সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে তদন্ত, আইনি প্রক্রিয়া মুলতুবি থাকবে। কিন্তু অন্যান্য ধারায় তদন্ত চলতে পারে। ফলে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে অভিযুক্তরা জামিনের আবেদন করলেও, ইউএপিএ ধারা থাকায় জামিন আটকে যেতে পারে।
ফাইল চিত্র।
কিছু দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলনে প্রধান বিচারপতি রমণা ‘লক্ষণ রেখা’-র কথা বলেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, সরকার অনেক ক্ষেত্রে নিজে অপ্রিয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত না-নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ঘাড়ে দায় ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু সরকারি বিষয়ে নাক গলানোর আগ্রহ আদালতের নেই। মুখে সে কথা বললেও রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি সেই কাজটিই করেছেন বলে বিজেপির অভিযোগ।
মোদী সরকারের বাধা সত্ত্বেও বুধবার সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে স্থগিতাদেশ জারি করেছে। মোদী সরকার চাইছিল, শীর্ষ আদালত যেন এ বিষয়ে নাক না-গলায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে সরকারই রাষ্ট্রদ্রোহ আইন পুনর্বিবেচনা করবে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি সরকারের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হোক। তাতে কান না দিয়ে প্রধান বিচারপতি এন বি রমণার বেঞ্চ রাষ্ট্রদ্রোহ আইন মুলতুবি করে দেওয়ায় আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু সুপ্রিম কোর্টকে কার্যত তোপ দেগেছিলেন। বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারকে নিজেদের লক্ষণ রেখা স্মরণ করা উচিত। অন্যের এক্তিয়ারে নাক গলানো উচিত নয়।
মুখে আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু সুপ্রিম কোর্টকে ‘লক্ষণ রেখা’-র কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এখনও রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে স্থগিতাদেশের পাল্টা কোনও উপায় নেই। কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের কর্তারা মানছেন, আপাতত সরকারের হাতে অন্য কোনও অস্ত্র নেই। এই রায় পর্যালোচনা করার আর্জি জানালেও বিশেষ লাভ হবে না। উল্টে প্রধানমন্ত্রী নিজেই রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের পুনর্বিবেচনা চাইছেন বলে সুপ্রিম কোর্টে ফের রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের পক্ষে সওয়াল করতে গেলে ভুল বার্তা যাবে।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতারা আজ থেকে বলতে শুরু করেছেন, মোদী সরকার নিজেই ‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’ নিয়ে কংগ্রেসের ‘ঐতিহাসিক ভুল’ শোধরাতে চাইছিল। বিজেপি মুখপাত্র, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গৌরব ভাটিয়ার বক্তব্য, মোদী সরকার হলফনামা দিয়ে আদালতে জানিয়েছিল, তারা ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪-এ ধারা পুনর্বিবেচনা করতে তৈরি। স্বাধীন ভারতে গত ৭৫ বছরে আর কোনও সরকার এই সদিচ্ছা দেখায়নি। এর মধ্যে কংগ্রেস নিজেই ৫৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। মোদী সরকারই বাক্স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারকে রক্ষা করতে চাইছে।
রিজিজু বলেছিলেন, সরকার আদালতের অধিকার, এক্তিয়ারকে সম্মান করে। আদালতেরও সরকারের অধিকার, এক্তিয়ারকে সম্মান জানানো উচিত। আজ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম রিজিজুকে কটাক্ষ করে বলেছেন, রাজার সেনাপতিরা আইন বাঁচাতে পারেননি। তাঁর বক্তব্য, সংসদে এমন কোনও আইন তৈরি করা যায় না বা এমন কোনও আইন থাকা সম্ভব নয়, যা মৌলিক অধিকারকে লঙ্ঘন করে। রাষ্ট্রদ্রোহ আইন সংবিধানের মৌলিক অধিকারকে লঙ্ঘন করে বলে আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। রিজিজুর পাল্টা প্রশ্ন, তা হলে নেহরুজি কেন আইনকে শক্তিশালী করতে সংশোধনী এনেছিলেন? ইন্দিরা গান্ধী কেন এই ধারায় অপরাধকে দণ্ডনীয় অপরাধ করেছিলেন? কেন অণ্ণা হজারের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের সময়ে নাগরিকদের হেনস্থা করা হয়েছিল?
কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, মোদী সরকার তার সমালোচকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের সঙ্গে ইউএপিএ-র মতো সন্ত্রাসবাদ দমন আইনেও মামলা করেছে। সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রদ্রোহ আইন মুলতুবি করলেও আইনজীবীরা মনে করছেন, অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের সঙ্গে ইউএপিএ ধারায় মামলা করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে তদন্ত, আইনি প্রক্রিয়া মুলতুবি থাকবে। কিন্তু অন্যান্য ধারায় তদন্ত চলতে পারে। ফলে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে অভিযুক্তরা জামিনের আবেদন করলেও, ইউএপিএ ধারা থাকায় জামিন আটকে যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy