মূল্যবৃদ্ধির হার কমেছে! টুইটেএ ভাবে দেখাতে গিয়ে হাসির পাত্র বিজেপি।
বিরোধীরা যখন পেট্রোপণ্যের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে জোট বেঁধে ‘ভারত বন্ধ’ করছেন, মোদী সরকারের আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানিয়ে দিলেন, ‘‘এই সমস্যার সমাধান আমাদের হাতে নেই।’’
এর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিরুদ্ধে রাফাল চুক্তি নিয়ে অভিযোগের জবাব দিতে আসরে নামানো হয়েছিল অরুণ জেটলিকে, যিনি সরকারের অর্থমন্ত্রী। আবার জেটলির মন্ত্রকের পিএনবি-কেলেঙ্কারি নিয়ে সরকারের পক্ষে সরব হন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেই ধারা বজায় রেখেই এ বার পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কংগ্রেস ও বিরোধী দলগুলির প্রতিবাদের দিনে সরকারের হয়ে ব্যাট হাতে তুলে নিলেন রবিশঙ্কর প্রসাদ, যিনি আদতে আইনমন্ত্রী। বলা ভাল, কার্যত হাত তুলে নিলেন।
মন্ত্রীর সুরে অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাও বলছেন, পেট্রোপণ্যের দাম কমাতে কেন্দ্রের হাতিয়ার একমাত্র উৎপাদন শুল্ক কমানো। কিন্তু লিটারে এক টাকা করে শুল্ক কমালেই বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হবে। চলতি অর্থ বছরের প্রায় ছ’মাস পেরিয়ে গিয়েছে। যার অর্থ, এখন এক টাকা শুল্ক কমালেও প্রায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে হবে। ফলে এখনই সেই রাস্তায় হাঁটা মুশকিল।
কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১২ দফা উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়ে ১১ লক্ষ কোটি টাকা ঘরে তুলেছে
সরকারি সূত্রের অবশ্য খবর— আরও কয়েকটা দিন পরে, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশের ভোট এগিয়ে এলে মোদী সরকার উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে ‘সুরাহা দেওয়ার’ কথা বলতে পারে। একই সঙ্গে ওই ভোটমুখী রাজ্যগুলির সরকারও ভ্যাট-এর হার কমাবে। এর মধ্যেই রাজস্থান ৪ শতাংশ ভ্যাট কমিয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য একসঙ্গে কর কমালে নজরে পড়ার মতো দাম কমবে।
প্রসাদের কথাতেও সেই ইঙ্গিত রয়েছে। সমস্যার সমাধান সরকারের হাতে নেই বললেও, জানিয়েছেন, ‘‘তবে বলছি না যে আমরা কিছুই করতে পারি না।’’ কিন্তু কংগ্রেসের যুক্তি, শেষ বেলায় সুরাহা দিয়ে মানুষকে বোকা বানানো যাবে না। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘আইনমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন, সরকারের হাতে কিছু নেই। এ বার মানুষের হাতেই সরকার পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত।’’
কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১২ দফা উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়ে ১১ লক্ষ কোটি টাকা ঘরে তুলেছে। ২০১৪-র মে মাসের তুলনায় পেট্রলে শুল্ক বেড়েছে ২১১ শতাংশ, ডিজেলে ৪৪৩ শতাংশ! এখন জ্বালানির দাম আকাশছোঁয়া হলেও, মোদী সরকার সেই উৎপাদন শুল্ক কমাচ্ছে না। বিজেপি ও শরিক দল ২১টি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে। সেই রাজ্যগুলিকেও করের বোঝা কমানোর নির্দেশ দিচ্ছে না। অথচ মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যেই ভ্যাট-এর বোঝা সব থেকে বেশি।
বিজেপির পাল্টা যুক্তি, কংগ্রেস শাসিত পঞ্জাব, সিপিএম শাসিত কেরলেও তো ভ্যাট-এর হার চড়া। তারা কেন কমাচ্ছে না। তবে অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা মানছেন— পঞ্জাব, বিহার ও কেরলের রাজকোষের যা অবস্থা, তাতে তাদের পক্ষে ভ্যাট কমানো মুশকিল। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার বিক্রয় কর লিটারে ২ টাকা কমিয়েছে। বাকি রাজ্যগুলির উপরেও চাপ দেওয়াটা মুশকিল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির যুক্তির জবাবে বলেন, রাজ্য কমালে তেলের দাম এক টাকা দু’টাকা কমতে পারে। কিন্তু শুল্কের প্রায় সবটা তো কেন্দ্রই নিয়ে যায়। মানুষকে সুরাহা দেওয়ার জন্য তাদের কোনও দায় নেই?
অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘এমনিতেই অশোধিত তেল ও ডলার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় বিদেশি মুদ্রার লেনদেনের ঘাটতি বাড়ছে। এখন শুল্ক কমাতে গেলে রাজকোষ ঘাটতি বাড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। তার ধাক্কায় ডলারের তুলনায় টাকার দর আরও পড়ে যেতে পারে।’’ আগামী কয়েক দিনে টাকার দর কিছুটা বাড়বে বলেই আশা করছেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। উল্টো দিকে তেল মন্ত্রকের আশঙ্কা, ইরানের উপর আমেরিকার বিধিনিষেধ কার্যকর হলে অশোধিত তেলের দাম আরও বাড়তে পারে।
তেলের দামের অর্ধেকই কেন্দ্রীয় শুল্ক আর রাজ্যের ভ্যাট। পেট্রলে শুল্কের পরিমাণ ১৯.৪৮ টাকা, ডিজেলে ১৫.৩৩ টাকা। তার সঙ্গে যোগ হয় রাজ্যের ভ্যাট ও বিক্রয় কর। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি— তেলের দামে কর বসানোর সুবিধা হল, তাতে ফাঁকি দেওয়ার উপায় নেই। এ দেশে আয়কর ফাঁকি কমলে, তেলের দামে কর কমানোও সহজ হবে। তা শুনে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘সরকার তেলের উপরে কর বসিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলছে। তার পর পেট্রল
পাম্পে মোদীর ছবি-সহ বিজ্ঞাপন দিয়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করছে। এই হল বিজেপি সরকারের নীতি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy