্য করের দিকে নিশানা করলেও, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার সময়ে প্রতি লিটার পেট্রল ও ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক ছিল যথাক্রমে ৯.৪৮ ও ৩.৫৬ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩২.৯০
এবং ৩১.৮০ টাকা। অথচ এই কেন্দ্রীয় কর কমানো নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি প্রধান। তৃণমূল, কংগ্রেস-সহ সমস্ত বিরোধী দল বহু বার বলেছে, গত বছর বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর তলানিতে থাকার সময়ে তার সুবিধা আমজনতার ঘরে পৌঁছতে দেয়নি কেন্দ্র। বরং পরিকাঠামো-সহ বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে অর্থ জোগাড়ের যুক্তিতে টানা বাড়িয়ে গিয়েছে উৎপাদন শুল্ক। অথচ এখন আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দর মুখ তোলার সময়ে আর সেই শুল্ক ছাঁটাইয়ের নাম করছে না তারা। উল্টে কর কমানোর দায় চাপিয়ে দিতে চাইছে রাজ্যগুলির উপরে। কোভিডের কামড়ে এমনিতেই যাদের রাজকোষের দশা বেহাল।
গত দেড় মাসে দেশের রাজধানীতে পেট্রল ও ডিজ়েলের দর বেড়েছে যথাক্রমে ৫.৭২ ও ৬.২৫ টাকা। একই রকম ছবি সারা দেশে। কিন্তু তার পরেও কর কমানোর বিষয়ে কেন্দ্র নারাজ বলে অভিযোগ বিরোধীদের। মনমোহন সিংহের জমানায় যখন বিশ্ব বাজারে তেলের দর ব্যারেলে ১১০-১২০ ডলারে ঘোরাফেরা করছে, তখন ভারতে পেট্রল ৮০-র দিকে পা বাড়াতেই কেন্দ্রকে কড়া সমালোচনায় বিঁধতেন তখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অথচ এখন তেলের সেঞ্চুরির জন্য বিশ্ব বাজারের সেই চড়া (এখন ব্যারেলে ৭২ ডলার) দরকেই ‘শিখণ্ডী খাড়া করছে’ তাঁর সরকার! বিরোধীদের প্রশ্ন, সুপ্রিম কোর্টের চাপে শেষমেশ হালে বিনামূল্য টিকা দেওয়ার কথা বলেছে কেন্দ্র। করোনা-কালে বেআব্রু হয়েছে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর হাল। তার পরেও এগুলি ব্যবহার করে চড়া করের যুক্তি সাজাচ্ছে কেন্দ্র?
সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে ‘ভাইরাল’ হয়েছে একটি ব্যঙ্গচিত্র। সেখানে দেখা যাচ্ছে, পাম্পে তেল ভরতে আসা এক জনের মাথায় পিস্তলের ধাঁচে তেল ভরার পাইপ ধরেছেন সাদা দাড়ির এক ব্যক্তি। বলছেন, ‘নিখরচার টিকার টাকা বার করো দেখি!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy