Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
অনগ্রসর শ্রেণির জন্য কমিশন

অধিকার কাড়া হচ্ছে রাজ্যের, সরব বিরোধীরা

বিরোধীদের অভিযোগ, এই কমিশন গড়ে আসলে কেন্দ্র সামাজিক এবং শিক্ষাগত ভাবে পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর শ্রেণিকে চাকরি এবং সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে চাইছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৭ ০৪:১২
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর জমানায় রাজ্যের অধিকারে হাত দেওয়ার অভিযোগ বারবারই তুলেছেন বিরোধীরা। সেই অধিকারে এ বার কুঠারাঘাতের অভিযোগ। যা নিয়ে সংসদীয় সিলেক্ট কমিটির বৈঠক উত্তাল হলো গত কাল। বিরোধী নেতারা সেখানে একজোটে অভিযোগ আনলেন, সংরক্ষণ এবং অনগ্রসর শ্রেণিকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রশ্নে সংবিধানকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে কেন্দ্র। রাজ্যের অধিকার কেড়ে নিয়ে কুঠারঘাত করছে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয়। এই মিলিত প্রতিবাদে রাজ্যসভার সিলেক্ট কমিটির ওই বৈঠকে মুখ থুবড়ে পড়ল অনগ্রসর শ্রেণির জন্য জাতীয় কমিশন তৈরির ১২৩-তম সংবিধান সংশোধনী বিল।

বিরোধীদের অভিযোগ, এই কমিশন গড়ে আসলে কেন্দ্র সামাজিক এবং শিক্ষাগত ভাবে পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর শ্রেণিকে চাকরি এবং সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে চাইছে। কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে ১৯৯৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং সংবিধানের নির্দেশকে কার্যত ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। কারণ, প্রস্তাবিত আইনে রাজ্যের হাত থেকে কমিশন গড়ার অধিকার কেড়ে নিয়ে শুধুমাত্র কেন্দ্রের হাতেই সেই ক্ষমতা তুলে দেওয়ার কথা থাকছে।

রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, হরিয়ানা-রাজস্থানে জাঠেদের সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলনের পরেই এই জাতীয় কমিশন তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। উত্তরপ্রদেশে জাঠেদের একটা বড় অংশ বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। তাদের প্রতিদান দেওয়ার বিষয় রয়েছে। পাশাপাশি, গুজরাতে ভোটের আগে অনগ্রসর শ্রেণিকে সংরক্ষণের মাধ্যমে চাকরি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধে পাইয়ে দেওয়াটাও বিজেপির অগ্রাধিকারে রয়েছে।

সংবিধানের ১৫(৪) ধারায় বলা রয়েছে, অনগ্রসর শ্রেণিকে সংরক্ষণ দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে পারে কেন্দ্র এবং রাজ্য। এই বিষয়ে ইন্দ্র সহায়ের করা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ১৯৯৩ সালের রায়েও স্পষ্ট বলা হয়েছে, কেন্দ্র এবং প্রতিটি রাজ্য একটি কমিশন তৈরি করতে পারে, যেখানে অনগ্রসর শ্রেণির অভিযোগ শোনা হবে এবং তার সমাধান করা হবে। বিরোধীদের বক্তব্য, সংবিধানের এই ধারা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার নির্যাস-স্বরূপ। কিন্তু যে বিলটি পাশ করানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক তথা মোদী সরকার, সেখানে বলা হয়েছে— শুধু কেন্দ্রই এই কমিশন গড়তে পারবে। সেই কমিশন প্রয়োজন মতো বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপালদের সঙ্গে অনগ্রসর শ্রেণির সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবে ঠিকই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমস্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় কমিশনই। এমনকী, কোন সম্প্রদায়কে অনগ্রসর শ্রেণির তালিকায় আনা হবে (সামাজিক ও শিক্ষাগত ভাবে পিছিয়ে পড়ার নিরিখে) সেটা স্থির করার ক্ষমতাও কেন্দ্রীয় কমিশনের হাতে থাকবে।

রাজ্যসভার সিলেক্ট কমিটিতে এই নিয়ে প্রতিবাদে মুখর হন কংগ্রেসের বি কে হরিপ্রসাদ, ডিএমকে-র কানিমোঝি, সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব, তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায়, জেডি(ইউ)-এর শরদ যাদবের মতো নেতারা। তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করে রাজ্যসভার সচিবালয়কে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে।

মোদী সরকারের জমানায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন অ-বিজেপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও নেতারা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আঘাত হানা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া, রাজ্য সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলিতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি পাঠিয়ে নজরদারির মতো বিষয় বারবার উঠে এসেছে। আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠকেও এই অভিযো গে সরব হয়েছেন বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীরা। অনগ্রসর শ্রেণির সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইন আনার বিষয়টি কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের তালিকায় নতুন সংযোজন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy